Published in Samakal on Tuesday, 29 April 2014.
চার দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টা
আবু হেনা মুহিব
রফতানি খাতে পোশাক পণ্য নির্ভরতা কমাতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) মতো দ্বিপক্ষীয় চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যেসব দেশ থেকে আমদানি বেশি হয়, সেসব দেশের সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে রফতানিযোগ্য পণ্যের মান বাড়ানো, বৈচিত্র্য আনা ও রফতানিবাজার বহুমুখী করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও এ বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল সমকালকে বলেন, রফতানির জন্য সম্ভাবনাময় যেসব দেশ এখনও বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়নি সেগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে এফটিএ এবং পিটিএ করা হবে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডবি্লউটিও) নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরপরও রফতানি বাণিজ্যের স্বার্থে এসব দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার বিষয়ে আলোচনা করছে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলংকাসহ আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দু’পক্ষই চুক্তির সুবিধা-অসুবিধা খতিয়ে দেখছে। এ নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হবে। তারপর চূড়ান্ত চুক্তি হবে। এ ছাড়া দেশের জন্য লাভজনক হবে এমন অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়েও তা যাচাই-বাছাই করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি চিলির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের রফতানি খাত পোশাকনির্ভর। মোট রফতানির ৮০ ভাগই আসে এ খাত থেকে। এ খাতকে সহযোগী খাত হিসেবে নিলে এই পরিমাণ আরও বেশি। রফতানি আয়ে টানা প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে অন্তত ৩৬টি এইচএস কোডভুক্ত পণ্য রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। রফতানি পণ্যের মতো বাজার কয়েকটি দেশনির্ভর। একক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং জোট হিসেবে ২৮ দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) মোট রফতানির ৭৬ ভাগ হয়ে থাকে। রফতানি খাতে এ প্রবণতাকে প্রধান দুর্বলতা এবং বড় ধরনের ঝুঁকি মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ প্রসঙ্গে সমকালকে বলেন, গুটিকয়েক পণ্য এবং বাজারনির্ভরতা দেশের রফতানি খাতের প্রধান দুর্বলতা। এ দুর্বলতা কাটাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ করার উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক। তবে দেখতে হবে কোন দেশের সঙ্গে চুক্তি করলে বাংলাদেশের পক্ষে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, বিভিন্ন আঞ্চলিক জোট নিজেদের মধ্যে বিশেষ শুল্ককাঠামো সুবিধায় আমদানি-রফতানি করছে। বিশেষ হ্রাসকৃত হারে সুবিধা না পেলে ওইসব জোটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকা মুশকিল হবে বাংলাদেশের। এ ক্ষেত্রে পণ্যের নেটওয়ার্কিং, ভিসা এবং ব্যাংকিং জটিলতা এড়ানোর উদ্যোগ, একক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, এফটিএ ও পিটিএ হলে বাংলাদেশ অনেক বেশি লাভবান হতে পারবে। কারণ প্রচলিত বাজারের বাইরে অনেক দেশের বাজারে সম্ভাবনা সত্ত্বেও উচ্চ শুল্কের কারণে রফতানিকারকরা মনোযোগী নয়। তিনি জানান, অপ্রচলিত বাজারে রফতানি বাড়াতে এ মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি একক বাণিজ্য মেলায় অংশ নেবেন তারা। একইভাবে অন্যান্য নতুন বাজারে সফর করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।