এনজিওর সুবিধাভোগী প্রত্যেক শহরে, প্রায় প্রত্যেক গ্রামে রয়েছে। এনজিওর কার্যক্রমের সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত। তাই তাদের কার্যক্রম সৎ উদ্দেশ্যে, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সঙ্গে পরিচালিত হওয়া উচিত।
Published in Kaler Kantho on Friday, 9 October 2015.
এনজিওর আয়-ব্যয়ে চোখ এনবিআরের
ফারজানা লাবনী
শীর্ষস্থানীয় এনজিওগুলোর আয়ের উৎস ও ব্যয়ের তালিকা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাদের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাবও খতিয়ে দেখা হবে। এ জন্য এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) কর্মকর্তাদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অনুসন্ধান শেষে টাস্কফোর্স কমিটি এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। তদন্তে কোনো এনজিও বা এনজিও কর্মকর্তার আয়-ব্যয়ের হিসাবে গরমিল পাওয়া গেলে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে এনজিও বা কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে। কোনো এনজিও বা এনজিও কর্মকর্তা দারিদ্র্যবিমোচনমূলক কার্যক্রমের আড়ালে নাশকতা বা সরকারবিরোধী কাজে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এনবিআর থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শতাধিক এনজিও এবং ওই সব সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের হিসাব খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হলেও প্রথম ধাপে বিদেশ থেকে অনুদানগ্রহণকারী শীর্ষস্থানীয় ৫৫টি এনজিও এবং তাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হিসাব যাচাই করা হবে। তদন্তে গরমিল পাওয়া গেলে এনজিও বা এনজিও কর্মকর্তার হিসাব জব্দ করা হবে।
সূত্র জানায়, তথ্য সংগ্রহের জন্য টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা এনজিও ব্যুরো, সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং এনজিওতে অর্থ-সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেবেন। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এবং বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে, কিছু এনজিও দারিদ্র্যবিমোচন, স্বনির্ভরতা, বয়স্ক ও সাধারণ শিক্ষা, ক্ষুদ্রঋণ প্রভৃতি কার্যক্রমের আড়ালে বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজে অংশ নিচ্ছে। জঙ্গি তৎপরতা এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনেও কিছু এনজিও যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। কিছু এনজিওর শীর্ষস্থানীয় অনেক কর্মকর্তার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি অনুদানের অর্থ জঙ্গিবাদী বা নাশকতামূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু এনজিও অনুদানের নয়ছয় করছে।
উল্লেখ্য, এনজিওগুলোর অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয়ে স্বচ্ছতা বিধানের লক্ষ্যে গত বছর ‘বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করা হয়।
এ আইন অনুসারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো এনজিও প্রকল্প পরিচালনা করতে পারবে না। এ ছাড়া বিদেশি লোক নিয়োগ করতে হলে এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন নিতে হবে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। বৈদেশিক অনুদানের টাকা একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রহণ ও ছাড় করতে হবে। তবে অনেক এনজিও আইন মানছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আইনের বিধান ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না তা এনবিআরের তদন্তে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, আইন অনুযায়ী বিনা অনুমতিতে অনুদান নিলে অনুদানের সমপরিমাণ বা তিনগুণ জরিমানা গুনতে হবে সংশ্লিষ্ট এনজিওকে। এ ছাড়া এনজিও ব্যুরোবিষয়ক আইন অমান্য করলে এনজিওর নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে সরকার। দেশের প্রচলিত আইনেই তাদের শাস্তি দেওয়া যাবে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, আশির দশকে এ দেশে এনজিও ব্যাপক হারে বিস্তৃত হয়। বড় এনজিওগুলোর অধিকাংশ বিদেশি অনুদাননির্ভর। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে, অনেক এনজিও নানা রকম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অনুদানের অর্থের অপব্যবহার করছে। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এনজিওর সুবিধাভোগী প্রত্যেক শহরে, প্রায় প্রত্যেক গ্রামে রয়েছে। এনজিওর কার্যক্রমের সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত। তাই তাদের কার্যক্রম সৎ উদ্দেশ্যে, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সঙ্গে পরিচালিত হওয়া উচিত।