Published in Shokaler Khobor on Saturday, 8 August 2015.
সোনার দাম কমছেই
এসএম আলমগীর
এক দিনের ব্যবধানে গতকাল আবারও প্রতি আউন্সে সোনার দাম কমল ২ ডলার। বৃহস্পতিবার যেখানে বিশ্ববাজারে এক আউন্স (২.৪৩০৫ ভরি) সোনা লেনদেন হয়েছে ১০৮৪ মার্কিন ডলারে, সেখানে গতকাল লেনদেন হয় ১০৮২ ডলার ১০ সেন্টে। এভাবে গত এক মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনায় দাম কমেছে ৬০ ডলার ৯০ সেন্ট এবং গত এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ২১৫ ডলার ৯০ সেন্ট। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্ববাজারে সোনার দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে এখন। ফলে সোনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকেরও সোনায় প্রচুর বিনিয়োগ থাকায় বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ২০০৮ সালের মধ্য মার্চে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু তখন দাম কমতেও তেমন সময় লাগেনি। ওই বছরই বিশ্ব অর্থনৈতিক সঙ্কট চরম আকার নিয়েছিল। এরপর প্রকৃত দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এর দাম আউন্সপ্রতি সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায় ১৮৯৫ ডলারে পৌঁছে। এরপর থেকে দাম আবার পড়তে শুরু করে। দেখা যাচ্ছে মাত্র চার বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম কমেছে ৮১৩ ডলার।
সোনার এই দরপতন সম্পর্কে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন সকালের খবরকে বলেন, সোনার দাম ও ডলারের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। দুটোই রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে মজুদ করা হয়। যেহেতু ডলারের মূল্য শক্তিশালী হচ্ছে, সেহেতু ডলার সংগ্রহের প্রবণতাও বেশি বেড়েছে। উল্টো সোনার চাহিদা কমেছে। বাংলাদেশেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনা কিনে মজুদ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে কী পরিমাণ সোনা মজুদ রয়েছে আমার জানা নেই। তবে সোনার দাম পড়ে যাওয়ার কারণে সোনায় বিনিয়োগ করা অর্থ থেকে লাভের অংশ কমে যাবে এটা নিশ্চিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান সমন্বয় করতে পারে। তবে সোনার দাম কমায় সাধারণ ভোক্তারা লাভবান হবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা ডলারের ওপর থেকে মানুষের আস্থা হ্রাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটে সোনার দাম বেড়ে যায়। মার্কিন অর্থনীতি মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করার প্রেক্ষাপটে মানুষের আস্থা পুনরায় ডলারের ওপর ফিরে আসতে শুরু করে। গত কিছুদিন থেকে ডলারের দাম বিশ্বের অন্য ৬টি গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রার তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বর্তমানে যখন ডলারের মান দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন সোনার প্রতি আকর্ষণ কমছে। আর সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করে তাতে অধিক হারে বিনিয়োগ হচ্ছে না। এখন বরং বিনিয়োগকারীরা ডলারসহ বিভিন্ন শক্তিশালী মুদ্রার ওপরই ভরসা করছে বেশি। আর ডলার সূচক ও সোনার দাম তো বরাবরই উল্টো দিকে চলে।
দেশের বাজারে সোনার দাম ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিভরি যেখানে ছিল সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা, দশ বছরের ব্যবধানে ২০১২ সালের শেষ প্রান্তিকে এসে তা দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৬৫২ টাকায়। এরপর গত দশ মাসে পাঁচ দফা দাম কমে মূল্যবান এ ধাতুটির। বাংলাদেশে চলতি বছরে প্রথম আট মাসে সব ধরনের সোনার দাম চার দফায় কমে চার হাজার টাকার বেশি। যার মধ্যে গত ১৪ দিনের ব্যবধানেই প্রতিভরিতে ১ হাজার ২২৫ টাকা কমে ২২ ক্যারেট সোনার দাম হয়েছে ৪১ হাজার ৭৫৭ টাকা। এ ছাড়া ২১ ক্যারেট সোনা ৩৯ হাজার ৬৫৮ টাকা, ১৮ ক্যারেট সোনা ৩৩ হাজার ৯ টাকা, সনাতন পদ্ধতির সোনা ২১ হাজার ৮৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনার পাশাপাশি গতকাল থেকে দেশের বাজারে দাম কমে প্রতিভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৯৩৩ টাকায়। গতকাল ফের বিশ্ববাজারে দাম কমায় দেশের বাজারে দাম কমার প্রত্যাশা সাধারণ ক্রেতাদের।