সিপিডি মনে করে, এএফটি সংশ্লিষ্ট সরকারি নীতিমালার অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে আরো সক্রিয় হতে হবে। বৈদেশিক সাহায্য কাজে লাগিয়ে উন্নতি করতে হবে।
Published in Bonik Barta on Saturday, 12 September 2015.
ডব্লিউটিওর প্রতিবেদন
বাংলাদেশে বাণিজ্য সহায়তা বেড়েছে ১৪০%
বদরুল আলম
বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রসারে অন্যতম অন্তরায় বাণিজ্য ব্যয়। আবার অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনেও বাণিজ্য ব্যয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ব্যয় কমিয়ে আনতে ২০১৫ সালে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বাণিজ্য সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ নেয় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। সেই থেকে সংস্থাটির দেয়া ‘এইড ফর ট্রেড (এএফটি)’ সুবিধা পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। গত আট বছরে বাংলাদেশে ডব্লিউটিওর বাণিজ্য সহায়তা বেড়েছে ১৪০ শতাংশ।
তবে বাংলাদেশ যথাযথভাবে এ সহায়তা কাজে লাগাতে পারছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মূলত বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়নের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ খাতের পরিবর্তে কারিগরি উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে এ সহায়তা।
চলতি বছরের জুনে ডব্লিউটিও এবং অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) যৌথভাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘এইড ফর ট্রেড অ্যাট এ গ্ল্যান্স ২০১৫-রিডিউসিং ট্রেড কস্টস ফর ইনক্লুসিভ, সাসটেইনেবল গ্রোথ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে আসা বিদেশী অর্থায়নের উত্সগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স, উন্নয়ন সহায়তাসহ বাণিজ্য সহায়তা বা এএফটির পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে এতে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০৬-০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংস্থাটির বাণিজ্য সহায়তা ছিল ৩৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১০-১২ সময়ে ৬২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার সহায়তা পায় বাংলাদেশ। আর ২০১৩তে বাংলাদেশকে দেয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এএফটি বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ কোটি ১১ লাখ ডলার। এ হিসাবেই ২০০৬-১৩ সময়ে সহায়তার পরিমাণ বেড়েছে ১৪০ শতাংশ। যদিও এর বেশির ভাগই ছিল কারিগরি সহায়তা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এএফটি কার্যক্রম বাংলাদেশের জন্য অধিকতর সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। অথচ বাংলাদেশ এখনো কাজে লাগাতে পারেনি তা। অবকাঠামো ঘাটতি পূরণে বিদেশী উত্সগুলোকেই বেশি করে কাজে লাগানো প্রয়োজন, যদিও এজন্য ডব্লিউটিওর বাণিজ্য সহায়তা খুবই অপ্রতুল। এছাড়া সরকারও বাণিজ্য সহায়তাকে কাজে লাগাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। দেশে সুশাসনের ঘাটতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পুরোপুরি সুফল দিচ্ছে না ডব্লিউটিওর এএফটি।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশসহ যেকোনো দেশের জন্য একটি ভালো উদ্যোগ ডব্লিউটিওর এএফটি। তবে বাণিজ্য সহায়তার এ ক্ষেত্র সমালোচনারও দাবি রাখে।
তিনি আরো বলেন, এএফটি অর্থ ব্যয় হয় মূলত কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণে; এগুলো ভালো। ডব্লিউটিওর সঙ্গে এখন বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। সেসব চুক্তির আওতায় এএফটির ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। যেমন— বাণিজ্যসংক্রান্ত অবকাঠামো উন্নয়নসহ অন্যান্য বাণিজ্য সহায়তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে অবকাঠামো উন্নয়নের মতো কার্যকর ক্ষেত্রগুলোর জন্য এএফটিতে বড় কোনো তহবিল নেই, আবার তারা তা দেয়ও না। বাণিজ্য সহায়তা সংক্রান্ত চুক্তি হওয়ার ফলে অবকাঠামো উন্নয়নে সাহায্যের চাহিদা বাড়বে। উদ্যোগটি ভালো হলেও উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত এতগুলো দেশের জন্য এএফটির পরিমাণ অপ্রতুল বলেও মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।
এএফটি সংক্রান্ত প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, এরই মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বাণিজ্য সাহায্য এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে এনার্জি জেনারেশন অ্যান্ড সাপ্লাইয়ে। ২০০৬-০৮ পর্যন্ত এ খাতে এএফটি থেকে ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৬৫ লাখ ১০ হাজার ডলার, যা ২০১৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার ডলারে।
এনার্জি জেনারেশন অ্যান্ড সাপ্লাইসহ আর যেসব খাতে এএফটির অর্থ বেশি ব্যয় হয়েছে, তার মধ্যে আছে— ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড স্টোরেজ, এগ্রিকালচার-ফরেস্ট্রি-ফিশিং ইন্ডাস্ট্রি, বিজনেস অ্যান্ড আদার সার্ভিসেস। ২০১৩ সালে এ খাতগুলোয় ব্যয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে— ২১ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার, ৯ কোটি ৫৯ লাখ ২ হাজার ডলার ও ৪ কোটি ৪৪ লাখ হাজার ডলার। এগুলো ছাড়াও অন্য যে খাতগুলোয় ব্যয় হচ্ছে, তার মধ্যে আছে— ট্রেড পলিসি অ্যান্ড রেগুলেশন, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন, কমিউনিকেশন, ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, মিনারেল রিসোর্সেস অ্যান্ড মাইনিং ও ট্যুরিজম।
সিপিডি মনে করে, এএফটি সংশ্লিষ্ট সরকারি নীতিমালার অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে আরো সক্রিয় হতে হবে। বৈদেশিক সাহায্য কাজে লাগিয়ে উন্নতি করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে সব ধরনের এইড মনিটরিংয়ের শাখা থাকলেও এএফটির জন্য কোনো মন্ত্রণালয়ে আলাদা শাখা নেই। এএফটির ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেও দক্ষতা দেখা যায়নি। এ সহায়তা কাজে লাগানোর জন্য আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায় সংগঠনগুলোকেও আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, এএফটির কার্যকারিতা বাড়াতে সরকার ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে এ উেসর আকার বৃদ্ধিসহ অবকাঠামোর মতো উল্লেখযোগ্য খাতে বাণিজ্য সাহায্য কাজে লাগানো সম্ভব হবে না।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬-০৮ পর্যন্ত এএফটিতে শীর্ষ দাতা সংস্থা ও দেশগুলোর মধ্যে ছিল ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ), যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ডেনমার্ক ও জাপান। তবে ২০১৩ সালে এসে শীর্ষ দাতা দেশ জাপান, তাদের অবদানের পরিমাণ ৩২ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। এর পরই আছে আইডিএ, তাদের অবদান ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এর পরে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
এ বিষয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ডব্লিউটিওর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলো যদি তাদের মোট জাতীয় উত্পাদনের ক্ষুদ্র একটি অংশও এএফটি তহবিলে দেয়, তাহলে এ উদ্যোগ আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে। তবে উন্নত দেশগুলো আজ পর্যন্ত অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তেমন সাড়া দেয়নি।