Published in Alokito Bangladesh on Saturday, 24 May 2014.
গতি নেই সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নে
১০ মাস পরেও কাটাছেঁড়া
জাহিদুল ইসলাম
এপ্রিল পর্যন্ত সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আরএডিপির মাত্র ৫৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে প্রথম ১০ মাসে। মার্চ পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকার মূল এডিপির ৪৩ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছিল। কাটছাঁট করে এডিপির আকার ৬০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হলেও এক মাসে বাস্তবায়ন বেড়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শতভাগ আরএডিপি বাস্তবায়ন করতে হলে শেষ দুই মাসে আরও ২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। উন্নয়ন খাতে অল্প সময়ে এত বেশি অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, তাড়াহুড়ো করে অর্থ ব্যয় করলে উন্নয়ন কাজের গুণগত মান রক্ষা করা সম্ভব হবে না। নিম্নমানের কাজ করে, এমনকি কাজ না করেও ঠিকাদার প্রকল্পের অর্থ উঠিয়ে নিতে পারে। এতে সরকারি তহবিলের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্পে গতি না এলেও মাত্র দুই মাসের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের দাবি সবচেয়ে বেশি- ১ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। এছাড়া পদ্মা সেতুর জন্য ৩২৭ কোটি, বিদ্যুৎ বিভাগ ১৫৮ কোটি, সড়ক বিভাগ ৩২০ কোটি টাকা দাবি করেছে। এসব মন্ত্রণালয়ের মোট দাবি ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রত্যাশিত হারে অগ্রগতি না হওয়ায় এডিপি বরাদ্দের অর্থ ফেরত দিতে চাইছে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৪২ কোটি, ডাক ও টেলি যোগাযোগ ২ কোটি, তথ্য মন্ত্রণালয় ৫ কোটি, শিল্প মন্ত্রণালয় ৭২ কোটি, বস্ত্র ও পাট ৫০ কোটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ১০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের দাবি জানিয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দের কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে কয়েকটি মন্ত্রণালয় তাদের বরাদ্দের অর্থ ব্যয় করতে পারবে না বলেও জানিয়েছে। অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে শেষ হওয়ার পথে আছে এমন প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বছরের শুরুতে এডিপি বাস্তবায়ন না করে শেষের দিকে বেহিসাবি অর্থ ব্যয় বাংলাদেশের অর্থনীতির পুরনো সমস্যা। শেষ দিকে তড়িঘড়ি করে অর্থ ছাড় করায় অনেক সময় গুণগত মান নিশ্চিত করা যায় না। এর ফলে কাজ না করেই অনেক ঠিকাদার অর্থ উঠিয়ে নেয়। আবার অনেক সময় কাজের মান হয় খুব খারাপ। এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, হাতে-গোনা ১০টি মন্ত্রণালয়ে এডিপি বরাদ্দের বড় একটা অংশ দেয়া হয়। এসব মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো ভালোভাবে চললে এডিপি বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা থাকে না। তিনি বলেন, অর্থবছরের প্রথম দিকে টাকা ছাড়ে কিছু সমস্যা থাকে। এরপরও শেষ দিকে ঢালাওভাবে অর্থ ছাড় করা ঠিক নয়। এডিপি বাস্তবায়নে গতি আনতে আইএমইডিকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন তিনি। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়ে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার তিন মাসেও সংস্থাগুলো পুরনো ব্যর্থতা ঘোচাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বছর শেষে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলছেন, বাস্তবায়ন বাড়াতে এডিপি সংশোধন করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা এবং সম্মতির ওপর ভিত্তি করেই। গুণগত মান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন বাড়াতে প্রতিটি প্রকল্প সশরীরে পরিদর্শনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।