Published in Amader Shomoy on Thursday, 6 August 2015.
চাল আমদানি বেড়েছে ৩০১ শতাংশ
হারুন-অর-রশিদ
সরকারের হিসাবে দেশে চালে উদ্বৃত্ত রয়েছে বলে বিদেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। কিন্তু গত অর্থবছরের চাল আমদানি বৃদ্ধির হার অন্য সব পণ্যের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। আগের অর্থবছরে যেখানে ৩ লাখ ৭৪ হাজার টন চাল আমদানি হয়, সেখানে গত অর্থবছরে ১৫ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। এক বছরে চাল আমদানি প্রায় ৩০১ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রকৃত মোট উৎপাদন ও চাহিদার বিষয়টি সঠিকভাবে পরিমাপ করে চাল রপ্তানির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে ৩ লাখ ৭৪ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়। অথচ সদ্যবিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছে ১৫ লাখ টনেরও বেশি চাল। হিসাব অনুযায়ী এক বছরের ব্যবধানে চাল আমদানি ৩০১ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া ২০১২-১৩ অর্থবছরেও চাল আমদানি অনেক কম ছিল। ওই অর্থবছরে চাল আমদানি হয় মাত্র ২৮ হাজার ৯৩০ টন।
সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোয় সরকারের পাশাপাশি চাল আমদানি করে বেসরকারি খাত। চলতি অর্থবছর সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি, সবই আমদানি হয়েছে বেসরকারিভাবে। জানা গেছে, আমদানি চালের সিংহভাগই আসছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। প্রতি তিন বছর পর চালের গুদাম খালি করতে কম দামে চাল বিক্রি করে থাকে দেশটি। এ সুযোগে দেশটি থেকে আমদানি বাড়িয়েছেন এ দেশের ব্যবসায়ীরা। বৈধ ও অবৈধ উভয় পথে আসছে ভারতীয় চাল।
ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র (এলসি) খুলে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি মাসে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার খরচ হচ্ছে সেই তথ্য প্রকাশ করা হয়। এতে ২৬টি পণ্য আমদানির তথ্য থাকে।
সদ্যবিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে ৩ হাজার ৮৪৫ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য চূড়ান্তভাবে আমদানি হয়। ৪ হাজার ৩০৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি জন্য এলসি খোলা হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে চূড়ান্তভাবে ৩ হাজার ৭১৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়। হিসাব অনুযায়ী এক বছরে ব্যবধানে সার্বিকভাবে আমদানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসি সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকাশিত তথ্যের ২৬টি পণ্যের মধ্যে চাল আমদানি বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। গত অর্থবছরে ৫৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের চাল আমদানির জন্য ব্যাংকে এলসি খোলা হলেও চূড়ান্তভাবে আমদানি হয়েছে ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের চাল। যেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলারে চাল আমদানি করার জন্য এলসি খুলে ৩৩ কোটি ৭২ লাখ ডলারের চাল আমদানি করা হয়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এলসি খোলার হার বেড়েছে ৫৫ শতাংশ এবং চূড়ান্ত আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ৬১ শতাংশ।
বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির এক পর্যালোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানায়, আমাদের দেশের পরিসংখানের তথ্যগত অনেক ভুল রয়েছে। দেশে চালের উৎপাদন কী পরিমাণ ও চাহিদা কী পরিমাণ তার সঠিক তথ্য-উপাত্ত নেই। চাল রপ্তানি করার আগে দেশের মোট উৎপাদন ও চাহিদার বিষয়টি হিসাব-নিকাশ করা জরুরি।
সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত মে মাস থেকে চাল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে চালের আমদানি কমে আসার কথা। এরপরও যদি চালের আমদানি বাড়ে তবে ভারত থেকে যে চাল আমদানি করা হচ্ছে তার মূল্য কত সেটা জানতে হবে। কারণ বাজার মূল্যের চেয়ে আমদানি মূল্য কম হলে শুল্ক প্রদানের পরেও বাড়তি লাভের সুযোগ থাকে। ফলে আমদানির প্রতি আগ্রহ তো বাড়বেই। আমাদের পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তেরও ঘাটতি রয়েছে। আমাদের দেশে চালের উৎপাদন কী পরিমাণ, চালের চাহিদাই বা কতখানি সে বিষয়ে সঠিক তথ্য নেই।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর আমাদের সময়কে বলেন, চাল আমদানি বৃদ্ধি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করে। সরকার বা ব্যক্তি যেই আমদানি করুক তা দেশেই আনা হচ্ছে। একদিকে আমদানি হচ্ছে একই পণ্য অন্যদিকে রপ্তানি করা হচ্ছে। এটি ভারসাম্যপূর্ণ নয়। আমাদের কৃষিনীতি সংশোধন করতে হবে। কৃষকরা যেন ন্যায্য মূল্য পায় আবার ভোক্তারা যেন যৌক্তিক মূল্যে ক্রয় করতে পারে এমন ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব দেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে সেসব দেশের কৃষকরা সারসহ অন্য জিনিসে ভতুর্কি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে চালের দাম অনেক কম থাকায় কৃষকরা বিক্রি করে উৎপাদন খরচই পোষাতে সক্ষম হচ্ছেন না। যদি চাল উৎপাদনে সরাসরি ভর্তুকির ব্যবস্থা করে তাহলে কৃষকরা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ধান বিক্রিতে সমর্থ হবেন।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তৎকালীন সরকার। তবে গত বছর খাদ্য ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ওপর ভিত্তি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুগন্ধি চাল (অ্যারোমা রাইস) রপ্তানির জন্য একটি সরকারি আদেশ (এসআরও) গেজেট আকারে প্রকাশ করে। এ আদেশের মাধ্যমে কালিজিরা, চিনিগুঁড়া, কাটারিভোগ, বাসমতী, তুলসীমালা এবং বিআর-৩৮সহ বেশ কয়েকটি জাতের চাল রপ্তানির অনুমতি দেয় সরকার। বর্তমানে শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে চাল রপ্তানি হচ্ছে।