Published in Samakal on Friday, 11 July 2014.
লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকেনি মূল্যস্ফীতি
সমকাল প্রতিবেদক
সদ্যসমাপ্ত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকেনি। গড় মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়েছে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
তবে মাসভিত্তিক হিসেবে মূল্যস্ফীতির ধারা নিম্নমুখী রয়েছে। গত জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশে নেমে এসেছে। মে মাসে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতির তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জুন মাস শেষে গত অর্থবছরের মূল্যস্ফীতির এ প্রতিবেদন তৈরি করে। এ সময় পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব নজিবুর রহমান, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব সুরাইয়া বেগম ও বিবিএসের মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী জানান, গত মে মাসের তুলনায় জুনে মূল্যস্ফীতির হার পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে কমেছে। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি মে মাসের ৯ দশমিক ০৯ থেকে হ্রাস পেয়ে ৮ শতাংশ হয়েছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ১৬ থেকে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ হয়েছে।
মুস্তফা কামাল জানান, গেল অর্থবছরে সরকার মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও লক্ষ্যের কাছাকাছি পর্যায়ে ছিল। এটাকে তিনি সফলতা বলে অভিহিত করেন। মূল্যস্ফীতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল দাবি করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে চাল, ডালসহ সব খাদ্যপণ্যের জোগান স্বাভাবিক রাখতে দেশীয় কৃষি উৎপাদন ও প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আমদানি অব্যাহত রেখে এ সফলতা অর্জিত হয়েছে। তবে মাসিক হিসাবে জুনে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগামী ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঈদের পর তা কমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে বিবিএসের মহাপরিচালক জানান, গত মাসে বিশেষ করে চালের মূল্য কিছুটা কমে আসায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে। বিবিএসের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, আলোচিত সময়ে চাল, শাকসবজি ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের দাম আগের মাসের তুলনায় কমেছে। অন্যদিকে পরিধেয় বস্ত্রাদি, বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র ও গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণের দাম আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে। বোরো ধান উঠে আসায় এ সময় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সমকালকে জানান, এক অর্থবছরে ৭ দশমিক ৩৫ ভাগ গড় মূল্যস্ফীতি খুব বেশি বলা যাবে না। মূল্যস্ফীতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, দুই কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। প্রথমত, সাধারণ মানুষের আয় নতুন করে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর মতো বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। তাই তারা অতিরিক্ত কিনতে চাননি বলে পণ্যের দাম বাড়েনি। অন্যটি সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেয়নি বলে মূল্যস্ফীতি বাড়েনি।
চলতি অর্থবছরেও সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি না করলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।