Published in Samakal on Tuesday, 23 June 2015.
‘কানেকটিভিটি’তে ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক
খান এ মামুন
ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে আঞ্চলিক ‘কানেক্টিভিটি’ বাড়াতে দুটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বাংলাদেশ। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ৪০ কোটি ডলার দিতে প্রাথমিকভাবে রাজি হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এর পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা। কানেক্টিভিটির আরও কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে এ সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, আঞ্চলিক সংযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে। এতে দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যপূরণ হবে। এ জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি বাড়াতে বড় অঙ্কের ঋণ সহযোগিতা দিচ্ছে দাতা সংস্থাটি।
প্রাথমিকভাবে দুটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের স্থলবন্দর, পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা, রেল, সড়ক এবং নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এরমধ্যে ২৮ কোটি ডলার ব্যয়ে পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোর উন্নয়নে বড় আকারের একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এর আওতায় নৌপথের ড্রেজিং, নাব্যতা জরিপ, অভ্যন্তরীণ নৌ-বন্দরের উন্নয়ন, রেল কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতা বাড়ানো এবং বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের সুবিধা বাড়াতে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়ন এবং চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সার্ক অঞ্চলে কানেক্টিভিটি বাড়ানোর বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে। তবে সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে তা নতুন করে গতি পেয়েছে। এ সফরে কোস্টাল শিপিং বা উপকূলীয় সহযোগিতা, বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, চার দেশের মধ্যে মোটরযান চলাচল চুক্তি, নৌ-প্রটোকলসহ আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি সংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অর্থনীতির সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনায় সড়ক, নৌ ও রেলপথে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য পরিবহনের সুযোগও রয়েছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে।
অপর প্রকল্পে ১২ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। বাণিজ্য এবং পণ্য পরিবহন সুবিধা বাড়াতে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর আওতায় পাঁচটি স্থলবন্দর উন্নয়ন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে_ রাঙামাটির তেগামুখ, খাগড়াছড়ির রামগড় ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। বাকি দুটি স্থলবন্দর নির্বাচনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, শুধু ভোমরা স্থলবন্দরের উন্নয়ন হলে পণ্য পরিবহন ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে এবং ২০ থেকে ২৫টি বাংলাদেশি ট্রাক ভারতে যাবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশন সূত্রে জানা গেছে, আঞ্চলিক সংযুক্তি-সংক্রান্ত প্রকল্প দুটির আওতায় ৪৪ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সংস্থাটি ৪০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছে। গত ১৫ জুন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেস জাট অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিবকে দুটি প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে চিঠি পাঠিয়েছেন। জানা গেছে, এ ঋণ ৩৮ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ড রয়েছে। ঋণের সার্ভিস চার্জ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শিগগিরই এ-সংক্রান্ত আরও কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের মুখপাত্র মেহরিন এ মাহবুব সমকালকে বলেন, আঞ্চলিক সংযুক্তি-সংক্রান্ত প্রকল্পের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চুক্তি সই হয়নি।
আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি সংক্রান্ত এ দুটি প্রকল্পে অর্থায়নে কয়েকটি শর্তও বেঁধে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। শর্ত অনুযায়ী, বাণিজ্য বাধা দূরীকরণে পণ্য পরিবহন সুবিধা বাড়াতে বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এছাড়া সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আরও একটি উপ-কমিটি গঠন করার শর্ত দিয়েছে। এ কমিটি কার্যকরভাবে আঞ্চলিক বাণিজ্যে সকল বাধা-বিপত্তি দূর করতে সহযোগিতা করবে।
আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়লে দীর্ঘমেয়াদে তা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি সমকালকে বলেন, দুটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বন্দরের উন্নয়ন হলে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে ব্যয় ও সময় কমে আসবে। খুব দ্রুত পণ্য বন্দর থেকে খালাস করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বিশেষ করে কাঁচামালের আমদানি ব্যয় কমে আসার কারণে শিল্পের উৎপাদন খরচ কমবে। এসব প্রকল্পের আওতায় নৌ-বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য নানা পদক্ষেপ থাকবে। তখন নৌপথের ব্যবহার বাড়লে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ অনেক বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।