Published in Prothom Alo on Thursday, 30 July 2015.
পোশাকশিল্পের নতুন বাজার
রপ্তানি বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি কমছে
শুভংকর কর্মকার
অপ্রচলিত বা নতুন বাজারগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি একটু একটু করে বাড়ছে। তবে এসব বাজারে দুই অর্থবছরের ব্যবধানে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ২৯ শতাংশ থেকে কমে সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে গেছে। এ কারণে পোশাক রপ্তানিতে ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডা—এই তিন প্রধান বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা বড় আকারে কমছে না।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী সদ্যসমাপ্ত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশ থেকে অপ্রচলিত বা নতুন বাজারগুলোতে মোট ৩৯০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে; যা আগের ২০১৩-১৪ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরে এসব দেশে রপ্তানি হয় ৩৫৯ কোটি ডলারের পণ্য, যা তার আগের ২০১২-১৩ অর্থবছরের ২৯৭ কোটি ডলারের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ২৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট ২ হাজার ৫৪৯ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাকপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এতে প্রবৃদ্ধি হয় ৪ শতাংশ। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় রপ্তানি হয় ২ হাজার ১৫৮ কোটি ডলারের পণ্য।
জানতে চাইলে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন বাজারের কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় নেই বাংলাদেশে। তারা অনেকটা ফেরিওয়ালার মতো ঘুরে ঘুরে কাপড় কিনে নিয়ে যায়। চলতি বছরের তিন মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাঁদের অনেকেই দেশে আসতে পারেননি। নতুন বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কমার মূল কারণ এটিই।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নতুন বাজারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমদানিকারকেরা অল্প পরিমাণে পণ্য কেনেন। এই রকমের বাজারকাঠামোতে দীর্ঘ সময় ধরে রপ্তানি ধরে রাখা খুবই চ্যালেঞ্জিং। তা ছাড়া মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের মুদ্রার চেয়ে শক্তিশালী হওয়ায় এসব বাজারের ক্রেতারা বিকল্প উৎস থেকেই পণ্য কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন।
ইপিবির তথ্যমতে, গত অর্থবছরে নতুন বাজারের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৫ কোটি ডলারের পোশাকপণ্য রপ্তানি হয়েছে জাপানে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া ও তুরস্ক। এ দুই বাজারে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ৫৩ ও ৪৮ কোটি ডলারের পণ্য। এর মধ্যে তুরস্কে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ৬২ কোটি ডলারের চেয়ে আলোচ্য বছরে রপ্তানি কমেছে ২২ শতাংশ। এ ছাড়া চীনে ৩০, রাশিয়ায় ২১, কোরিয়ায় ১৫, মেক্সিকোতে ১২, ব্রাজিলে ১৮, ভারতে ১০, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬ ও চিলিতে ৩ কোটি ডলারের পোশাকপণ্য রপ্তানি হয়েছে।
এদিকে নতুন বাজারে প্রবৃদ্ধি না বাড়লেও মোট পোশাক রপ্তানিতে অবদান বাড়ছে। গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট রপ্তানির ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ নতুন বাজার থেকে এসেছে। পরের অর্থবছরে সেটি বেড়ে ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশে দাঁড়ায়। গত অর্থবছরে এই পরিমাণ আরেকটু বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বড় ব্র্যান্ডগুলোর একচেটিয়া ব্যবসার কারণে রপ্তানিকারকেরা জিম্মি হয়ে পড়ছেন। তবে সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতের যে সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে, তাতে রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। নতুন বাজারে ভালোভাবে প্রবেশ করতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ।
শহিদউল্লাহ আজিম আরও বলেন, ‘ব্যবসা বাড়াতে বিদেশে থাকা বাংলাদেশের হাইকমিশনগুলোর তেমন কোনো ভূমিকা নেই। ব্যবসায়ীদেরই সবকিছু করতে হয়। নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য হাইকমিশনগুলোর আরও উদ্যোগী হওয়া দরকার।’
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়াতে সরকারকে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দেশের উদ্যোক্তাদেরও সক্ষমতা এবং পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এতে করে রপ্তানিকারকেরা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন।