Published in Bhorer Kagoj on Sunday, 12 July 2015.
বাড়ছে বিনিয়োগ, নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি বিদেশি ব্যাংকের
ওবায়দুর রহমান
বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমানের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ব্যাংক থেকে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে তাদের মুনাফা। ফলে নতুন করে আশাবাদী হচ্ছেন ব্যাংকাররা। একই সঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি যেমন হয়েছে, তেমনি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণ বিতরণেও। গত এপ্রিল মাসের শেষের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এর আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি বাণিজ্যিক ও বিদেশি ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। ঋণ বিতরণে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
ব্যাংকগুলো বলছে- সার্বিকভাবে আগের বছরের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ হয়েছে। আমদানি খাতও বেশ গতিশীল হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যে কোনো ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি খুবই স্বাভাবিক। গত বছরের চেয়ে বিনিয়োগ পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। সেই কারণে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। যার ফলে ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। এই ধারা আগামীতে অব্যাহত থাকবে বলে আমরা মনে করছি।
গত বছরজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগে প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছিল। এ বছরের প্রথমেও সেই একই কারণে বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে মন্দাভাব বিরাজমান ছিল। প্রধান বিরোধী জোটের সহিংস আন্দোলনের ফলে প্রয়োজনীয় মূলধন থাকলেও সেগুলো বিনিয়োগে আসেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনুক‚ল পরিবেশ থাকায় বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকের আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে বাংলাদেশে কার্যরত বিদেশি ব্যাংকের আমানত ও ঋণ বিতরণে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ভোরের কাগজকে বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমান দেশে বিনিয়োগের অনুকল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে অবকাঠামো সমস্যার খুব বেশি সমাধান হয়েছে সেটি বলা যাবে না। বিদ্যুৎ খাতের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলেও গ্যাসের ক্ষেত্রে এখনো বিনিয়োগকারীদের ভুগতে হচ্ছে। তবে সার্বিকভাবে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এই পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহিত হবে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি প্রবৃদ্ধিকে আমরা অস্বাভাবিক বলেছি। কারণ মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ফলে যে পরিমাণ শিল্পায়ন হওয়ার কথা সেটি হয়নি। একইভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির তুলনায় বাড়েনি শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি। ফলে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি সত্যিকার অর্থে বেড়েছে কি না, সেটিও দেখার বিষয়। তবে সার্বিকভাবে বিনিয়োগ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে এটা অস্বীকার করা যাবে না।
ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেও জানা যায়, আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। চলমান পরিস্থিতি যদি দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল থাকে তবে বিনিয়োগের খরা কেটে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।