Published in Jaijaidin on Sunday, 24 May 2015.
এডিপিতে শেষ সময়ে অর্থব্যয়ের হিড়িক
বছর শেষে টাকা খরচ না হলে ফেরত দিতে হবে
এজন্য তাড়াহুড়ো করে খরচে নেমে পড়ে মন্ত্রণালয়গুলো _মোস্তাফিজুর রহমান
আবু সাইম
অর্থবছরের ১০ মাস শেষ হলেও কাঙ্ক্ষিত গতি নেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। এ সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) কাজ হয়েছে মাত্র ৫৬ শতাংশ। এ হিসেবে মে-জুনের মধ্যেই শেষ করতে হবে বাকি ৪৪ শতাংশ কাজ। টাকার অঙ্কে দুই মাসেই খরচ করবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। তাই বছর শেষে এসে বেড়েছে অর্থব্যয়ের হিড়িক। এতে তাড়াহুড়ো করে শেষ করা কাজের মান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাদের পুরো বরাদ্দ শেষ করতে হলে শেষ মুহূর্তে অস্বাভাবিক হারে অর্থব্যয় করতে হয়। কেননা তাদের স্বাভাবিক খরচের চেয়ে ৪-৫গুণ খরচ করতে গেলে বাছ-বিচারের বালাই থাকবে না। এতে ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও কাজের মান প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, বছরের শুরুতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কাজের আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু বছর শেষে টাকা খরচ না হলে ফেরত দিতে হবে। এজন্য তারা তাড়াহুড়ো করে খরচে নেমে পড়ে। তাড়াতাড়ি খরচ করলে কাজের মানেও বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন বলতে বছর শেষে কত খরচ হলো তাই দেখা হয়। কিন্তু কাজ কতটুকু হয়েছে, তা দেখার থাকে না। আবার প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ব্যয়ও বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে অর্থ ছাড় ও কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে বিশেষ পরিকল্পনা থাকতে হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হিসেবে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপির সর্বশেষ আকার ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এপ্রিল পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে মাসে গড়ে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু শতভাগ খরচ করতে হলে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে দুই মাসেই খরচ করতে হবে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। মাসে খরচ করতে হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা গড় খরচের ৪ গুণ। প্রতিদিন এডিপির কমপক্ষে ৫৩০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। গত কয়েক বছরের এডিপি থেকে দেখা যায়, বছর শেষে প্রায় ৯৬ শতাংশ অর্থ খরচ করা হয়।
আইএমইডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বছরের শুরুতেই কাজ শুরু করলে নিয়ম অনুসারে এই সময়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমপক্ষে ৮০ শতাংশ হওয়ার কথা। কিন্তু বছরের শুরুতে সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় বাস্তবায়ন গতি কম থাকে। তাই শেষদিকে এসে বরাদ্দ খরচের প্রতিযোগিতায় নামে মন্ত্রণালয়গুলো। এডিপির কাজ যতই ত্বরান্বিত করা হোক না কেন, অর্থবছর শেষে বাস্তবায়ন হার গত কয়েক বছরের চেয়ে কম হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, মোট ৫৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই এখনো পর্যন্ত তাদের অর্ধেক কাজ শেষ করতে পারেনি। ৩৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৫০ শতাংশের কম টাকা খরচ করতে পেরেছে। ৪০ শতাংশের কম বাস্তবায়ন রয়েছে ২০টির। সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। ১০ মাসে তারা বরাদ্দের মাত্র ৭ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো বলে, নতুন প্রকল্প নেয়ার কারণে তাদের পরিকল্পনা নিতে দেরি হয়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কেননা, নতুন বছরের নেয়া প্রকল্পের অধিকাংশই পুরাতন ও চলমান, নতুন প্রকল্প খুব একটা বেশি নয়। তাই তাদের এ অজুহাত ধোপে টেকে না।
সিপিডির এ গবেষক বলেন, গত কয়েক বছরে এডিপির হার বেড়েছে এটা ঠিক। এর সঙ্গে মান বাড়েনি। এজন্য আইএমইডিকে আরো সক্ষম করে তুলতে হবে। মন্ত্রণালয়গুলোকে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আলোকে দক্ষ করে তুলতে হবে। না হলে প্রতিবছরই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে, টাকাও বেশি খরচ হবে, কিন্তু বাস্তবায়নে মান আসবে না।
এডিপির বাস্তবায়ন চিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বছরের প্রথম ৪-৫ মাস এডিপির গতি থাকে একেবারেই শ্লস্নথ। ডিসেম্বরের পর থেকে বেশিরভাগ কাজ শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চের পর থেকে মন্ত্রণালয়গুলোর খরচ বাড়াতে থাকে। মে-জুনে তা আরো বেড়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী, বরাদ্দের পুরো টাকা খরচ করতে না পারলে তা ফেরত দিতে হয়। তাই মন্ত্রণালয়গুলো দ্রুততার সঙ্গে টাকা খরচ করে। এতে উন্নয়ন বাজেটে দুর্নীতির বড় সুযোগ তৈরি হওয়ায় তা পরিহারের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
এদিকে, এডিপির এ ধীরগতির মধ্যেই আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৯০০ কোটি টাকার এডিপি নেয়া হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এছাড়া মূল এডিপির সঙ্গে রয়েছে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এতে এডিপির মোট আকার দাঁড়ায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৯ হাজার কোটি টাকা বিদেশি উৎস থেকে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অবশিষ্ট ৫১ হাজার কোটি টাকা দেয়া হবে সরকারের তহবিল থেকে।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। পরে কাজের ধীরগতির কারণে সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) আকার কমিয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়।