দাম নির্ধারণ করা না হলে পরিস্থিতি বেপরোয়া রূপ ধারণ করতে পারে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি মহল্লাভিত্তিক ক্রয় কেন্দ্র বসানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় গরিব মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি চামড়া পাচার হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
Published in Nayadiganta on Monday, 21 September 2015.
চামড়ার দাম নিয়ে কাটছে না অনিশ্চয়তা
পাচার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে
জিয়াউল হক মিজান
২০১৩ সালের চেয়ে ২০১৪ সালে প্রতি বর্গফুট চামড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা কম দরে কিনেছিলেন ট্যানারি মালিকেরা। এবার আরো কম দামে কিনতে চান তারা। সে জন্য এবার চামড়ার ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করতেই নারাজ সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কমে যাওয়ার কথা বলা হলেও এ সুযোগে চামড়া পাচার হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা, চামড়ার উপযুক্ত মূল্য পাওয়া না গেলে দেশের কোটি কোটি গরিব-মিসকিনের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনীতিও।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর নির্ধারিত ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। গত বছর এ দাম ১৫ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরের ছাগলের চামড়া গত বছর কেনা হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকাদরে। মহিষের চামড়া ২০১৩ সালে ৪০ থেকে ৪৫ এবং ২০১৪ সালে কেনা হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার রাজনৈতিক সন্ত্রাসী, মাস্তান এবং ভুঁইফোড় মওসুমি ব্যবসায়ীদের অনৈতিক চাপে অবশ্য অনেক ক্ষেত্রেই চামড়া বিক্রি হয়েছে আরো কম দামে।
চামড়া শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী দেশের বাজারে বর্তমানে প্রতি বর্গফুট ভালো মানের গরুর চামড়ার দাম ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। মধ্য মানের চামড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং নি¤œমানের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এ অবস্থায় কোরবানির সময় চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দেয়া হলেও ব্যবসায়ীরা চাচ্ছেন দাম নির্ধারণ না করে যথাসম্ভব কম দামে চামড়া কিনতে। এতে করে কোরবানির চামড়ার মূল মালিক গরিব-মিসকিনরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা বলছেন চলমান ব্যবসায়িক মন্দায় কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন তারা।
চামড়ার দর নির্ধারণে অনীহার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি আবু তাহের নয়া দিগন্তকে বলেন, অর্থনৈতিক মন্দায় আমরা এমনিতেই লোকসানে আছি। তার ওপর দাম নির্ধারণ করে দিলে ব্যবসা করাই কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্ব বাজারে চামড়ার দাম অব্যাহতভাবে কমতে থাকায় রফতানিতেও ভাটার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরিস্থিতির বাস্তবতায় আমরা এবার চামড়ার দাম নির্ধারণ করার বিপ।ে যার যে দামে কেনার সামর্থ্য আছে সে সে দামে কিনবে। এতে দাম বাড়তেও পারে, কমতেও পারে।
চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত কারখানার মালিকেরা ওই দামে চামড়া কিনতে পারেন না জানিয়ে একাধিক কারখানার মালিক বলেন, পাড়া-মহল্লার মওসুমি ব্যবসায়ীরা কোনো কিছু না বুঝেই ঘোষিত মূল্যে চামড়া কেনেন। কিন্তু এরপর কয়েক হাত ঘুরতে গিয়ে দাম অনেক বেড়ে যায়। অথচ কোরবানিদাতারা উপযুক্ত দাম পান না। ক্ষতিগ্রস্ত হন গরিব মানুষগুলো। অন্য দিকে, মধ্যস্বত্বভোগীরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বিদায় হয়, খরচ বেড়ে যায় কারখানার। এমন পরিস্থিতিতে মওসুমি ব্যবসায়ীদের এড়িয়ে প্রকৃত ব্যবসায়ীর কাছে চামড়া বিক্রি করার পরামর্শ দেন তারা।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম নয়া দিগন্তকে বলেন, দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও চামড়ার বাজার মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে চলে যায়। দাম নির্ধারণ করা না হলে পরিস্থিতি বেপরোয়া রূপ ধারণ করতে পারে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি মহল্লাভিত্তিক ক্রয় কেন্দ্র বসানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় গরিব মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি চামড়া পাচার হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান খুবই কঠোর। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সাথে ইতোমধ্যে তাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। আজ রোববারও একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকেই চামড়ার দর নির্ধারণ হবে বলে সূত্রের দাবি। এবার চামড়ার দর কোনোভাবেই গত বারের চেয়ে কম হবে না বলেও সূত্র জানায়।