Published in Kaler Kantho on Wednesday, 17 June 2015.
জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ করদাতা!
এনবিআরের প্রতিবেদন
ফারজানা লাবনী
মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.০৪ শতাংশ করদাতা (ব্যক্তি)। শহরকেন্দ্রিক এই করদাতাদের মধ্যে ১০ লাখ ৩৬ হাজার জন ২০১৩ সালের ১ জুলাইয়ের আগে থেকে কর দিচ্ছেন। ছয় লাখ ৯ হাজার ব্যক্তি ২০১৩ সালের পরে ইটিআইএন গ্রহণ করেছেন। তবে করদাতারা সবাই নিয়মিত আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না।
বিখ্যাত, আলোচিত এবং বেশি আয়ের ব্যক্তিদের ওপর নজরদারির চেষ্টা করা হলেও মধ্যম আয়ের করদাতাদের রাজস্ব-সংক্রান্ত বিষয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তদন্ত করা হয় না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর আদায় সম্পর্কিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসক, আইনজীবী, কবি, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন পেশাজীবীর আয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারছে না এনবিআর। উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের মধ্যে কর ফাঁকির প্রবণতা বেশি। আয়কর রিটার্নে করদাতারা যে তথ্য দিচ্ছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই মেনে নিতে হচ্ছে এনবিআরকে। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে তাঁদের আয়-ব্যয় সম্পর্কিত তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয় না।
মধ্য আয়ের ব্যক্তিরাও আয়কর রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে কম। এনবিআরের অধিকাংশ রাজস্ব-সংক্রান্ত তদন্তই বিখ্যাত, আলোচিত সম্পদশালী ব্যক্তিকে নিয়ে। তাঁদের ক্ষেত্রে হিসাব জব্দের সিদ্ধান্তও নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উচ্চ আয়ের করদাতাদের অনেকে মামলা করে কৌশলে এনবিআরের পাওনা পরিশোধ থেকে বিরত থাকেন। অনেক সৎ ব্যবসায়ীও রাজস্ব-সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে মামলা করে থাকেন। অনেক মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এগুলোকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইনের আওতায় নেওয়ার ব্যাপারে এনবিআর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এনবিআরের সীমাবদ্ধতা ও ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহে সেটা গতিশীল হচ্ছে না।
এনবিআর বলেছে, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইনটি বকেয়া আদায়ের জন্য খুবই ভালো ব্যবস্থা। অনেক দেশেই এটি সফল। কিন্তু এনবিআরে এ আইন কার্যকরের জন্য পর্যাপ্ত জনবল ও দপ্তর নেই। কর অঞ্চলের নির্ধারিত কাজের সঙ্গে এ-বিষয়ক কাজও করা হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে এ-সংক্রান্ত সেলে অর্থায়নও বন্ধ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআর রাজস্ব আদায়ে অনেক আইন করেও কার্যকর করতে পারছে না। এসব যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হলে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ বন্ধ হবে। এটা বুঝতে পেরেই তারা আইন প্রয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
আরো বলা হয়েছে, উপজেলায় অধিকাংশ করযোগ্য ব্যক্তি ইটিআইএন নিচ্ছেন না; করও দিচ্ছেন না। তাঁদের মধ্যে রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা রয়েছে। সচেতনতার অভাবও আছে। উপজেলায় রাজস্ব দপ্তর স্থাপন করা হলে সেখানকার করযোগ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে। উপজেলা পর্যায়ে এখন ৮৫টি দপ্তর রয়েছে; এ সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে।
আরো বলা হয়েছে, ইটিআইএন না থাকলে ২৫ প্রকার রাষ্ট্রীয় সুবিধা না দেওয়ার বিধান যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কড়া নির্দেশ দিতে হবে। এনবিআরের সব কাজের অটোমেশন হলে নজরদারি বাড়ানো সম্ভব। এ বিষয়ে অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। অর্থপাচার রোধে এনবিআর কাজ করছে। এ-বিষয়ক প্রতিবন্ধকতা অনেকখানি দূর হয়েছে। মানবপাচার রোধেও এনবিআর কাজ করছে। সীমান্ত এলাকার অনেক সম্পদশালী ব্যক্তির আয়কর রিটার্ন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) রাজস্ব আদায়ে বড় ভূমিকা রাখছে। এ সেলে আরো আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। এনবিআরের তথ্যভাণ্ডার হালনাগাদ রাখার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে।
বেসরকারি নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, জনবহুল এ দেশে আয়কর রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎস হওয়া উচিত। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও এ খাতে আদায় বাড়ছে। চিহ্নিত সমস্যাবলির সমাধান করতে পারলে আদায় কয়েক গুণ বাড়বে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আয়করে নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই। যথা কৌশল অবলম্বন করতে পারলে করদাতার সংখ্যা ৫০ লাখে উন্নীত করা সম্ভব।