Published in Bonik Barta on Wednesday, 10 June 2015.
সংশোধিত এডিপির ৬৭% বাস্তবায়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত মার্চে এক দফা কাটছাঁট করা হয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। এর পরও বড় অংশ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শেষ হতে চলা অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বাস্তবায়ন হয়েছে সংশোধিত এডিপির ৬৭ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের শেষ মাসে তাই ব্যয় করতে হবে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা অসম্ভব বলেই মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৩৫১টি। এগুলোয় সংশোধিত বরাদ্দ রয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। আর বছরের প্রথম ১১ মাসে ব্যয় হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ উন্নয়ন বরাদ্দের ৩৩ শতাংশ অর্থ এখনো ব্যয় হয়নি।
মোট বরাদ্দের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল রয়েছে ৫০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। আর প্রকল্প সাহায্য ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৫৯ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, কয়েক বছর ধরেই এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। গত (২০১৩-১৪) অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয় ৬৬ শতাংশ। তার আগের বছর একই সময়ে এ হার ছিল ৬৭ শতাংশ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ৭০ শতাংশ।
আইএমইডির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ১৫ প্রকল্পে মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৭৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯৭ শতাংশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পর রয়েছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ৮৫ শতাংশ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৮৪ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮৩ শতাংশ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৮১ শতাংশ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৮০ শতাংশ।
এদিকে এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ১৪ শতাংশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯ শতাংশ। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩৪ শতাংশ ও শিল্প মন্ত্রণালয় ৩৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে। অন্য মন্ত্রণালয়গুলো অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৪০ শতাংশের বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৮০ বা তার বেশি শতাংশ এডিপি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বরাদ্দ তুলনামূলক কম। তাই সার্বিক এডিপিতে তাদের প্রভাব খুব বেশি পড়েনি। আর সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয়গুলোর এডিপি বাস্তবায়নচিত্র তুলনামূলক খারাপ। এর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে সেতু বিভাগ।
আইএমইডির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর সর্বোচ্চ উন্নয়ন বরাদ্দ রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে, যা মোট এডিপির ১৭ শতাংশ বা ১৩ হাজার ৩৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১১ মাসে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৭৮ শতাংশ। তবে পদ্মা সেতুর বরাদ্দের বড় অংশ ব্যয় না হওয়ায় সেতু বিভাগের এডিপির বড় অংশই অব্যবহূত রয়ে গেছে। ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ১১ মাসে সেতু বিভাগ ব্যয় করেছে ৩ হাজার ৭৭৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের হার ৪৪ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগ ৭০ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা ৭২, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫৬, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৭৬, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৬৪, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৭৭ শতাংশ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৬৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এডিপি বাস্তবায়নে বিশেষত মেগা প্রকল্পে একই চক্রে আটকে আছে বাংলাদেশ। প্রতি বছরই বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়, যা বছর শেষে অব্যয়িত থেকে যায়। মাঝে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমানো হয়, তার পরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। আবার এ প্রকল্পগুলো কখনই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। ফলে বাস্তবায়নকাল ও প্রকল্প ব্যয় দুই-ই বাড়তে থাকে। কিছু প্রকল্পে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে টানা হচ্ছে। এতে উন্নয়ন প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাস্তবভিত্তিক বরাদ্দ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা বাড়ানোয় গুরুত্ব দেন তিনি।
জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এডিপি বরাদ্দের পুরো অর্থ খরচ করতে না পারায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অর্থ ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সবচেয়ে বেশি ফেরত যাচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অর্থ। প্রকল্পটির ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ফেরতের বিষয়ে চিঠি দিলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করে। এছাড়া আরো প্রায় দুই ডজন মন্ত্রণালয় ৫ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে। ফলে অর্থবছর শেষে ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন নিয়েই সন্দিহান আইএমইডি।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার মূল এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। গত মার্চে সংশোধিত এডিপি প্রণয়নের সময় ৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা কেটে নেয়া হয়। এতে সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়ায় ৭৫ হাজার কোটি টাকায়। তবে এর বড় অংশই অব্যবহূত থেকে যাবে। এর পরও আগামী অর্থবছরের জন্য ৯৭ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।
Published in The Daily Naya Diganta
শেষ প্রান্তিকে এসে এডিপি বাস্তবায়নে তোড়জোড়
১১ মাসে বাস্তবায়ন ৬৭ শতাংশ; মার্চ-মে পর্যন্ত ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি
হামিদ সরকার
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্জন বেশি দেখাতে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এসে বাস্তবায়নের হার বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের গুণগত মান থাকছে না। দেশের মানুষও প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে এডিপির বাস্তবায়ন হার ৬৭ শতাংশ; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি। মার্চ থেকে মে, তিন মাসে বাস্তবায়ন হার বেড়েছে ২৪ শতাংশ। পরিকল্পনামন্ত্রী দুর্বলতার কথা স্বীকার করে বলেন, চাপের ফলে কাজের মানও কিছুটা তিগ্রস্ত হয়। তবে গণমাধ্যমে যতটা দাবি করা হয়, ততটা না। আর অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, আমাদের এখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন বড় করে দেখাতেই শেষ নাগাদ জোর করে বাস্তবায়ন করা হয়। আর বাস্তবায়ন মানে টাকার ছাড়করণকেই বোঝানো হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডির সর্বশেষ গতকালের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হার ৬৭ ভাগ। এটি সংশোধিত আকার ৭৫ হাজার কোটি টাকাকে ধরে। একই সময়ে গত বছর এ বাস্তবায়ন হার ছিল ৬৬ ভাগ। গত বছর যেখানে এ সময়ে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা; এ বছর ব্যয়ের পরিমাণ ৫১ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। গত বছরের চেয়ে তা প্রায় ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বেশি।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ২৮ শতাংশ। জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাস এই হার ৩২ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে এসে দাঁড়ায় ৩৮ শতাংশে। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হার দেখানো হয় ৪৩ শতাংশ। আর এপ্রিলে এসে দাঁড়াল ৫৬ শতাংশে, অর্থাৎ মার্চের পর এসে বাস্তবায়ন হার দুই অঙ্কে বৃদ্ধি পেতে থাকে। মার্চ-মে পর্যন্ত বাস্তবায়নের হার ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ১১ মাসে ৬৭ শতাংশ বাস্তবায়নের হার হলে অর্থবছরের মাত্র এক মাস বাকি থাকে। সরকার যদি এ হার অর্থবছর শেষে ৯৭ শতাংশও দেখায় তা হলে তাকে জুন মাসেই বাস্তবায়ন হার ৩০ শতাংশ করতে হবে, যা আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে গবেষক ও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ৯ মাসে মোট ৫১ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা বা ৬৬ শতাংশ আর প্রকল্প সহায়তা থেকে ১৭ হাজার ৫৯ কোটি টাকা বা ৬৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। অর্থবছরের ১১ মাস চলে গেলেও চার মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৪০ শতাংশেরও কম অর্থ ব্যয় করেছে। এর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় ৩৯, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৩৪, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বরাদ্দের মাত্র ১৪ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে। মে পর্যন্ত ৫৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে মাত্র ছয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের ৮০ শতাংশের বেশি ব্যয় করতে পেরেছে। এগুলো হচ্ছেÑ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৯৭, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ৮৫, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৮৪, ধর্ম মন্ত্রণালয় ৮৩, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ৮১ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১০৪।
অর্থবছরের শেষ দিকে বেশি অর্থব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের অর্থবছর বর্ষা সময়ে শুরু হওয়ায় প্রথম তিন মাস উন্নয়নকাজ ব্যাহত হয়। তাই শেষ দিকে চাপ পড়ে। এ চাপের ফলে কাজের মানও কিছুটা তি হয়। তবে গণমাধ্যমে যতটা দাবি করা হয় ততটা হয় না। তিনি বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে সবাই বলে থাকেন শেষ প্রান্তিকে এসে বাস্তবায়ন হার বেশি হয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। হ্যাঁ, এটি কিছুটা সত্য তবে ঢালাওভাবে সত্য নয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা) ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মতে, কয়েক বছর ধরে আমাদের এডিপিতে নতুন প্রকল্পের চেয়ে পুরনো প্রকল্পের সংখ্যাই বেশি থাকে। ফলে নতুন প্রকল্প শুরু করতে যে ধরনের সময় লাগে পুরনো বা চলমান প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেটি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কাজ না এগোনোর বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার নয়। প্রকল্প দীর্ঘায়িত করার পেছনে অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। তার মতে, এ প্রবণতাটা নতুন নয়, পুরনো। প্রকল্প শেষ বা বাস্তবায়ন বেশি দেখাতে শেষ প্রান্তিকে এসে চাপ সৃষ্টি করা হয়। ফলে মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ফলে প্রাপ্তিটা দুর্বল হয়ে যায়। জোর করে প্রকল্প শেষ করার ফল নেতিবাচক হয়। এতে বেসরকারি খাতও উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন বলতে টাকা ছাড়করণকে বোঝানো হয়। বাস্তবতা হলো টাকা ছাড়করণ নয়, প্রকল্পের মান ঠিক রেখে যথাসময়ে প্রকল্প শেষ করাই হলো বাস্তবায়ন।
Published in The Daily Amader Shomoy
এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন অধরাই থেকে যাবে
১ মাসে পূর্ণ করতে হবে ৩৩ শতাংশ
চলতি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের (জুলাই-মে) ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৬৭ শতাংশ। এখনো বাকি রয়েছে ৩৩ শতাংশ। ১ মাসের মধ্যে এ অর্থ খরচ করতে হবে মন্ত্রণায়লয় ও বিভাগগুলোকে। নয়তো টাকা ফেরত নেবে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ৬৬ শতাংশ। এ হিসেবে চলতি সময়ে বাস্তবায়নের উন্নতি হয়েছে মাত্র ১ শতাংশ। গত বছর যেখানে এ সময়ে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এ বছর ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা।
এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯মাসে (জুলাই-মার্চ) এডিপির বাস্তবায়নের হার ছিল ৪৩ শতাংশ। এপ্রিস মাস শেষে অর্থবছরের ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৫৬ শতাংশ। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে এপ্রিল মাসে বাস্তাবায়ন হয়েছে ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ এপ্রিল মাস শেষে অর্থবছরের ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৬ শতাংশ।
অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে বেশ তাড়াহুড়ো করেই বাস্তবায়ন হচ্ছে এডিপি। ফলে প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকটা অগোছালোভাবেই শেষ হচ্ছে প্রকল্পের কাজ।
গত বছরের পুরো এ সময়জুড়েই ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ বছর দেশ তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক থাকলেও শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে না পারার শঙ্কা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হলেও অধরা থেকে যাবে। এক মাসের মধ্যে ৩৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ্লষকদের মতে যা কোনওভাবেই সম্ভব নয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজেও স্বীকার করেছেন, বছরের শেষ সময়ে তাড়াহুড়ো করেই কাজ শেষ করা হয়। এতে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
তিনি বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে সবাই বলে থাকেন শেষ প্রান্তিকে এসে বাস্তবায়ন হার বেশি হয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। হ্যাঁ, এটা কিছুটা সত্য তবে ঢালওভাবে সত্য নয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে বর্ষা মৌসুম থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এর জের পড়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকেও। তবে আমরা আগামী অর্থ বছরের শুরু থেকেই সর্তক থাকব, যেন শেষ প্রান্তিকে এসে চাপ না পড়ে। তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করতে না হয়।
এ ব্যপারে তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবীদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মাত্র ১ মাসের মধ্যে ৩৩ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। যদি এ সময়ের মধ্যে ৩৩ শতাংশ বাস্তবায়ন করে তাহলে বোঝা যাবে কাজের মান কোনও ভাবেই ভাল হয়নি। কেবল মাত্র নামের বাস্তবায়ন হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সিনিয়র গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আমাদের সময়কে জানান, প্রতি বছরই অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে এডিপি বাস্তবায়নের চাপ বেড়ে যায়। এর আগেও ১ মাসে ৩৩-৩৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়নের রেকর্ড আছে। কিন্তু এত তাড়াহুড়ো করে প্রকল্পের কাজ শেষ করলে কাজের মান কোনোভাবেই ভালো হয় না।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে এডিপির বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৫শ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরের এডিপির আকার ছিল ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এ বছর আগের তুলনায় ১৯.৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ ছিল ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এ বছর বৃদ্ধি পায় ১৯.৫৭ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ ছিল ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এ বছর বৃদ্ধি পায় ১৯.৭৬ শতাংশ। আর ২০১৪-১৪৫ অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ রাখা হয় ৮০ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এবছর বৃদ্ধি পায় ২১.৯৩ শতাংশ।
Published in The Daily Inquilab
এডিপি ১১ মাসে বাস্তবায়ন ৬৭ ভাগ এক মাসের চ্যালেঞ্জ ৩৩ শতাংশ
আজিবুল হক পার্থ
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরেই এগিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রাণালয়। লক্ষ্যে থেকে না পিছিয়ে সংশোধন করে কমানো হয়েছে এডিপির বরাদ্দ। কিন্তু অর্থবছরের ১১ মাসের শেষে এসেও সেই লক্ষ্য পূরণের আভাস নেই। বাস্তবায়ন হয়েছে ৬৭ ভাগ। এগারতম মাসে এসে বাস্তবায়ন হয়েছে ১১ ভাগ। শেষ মাসে পূরণ করতে হবে ৩৩ ভাগ। সেটি বাস্তবায়নে অনেক দুরূহ হলেও সংশ্লিষ্টরা দৌড়ে চলেছে তা অর্জনে। এক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়া করে অর্থব্যয়ের হিড়িক লাগিয়েছে। কাজের কোন মান না দেখেই খরচ করা হচ্ছে অর্থ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এডিপির শতভাগ বাস্তবায়নের চেয়েও জরুরি গুণগতমান।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হিসাব থেকে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়িত হয়েছে ৬৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৬ শতাংশ। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ৫১ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজেস্ব তহবিল থেকে ৩২ হাজার ৮৭২ কোটি, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৭ হাজার ৫৯ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট ব্যয় হয়েছিল ৪২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।জানা গেছে আইএমইডির এক পর্যবেক্ষণ সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী স্বীকার করেন উন্নয়ন প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। আর্থিক খরচের তুলনায় দেশের উন্নয়ন হচ্ছে না। এক্ষেত্রে বেশি অর্থ অপচয় হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।
আইএমইডি হিসেবে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপির সর্বশেষ আকার ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এপ্রিল পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে মাসে গড়ে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু শতভাগ খরচ করতে হলে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে দুই মাসেই খরচ করতে হবে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। মাসে খরচ করতে হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা গড় খরচের ৪ গুণ। কিন্তু গত মাসে এই খরচের হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। যা লক্ষ্যের অর্ধেক। এই হিসাবে চলতি মাসে এডিপির খরচ করতে হবে ২৪ হাজার কোটি টাকা। যা গড় হিসাবের ৬ গুণ এবং গত মাসের তিনগুণ।আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, মোট ৫৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ১১ মাসে শেষে অর্ধেক বিভাগ করেছে ৬০ ভাগ কাজ। ১০টি বিভাগ এখনো রয়েছে অর্ধেকের নিচে। অন্যদিকে ৯০ এর উপরে করেছে একটি বিভাগ আর আশির উপরে ৫টি বিভাগ। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো তাদের পুরো বরাদ্দ শেষ করতে হলে শেষমুহূর্তে অস্বাভাবিক হারে অর্থব্যয় করতে হয়। কেননা তাদের স্বাভাবিক খরচের চেয়ে ৪-৫গুণ খরচ করতে গেলে বাছ-বিচারের বালাই থাকবে না। এতে ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও কাজের মান প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বছরের শুরুতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কাজের আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু বছর শেষে টাকা খরচ না হলে ফেরত দিতে হবে। এজন্য তারা তাড়াহুড়ো করে খরচে নেমে পড়ে। তাড়াতাড়ি খরচ করলে কাজের মানেও বিরূপ প্রভাব পড়ে।তবে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে সবাই বলে থাকেন শেষ প্রান্তিকে এসে বাস্তবায়ন হার বেশি হয়। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। হ্যাঁ, এটা কিছুটা সত্য তবে ঢালাওভাবে সত্য নয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বর্ষা কাল থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এর জের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে চলে যায়। তবে আমরা আগামী অর্থবছরের শুরু থেকে যতটা সম্ভব সর্তক থাকব, যাতে করে শেষ প্রান্তিকে এসে বেশিরভাগ বাস্তবায়ন না হয়।
এদিকে, এডিপির এ ধীরগতির মধ্যেই আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৯০০ কোটি টাকার এডিপি নেয়া হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এছাড়া মূল এডিপির সঙ্গে রয়েছে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এতে এডিপির মোট আকার দাঁড়ায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৯ হাজার কোটি টাকা বিদেশি উৎস থেকে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অবশিষ্ট ৫১ হাজার কোটি টাকা দেয়া হবে সরকারের তহবিল থেকে।