Published in Bangladesh Protidin on Friday, 5 September 2014.
বাংলাদেশের পোশাক নিয়ে ক্রেতারা আতঙ্কে
সরকারকে বিজিএমইএর চিঠি
রুকনুজ্জামান অঞ্জন
পোশাক খাত নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারের কারণে পশ্চিমা ক্রেতারা এখন আতঙ্কে আছেন বলে দাবি করেছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। সম্প্রতি সরকারের কাছে লেখা এক চিঠিতে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যখন তাজরীন ফ্যাশন ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় সৃষ্ট ইমেজ পুনরুদ্ধারে কাজ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি, ঠিক তখনই পোশাক খাত ঘিরে ব্যাপক অপপ্রচার শুরু হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেয় এমন ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে।’
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক খাতের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য একটি বিশেষ মহল তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও দাবি করা হয় চিঠিতে।সম্প্রতি তোবা গার্মেন্টের পাঁচটি কারখানার তিন মাসের বেতন পরিশোধের সূত্র ধরে শ্রমিকদের আন্দোলন এবং ওই আন্দোলনের ঘটনা পশ্চিমা মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জার্মান সাংবাদিকের সঙ্গে এক শ্রমিকনেতার ফোনে কথা বলার পর থেকেই একে মহলবিশেষের ‘অপতৎপরতা’ বলে দাবি করে আসছেন এ খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। এরই রেশ ধরে গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় বিজিএমইএ। এতে পোশাক খাতের সাম্প্রতিক রপ্তানিচিত্র তুলে ধরে বলা হয়- গত তিন মাসে তাদের রপ্তানি ক্রমাগত কমেছে।
২০১৩ সালের মে, জুন ও জুলাইয়ে পোশাক খাতে রপ্তানি আয় যথাক্রমে ১৫ দশমিক ১২, ২০ দশমিক ৮৯ এবং ২৬ দশমিক ১৩ শতাংশ হলেও চলতি বছরে ওই তিন মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে যথাক্রমে ১০ দশমিক ০৬, ৫ দশমিক ০৬ ও ০ দশমিক ০৭ শতাংশ। গত জুলাইয়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে (-) ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, যা গত ২৩ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম বলে দাবি করা হয়েছে।রপ্তানি কমে যাওয়ার জন্য অপপ্রচারের পাশাপাশি অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কর্তৃক কারখানা পরিদর্শন, ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টিকে দায়ী করে চিঠিতে আরও বলা হয়- কর্মপরিবেশ নিরাপত্তার জন্য কারখানাগুলোয় গৃহীত পরিদর্শনের পর অনেক কারখানা আংশিক, সাময়িক বা পূর্ণাঙ্গভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক কারখানা ব্যাংক-ঋণ, বাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ মিটিয়ে চলতে পারছে না।
এ ছাড়া ব্যাক টু ব্যাক দায়, প্রজেক্ট ঋণ, স্টকলট কাস্টমস দায়, মেয়াদি ঋণ, ঋণ পরিশোধে অক্ষম হওয়ার কারণে সিআইবি রিপোর্ট খারাপ হওয়ার ঝুঁকিগুলোও তুলে ধরা হয়েছে।সুপারিশ : পোশাক খাতের চলমান সমস্যা মোকাবিলায় স্বল্পসুদে বিশেষ তহবিল গঠনসহ সরকারের কাছে বেশকিছু সুপারিশ করেছে বিজিএমইএ। এগুলো হলো : ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জোন করে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা সরিয়ে নেওয়া; ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করতে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও নীতির প্রয়োগ করা; পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের বীমা দাবি পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বীমা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা; শ্রমিকের দক্ষতা বাড়াতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পোশাক কারখানায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া; আশুলিয়া থেকে বাইপাইল মোড় পর্যন্ত ডাবল লেন রাস্তা নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কাজ দ্রুত শেষ করা, ব্রাজিল, রাশিয়াসহ ব্রিকস দেশগুলোয় রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ, ভারত ও চীনের ক্ষেত্রে স্থলবন্দরসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো সমস্যা সমাধান করা; এ দুটি দেশের সঙ্গে জটিল ভিসা পদ্ধতি, ল্যাবরেটরি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের অশুল্ক বাধা দূরীকরণের উদ্যোগ নেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভিয়েতনামের ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
বিজিএমইএ’র এ চিঠি, ক্রেতাদের আতঙ্ক ও অপতৎপরতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা) ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শ্রমিককল্যাণের ক্ষেত্রে যে উদ্যোগগুলো ছিল সাম্প্রতিক তোবা গার্মেন্টের ঘটনায় তার প্রতিফলন ঘটেনি। এখন এটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা উঠলেও পোশাক খাতের সুদূরপ্রসারী ফলাফল লাভের জন্য সরকারের উচিত হবে শ্রমনিরাপত্তা বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েই পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। শ্রমনিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি মানদণ্ড অর্জন করা গেলে বিদেশি ক্রেতারাও আর আতঙ্কে ভুগবেন না।