Published in Amader Shomoy on Saturday, 30 May 2015.
এডিপির খরচ হয়েছে ৫৬ শতাংশ
মোল্লা কাফি
বার্ষিক উন্নয়ক কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৭ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপির সর্বশেষ আকার ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এপ্রিল পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে মাসে গড়ে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু শতভাগ খরচ করতে হলে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে দুই মাসেই খরচ করতে হবে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। মাসে খরচ করতে হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা গড় খরচের ৪ গুণ। প্রতিদিন এডিপির কমপক্ষে ৫৩০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। গত কয়েক বছরের এডিপি থেকে দেখা যায়, বছর শেষে প্রায় ৯৬ শতাংশ অর্থ খরচ করা হয়।
অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে প্রকল্প বাস্তবায়নের হিড়িক চলছে। কাজের মানের দিকে কোনো খেয়াল নেই। প্রকল্পের কাজ শেষ করাই যেন মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেষ সময়ে এসে তাড়াহুড়ো করার একটাই কারণ বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যাবে। বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করতে না পারলে সেই অর্থ অন্য প্রকল্পে চলে যাবে। তাই বরাদ্দকৃত অর্থ ধরে রাখার জন্য এমনটাই করছে। আর কাজের নামে চলছে অর্থ হরিলুট।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১০ মাস শেষ হলেও কাজের তেমন গতি নেই। এ সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) কাজ হয়েছে মাত্র ৫৬ শতাংশ। এ হিসাবে মে-জুনের মধ্যেই শেষ করতে হবে বাকি ৪৪ শতাংশ কাজ। টাকার অঙ্কে দুই মাসেই খরচ করবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাদের পুরো বরাদ্দ শেষ করতে হলে শেষ মুহূর্তে অস্বাভাবিক হারে অর্থ ব্যয় করতে হয়। কেননা তাদের স্বাভাবিক খরচের চেয়ে ৪-৫ গুণ খরচ করতে গেলে বাছবিচারের বালাই থাকবে না। এতে ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও কাজের মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কাজের মান ভালো হওয়ার শর্ত সময় নিয়ে কাজ করা। তাড়াহুড়ো করে কাজ করলে সে কাজের মান কখনোই ভালো হয় না। দেখা যায়, অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুব ব্যস্ত হয়ে ওঠে। এতে যেমন কাজের মান ভালো হয় না, তেমনি অর্থ অপচয়ের একটা পথ বের হয়। কিছুদিন গেলে ওই প্রকল্পের কাজ আবারও করতে হয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বছরের শুরুতে যদি কাজ শুরু করে তাহলে এমনটি হয় না। শেষ সময়ে এসে তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করতে চায়। কারণ একটাইÑ কাজ শেষ করতে না পারলে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত দিতে হবে।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, মোট ৫৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই এখনো পর্যন্ত তাদের অর্ধেক কাজ শেষ করতে পারেনি। ৩৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৫০ শতাংশের কম টাকা খরচ করতে পেরেছে। ৪০ শতাংশের কম বাস্তবায়ন রয়েছে ২০টির। সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। ১০ মাসে তারা বরাদ্দের মাত্র ৭ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে।
আইএমইডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বছরের শুরুতে প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করলে নিয়ম অনুসারে এই সময়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমপক্ষে ৮০ শতাংশ হওয়ার কথা। কিন্তু বছরের শুরুতে সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় বাস্তবায়ন-গতি কম থাকে। তাই শেষ দিকে এসে বরাদ্দ খরচের প্রতিযোগিতায় নামে।
এদিকে এডিপির এ ধীরগতির মধ্যেই আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৯০০ কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এ ছাড়া মূল এডিপির সঙ্গে রয়েছে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এতে এডিপির মোট আকার দাঁড়ায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৯ হাজার কোটি টাকা বিদেশি উৎস থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অবশিষ্ট ৫১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে সরকারের তহবিল থেকে।