Published in Janakantho on Monday, 13 July 2015.
সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর পরও রেকর্ড পরিমাণে বিক্রির কারণে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার যত টাকা ঋণ নিচ্ছে তার চেয়ে বেশি শোধ করছে। গত পাঁচ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো সরকারের নিট ঋণ ঋণাত্মক হয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণস্থিতি ৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা কমে এক লাখ ৭ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকায় নেমেছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সরকারের ঋণ বেড়েছিল ৬ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ায় সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা কমেছে। পাশাপাশি উন্নয়ন ব্যয়ের ধীরগতির জন্যও প্রয়োজনীয় খরচ কম হচ্ছে। ফলে সরকারকে ব্যাংক থেকে আগের মতো ধার করতে হচ্ছে না। ব্যাংকের চেয়ে সুদহার বেশি থাকায় জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ গেল অর্থবছরের শুরু থেকেই বাড়ছিল। বিক্রি কমাতে গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে এসে সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ কমিয়ে ১১ শতাংশের আশপাশে নির্ধারণ করা হয়। এরপরও গত মে পর্যন্ত ১১ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ২৬ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। অর্থবছরের শুরুতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে মাত্র ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২১ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রাও ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে। বছরের শুরু থেকে ঋণ কম থাকার পরও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৩১ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা করা হয়। গত অর্থবছর ব্যাংক থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে পরিশোধ করছে তার চেয়ে বেশি। এতে ব্যাংক ব্যবস্থায় গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে সরকারের নিট ঋণ কমে এক লাখ ৭ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩০ জুন এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। এতে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ কমেছে ৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। গত অর্থবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ঋণ এক হাজার ৬১১ কোটি টাকা কমে ১২ হাজার ৫০ কোটিতে নেমে এসেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকায়।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম জনকণ্ঠকে বলেন, দুটি কারণে সরকারের ব্যাংক ঋণের চাহিদা কমেছে। প্রথমত, সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ায় ব্যাংক ঋণের চাপ কমছে। ব্যাংকে ঋণের চেয়ে সুদ বেশি হওয়ার জন্যই মানুষ এখন সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখতে বেশি উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে সরকারও এ খাত থেকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঋণ পাচ্ছে। এজন্য ব্যাংক ঋণের চাহিদা কম হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে ধীরগতি। ফলে এখানে ব্যয় আপাতত কম হচ্ছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার শুরুর অর্থবছরে ২০০৯-১০ অর্থবছর ব্যাংক থেকে কোন ঋণ নেয়নি। উল্টো তারা ব্যাংকগুলোর ৭ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে। এরপর প্রতিবারই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ বেড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছর ব্যাংক থেকে সরকার ২০ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা নিয়েছে।
পরবর্তী অর্থবছরে নেয়া হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সরকার ২৪ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা নিয়েছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছর নেয়া নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।