Published in Jugantor on Friday, 3 July 2015.
জীবনযাত্রার মান বাড়েনি বেশিরভাগ মানুষের
যুগান্তর রিপোর্ট
বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বেশিরভাগ সূচকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে এত উন্নতি থাকলে বাস্তবে তার প্রতিফলন হচ্ছে খুবই কম।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হলেও বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান খুব একটা বাড়েনি। বরং অনেক ক্ষেত্রে এসব শ্রেণীর মানুষের জীবনযাত্রার মান আরও কমেছে। সমাজের উচ্চ ও মধ্যবিত্তের মধ্যকার আয় বৈষম্য আরও বেড়েছে। এতে গরিব আরও গরিব হয়েছে। ধনী আরও ধনী হয়েছে। এতে সামাজিক বৈষম্য আরও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে নিু আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা। তারা আরও বলেছেন, মানুষের আয় বাড়াতে হবে গড় ভিত্তিতে। একটি শ্রেণীর আয় বাড়িয়ে অন্য শ্রেণীর আয় কমিয়ে কোনো উন্নয়ন হলে তা টেকসই হয় না। এতে কোনো পণ্যের দাম বিশেষ করে চাল, ডাল, আটার দাম বেড়ে গেছে সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে আসে। তারা বলেছেন, সুষম উন্নয়নের জন্য কৃষির পাশাপাশি শিল্পায়ন করতে হবে। শিল্পের বিকাশের জন্য গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চয়তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, ঋণের সুদের হার কমানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। এগুলো না হলে শিল্পায়ন হবে না। শিল্পায়ন না হলে কর্মসংস্থান বাড়বে না। ফলে টেকসই উন্নয়ন হবে না।
বুধবার মধ্য রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, সেটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক নয়, এটি শুধু আয়বর্ধক একটি সূচক। তাও সার্বিক আয় নয়, গড় আয়। ফলে এই আয় সমাজের সব স্তরের মানুষের মধ্যে পৌঁছেনি। এতে সামাজিক ভারসাম্যও আসেনি। বরং আরও বেড়েছে।
দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশের পৌঁছতে হলে বাংলাদেশকে আরও অনেক লম্বা পথ হাঁটতে হবে। জাতীয় আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য দেশে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, ব্যবসায়ী পরিবেশ ও অন্যান্য অবস্থার উন্নতি করতে হবে।
তারা আরও বলেছেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া একটি দেশের জন্য এটা একটা বিরাট অর্জন। জাতি হিসেবে গর্ব করার বিষয় বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। এ অর্জন ১ বা ২ বছরের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ফল নয়, ধারাবাহিক উন্নয়ন কার্যক্রমের ফল।
তবে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে চলে গেলেও স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকাতেই থাকবে। ফলে এলডিসির সুবিধাগুলোও বহাল থাকবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশকে এলডিসির তালিকা থেকে বেরোতে হলে তিনটি সূচকে আরও উন্নয়ন করতে হবে। এগুলো হল- অর্থনীতির নাজুকতার সূচক, মানব উন্নয়ন সূচক ও মাথাপিছু আয়ের সূচক। এর মধ্যে প্রথম সূচকটি বাংলাদেশ অতিক্রম করলেও অন্য দুই সূচক অতিক্রম করতে পারিনি। ফলে এখনও এলডিসির তালিকাতেই থাকতে হচ্ছে।
জানা গেছে, আয় বাড়লেই তাকে এখন আর উন্নয়ন বলা হয় না। ফলে শুধু আয় বাড়িয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পর মধ্যম আয়ের ফাঁদ-এ পড়ে আছে অসংখ্য দেশ। এর মধ্যে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো আটকে আছে বহুদিন ধরে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এমনকি চীন ও রাশিয়াও আটকে আছে মধ্যম আয়ের ফাঁদে।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত যুগান্তরবে বলেন, নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে আরও উন্নতি করতে হলে বাংলাদেশকে মাথাপিছু আয় বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দেশের ভৌত অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তথা শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। একই সঙ্গে মাথাপিছু আয় বাড়াতে শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়াতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে যার কোনো বিকল্প নেই। এটি করতে পারলে একই শ্রমিক দেশে-বিদেশে সমান শ্রম দিয়ে উৎপাদনশীলতা ও আয় বাড়াতে পারবে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকা জরুরি। অনিশ্চয়তা কেটে গেলে বিনিয়োগ বাড়বে। ব্যাংকিং খাতে সুদের উচ্চ হার কমে আসবে।
একই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, জাতি হিসেবে এ অর্জন অবশ্যই গর্ভ করার মতো। অনেক সমস্যার মধ্যেও এই এগিয়ে যাওয়ার অবশ্যই আশাবাদের জন্ম দেয়। তবে এটি একদিনে অর্জিত হয়নি। ধারাবাহিক উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলেই এটি হয়েছে। বিশেষ করে ৯০ দশকের পর থেকে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতি করছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে ধারাবাহিক (কিউমিলিটিভ) উন্নতিও হবে। এ কৃতিত্ব সবার।
তিনি বলেন, এই পরিবর্তন বাংলাদেশের বহুমাতৃক সূচক উন্নয়নের নির্দেশক নয়, এটি শুধু আয়বর্ধক সূচক মাত্র। বাংলাদেশের সঙ্গে, কেনিয়া, মিয়ানমার ও কাজাখিস্তানও এ সূচকে উঠে এসেছে। তাদের অবস্থা দেখলে এ সূচকটি যে সামগ্রিক উন্নয়ন নয় তা পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে এখনও অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। আমাদের অর্থনীতির যে সুযোগগুলো রয়েছে তার সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতর জন্য এটি একটি গর্ভ করার মতো বিষয়, কিন্তু আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। বিশ্বব্যাংকের হিসাবের শ্রেণী বিন্যাস অনুসারে বাংলাদেশ শুধু নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে প্রবেশ করল। এই ধারা অব্যাহত রেখে আরও সামনে এগিয়ে যেতে হলে অনেকগুলো সমস্যা দূর করতে হবে। এর মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সংস্কার, বিনিয়োগসংক্রান্ত দুর্বলতা দূর করা। এছাড়া উৎপাদনশীল খাতে গ্যাস সংযোগ, জমি সংস্থানসংক্রান্ত বাধাগুলো এখনও রয়েছে। এ সমস্যাগুলো দূর না হলে বর্তমান সূচক থেকে বের হয়ে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে মাথা পিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৫ ডলার হলেই তাকে নিু মধ্য আয়ের দেশ বলা হয়। তাদের হিসাব অনুসারে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছতে হলে এ আয় কমপক্ষে ৪ হাজার ৫৭৬ ডলারে নিয়ে যেতে হবে। এর চেয়েও উপরে উঠতে হলে মাথা পিছু জাতীয় আয় ১২ হাজার ডলার অতিক্রম করতে হবে। এ অবস্থায় নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছাটা বাংলাদেশের জন্য যতটা সহজ হয়েছে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছতে ততটা সহজ হবে না।
বিশ্বব্যাংক মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছে। একটি হচ্ছে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, অন্যটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশ এখন থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত হবে।
সংস্থাটির হিসাবে মূলত ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে শুরু করে যেসব দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার পর্যন্ত তারা মধ্যম আয়ের দেশের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে আবার আয় ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে শুরু করে ৪ হাজার ১২৫ পর্যন্ত হলে তা হবে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং আয় ৪ হাজার ১২৬ ডলার থেকে শুরু করে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার হলে দেশগুলোকে বলা হয় উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। এর চেয়ে বেশি মাথাপিছু জাতীয় আয় হলে সেই দেশগুলোকে বলা হয় উচ্চ আয়ের দেশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৩১৪ ডলার। তবে বিশ্বব্যাংকের পদ্ধতি অনুযায়ী তা এখন ১ হাজার ৪৫ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ কারণেই নতুন তালিকায় মধ্যম আয়ের দেশ হতে পেরেছে বাংলাদেশ।
Published in Jugantor on Saturday, 4 July 2015.
শিগগিরই দ্বিতীয় সূচক অর্জন
মিজান চৌধুরী
মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় ঠাঁই পেতে ‘মানবসম্পদ’ উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ রূপরেখা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় সূচকও পূরণ হবে। এ নিয়ে বাংলাদেশ কাজ শুরু করেছে। ২০১৮ সালের মধ্যেই তা অর্জন করা সম্ভব হবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে প্রথম সূচক জাতীয় মাথাপিছু আয়ের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত স্বল্পোন্নত দেশগুলোসংক্রান্ত চতুর্থ জাতিসংঘ সম্মেলনে ২০২০ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা ৪৮ থেকে অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়। ওই সম্মেলনে ‘ইস্তাম্বুল পরিকল্পনা’ নামে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর আওতায় ২০২০ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশের খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশও পরিকল্পনা গ্রহণ করে। জানা গেছে, বাংলাদেশে ইস্তাম্বুল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়। সম্প্রতি এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনের ওপর একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছতে জাতিসংঘ তিনটি সূচক বেঁধে দিয়েছে। প্রথম সূচক জাতীয় মাথাপিছু আয়, দ্বিতীয় সূচক মানবসম্পদ উন্নয়ন ও তৃতীয় সূচক হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট সূচক। প্রতিটি সূচকের পৃথক মানদণ্ড রয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় নাম লিখতে তিনটি সূচকের মধ্যে একটির নির্দিষ্ট মান অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু জাতীয় আয় বিবেচনায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় ঠাঁই দিয়েছে। দ্বিতীয় সূচক মানবসম্পদ সূচক (এইচএআই) ন্যূনতম ৬৬ পয়েন্ট বা তার বেশি অর্জন করতে হবে বাংলাদেশকে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৬৩.৮ পয়েন্টে। অর্থাৎ মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশকে আর মাত্র ২.২ পয়েন্ট এগোতে হবে। এ লক্ষ্যেই মানবসম্পদ উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে।
রূপরেখা : মানবসম্পদ উন্নয়নের রূপরেখাটি প্রণয়ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ রূপরেখার মধ্যে দারিদ্র্যবিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, পুষ্টির হারে উন্নতি, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য দূর করাকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে। আর এসব সূচকে উন্নতির জন্য সাধারণ মানুষকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণের আওতায় নিয়ে আসা, শিল্প খাতে মাঝারি ঋণ প্রদান সম্প্রসারণ, নারী উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান তৈরিসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে।
রূপরেখায় মানবসম্পদ উন্নয়নে ২০২০ সালে মোট এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ) ঋণের ৪০ শতাংশই শিল্প খাতে বিতরণ, এসএমই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার এসএমই উদ্যোক্তা তৈরি, ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ হাজার এসএমই উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসএমই ঋণ দারিদ্র্যবিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। জানা গেছে, ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে দারিদ্র্যবিমোচন, মানবসম্পদ উন্নয়ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ইস্তাম্বুল পরিকল্পনার আওতায় সূচকগুলো অর্জন করতে হবে। আর যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে তা পাঠানো হবে জাতিসংঘে। প্রণীত রূপরেখায় আরও বলা হয়, অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্যবিমোচন, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ ও আঞ্চলিক বৈষম্য দূর এবং নারীর ক্ষমতায়নে এসএমই ঋণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। রূপরেখায় কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের বিষয়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান ও আয় কর্মসূচির মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নের সূচক বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে ১০ হাজার ২০০ উদ্যোক্তাকে উন্নয়ন ও বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার জনকে প্রশিক্ষিত করে এসএমই উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিভিন্ন এসএমই প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
মানবসম্পদ সূচক ছাড়াও আরও একটি সূচক পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। তা হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট সূচক (ইভিআই)। এই সূচক মূলত কৃষি উৎপাদন, পণ্য ও সেবা রফতানি, প্রচলিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। পাশাপাশি জিডিপিতে সম্পূর্ণ পণ্য উৎপাদন ও আধুনিক সেবার অংশীদারিত্ব ও ছোট অর্থনীতির প্রতিবন্ধকতা দূর করার ওপর নির্ভর করে। তবে শর্তটি বেশ ভালোভাবেই উত্তরণ করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের শর্ত অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে ৩২ বা তার চেয়েও কম অবস্থানে থাকতে হবে। বর্তমানে এ সূচকে বাংলাদেশ অবস্থান করছে ২৫ দশমিক ১-এ।
তবে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাবের শ্রেণী বিন্যাস অনুসারে বাংলাদেশ শুধু নিু মধ্য আয়ের দেশে প্রবেশ করল। এ ধারা অব্যাহত রেখে আরও সামনে এগিয়ে যেতে হলে অনেকগুলো সমস্যা দূর করতে হবে। এর মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সংস্কার, বিনিয়োগসংক্রান্ত দুর্বলতা দূর করতে হবে। এছাড়া উৎপাদনশীল খাতে গ্যাস সংযোগ, জমি সংস্থানসংক্রান্ত বাধাগুলো এখনও রয়েছে। এ সমস্যাগুলো দূর না হলে বর্তমান সূচক থেকে বের হয়ে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৫ ডলার হলেই তাকে নিু মধ্য আয়ের দেশ বলা হয়। তাদের হিসাব অনুসারে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছতে হলে এ আয় কমপক্ষে ৪ হাজার ৫৭৬ ডলারে নিয়ে যেতে হবে। এর চেয়েও উপরে উঠতে হলে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১২ হাজার ডলার অতিক্রম করতে হবে। এ অবস্থায় নিু মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছা বাংলাদেশের জন্য যতটা সহজ হয়েছে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছানো ততটা সহজ হবে না।