Published in Bonik Barta on Wednesday, 17 December 2014.
পোশাক শিল্পের উন্নয়নে স্থাপিত হচ্ছে গবেষণা কেন্দ্র
বদরুল আলম
বছরে আড়াই হাজার কোটি ডলার বিদেশী মুদ্রা অর্জনকারী তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে গত তিন দশকে কোনো গবেষণা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, গবেষণার অভাবে অদূর ভবিষ্যতে শিল্পটিকে টেকসই রূপ দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। এ মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ও সরকারি সহায়তায় কেন্দ্রীয়ভাবে গবেষণার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্থাপিত কেন্দ্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হচ্ছে।
খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে ঢাকা অ্যাপারেল সামিটে সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি (সিবাই) নামের কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটির প্রাথমিক তহবিল জোগান দিচ্ছে সুইডেনভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা সিডা ও পোশাক ক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম। তহবিলের পরিমাণ দেড় মিলিয়ন ডলার বা ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির আওতায় প্রাথমিকভাবে আগামী দুই বছরে পাঁচ-ছয় হাজার শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। শিল্পে দক্ষতার ঘাটতি মেটাতে পর্যায়ক্রমে স্যাটেলাইট সেন্টার স্থাপন ও শিল্পের প্রয়োজনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার কাজও করা হবে। কেন্দ্রটির মূল উদ্দেশ্যর মধ্যে রয়েছে— কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ানো এবং দীর্ঘমেয়াদে জ্ঞানভিত্তিক শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক পূর্বাভাস, আন্তর্জাতিক সমঝোতা, কমপ্লায়েন্সসহ বিশেষজ্ঞ কর্তৃক গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করা।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সহসভাপতি রিয়াজ-বিন-মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা থাকবে সিবাইকে একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে রূপ দেয়া। আশা করছি, পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রটি পোশাক শিল্প নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। এরই মধ্যে কার্যালয় স্থাপন করতে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
জানা যায়, বিজিএমইএ এরই মধ্যে প্রায় সাত হাজার বর্গফুটের একটি কার্যালয় ভাড়া নিয়েছে। কেন্দ্রের অবকাঠামো তৈরি, যন্ত্রপাতি স্থাপন ও কর্মী নিয়োগে আইএলওর আর্থিক সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কেন্দ্রটিকে স্থায়ী রূপ দিতে নগদ অর্থ ছাড়াও অন্যান্য সহযোগিতা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সূত্র অনুযায়ী, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে (আরজেএসসি) ২৮ ও ২৯ নং ধারায় সিবাই নিবন্ধন নিয়েছে। সেখানে প্রতিষ্ঠানটিকে অলাভজনক সংস্থা হিসেবেই দেখানো হয়েছে। সিবাই এরই মধ্যে তাদের প্রথম প্রকল্পের জন্য সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। স্কিল অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে বিজিএমইএর এ চুক্তির আওতায় কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ানো গেলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আর এটি হলে উৎপাদন খরচ কমে আসার পাশাপাশি আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও বাড়বে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অদক্ষতা, প্রক্রিয়াগত দুর্বলতাসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কম। সে বিচারে এ কেন্দ্রের মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর সুযোগ আছে। একই সঙ্গে সেন্টারের প্রশিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে সেন্টারটি পরিচালনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বেশির ভাগ সময়ই তা সম্ভব হয় না। ফলে দক্ষভাবে এ ধরনের কেন্দ্র পরিচালনায় জোর দিতে হবে। অন্যদিকে মানসম্পন্ন গবেষণায়ও জোর দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে না হয়।