Professor Mustafizur Rahman on Bangladesh’s foreign trade market

Published in Prothom Alo on Wednesday 3 September 2014.

আমেরিকায় পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়েছে

মনজুর আহমেদ

3e1e3730e0b12760fd1ae15f7af434e8-Untitled-4

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির বাজারে বাংলাদেশ তার অংশ কিছুটা খুইয়েছে। আর বাংলাদেশকে টপকে সামান্য ওপরে উঠে গেছে ইন্দোনেশিয়া।

চীন আমেরিকার বাজারে সবচেয়ে বড় অংশীদার। তারপরই ছিল ভিয়েতনাম। এ দফাতে চীন বাজারের কিছুটা অংশ হারালেও এখনো সবচেয়ে বড় তারাই। তবে দ্রুততম গতিতে এগোচ্ছে ভিয়েতনাম। ভারতও জোরেশোরে প্রস্তুতি নিয়ে এবার এগিয়েছে খানিকটা।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটেক্সা) সম্প্রতি প্রকাশ করা তথ্যে এ হিসাব মিলেছে। ওটেক্সা চলতি ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে আমেরিকার পোশাক আমদানির তথ্য প্রকাশ করে। এই ছয় মাসে আমেরিকা পোশাক আমদানি করেছে তিন হাজার ৭৫৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের। আমদানিতে ছয় মাসে তাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ শতাংশ।

ওটেক্সার হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে এখন চতুর্থ অবস্থানে। বাজার হিস্যা দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে। গত ফেব্রুয়ারি শেষে এ অবস্থান ছিল তৃতীয়। জুন শেষে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির বাজার হিস্যা হয়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয় নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান। যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমেরিকার বাজার একটা দুশ্চিন্তার জায়গা বলেই আমার মনে হচ্ছে। ভারত বড় আকারে এ বাজারে ঢোকার কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়েছে। আর ভিয়েতনামে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে সেখানকার পোশাকপণ্যে বৈচিত্র্য এসেছে।’ এসবই বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ মনে করেন এই বিশ্লেষক।

পোশাক খাতে ভারতের ১০০ ভাগ স্থানীয় উৎপাদন আছে। অর্থাৎ তুলা উৎপাদন, তা থেকে সুতা, সুতা থেকে কাপড় এবং কাপড় থেকে পোশাক তৈরির সবটাই ভারতে স্থানীয়ভাবে হয়। কিন্তু বাংলাদেশকে তুলা চাহিদার প্রায় পুরোটাই এবং সুতার একটা বড় অংশ, কাপড়ের কিছু অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে পোশাক তৈরি করতে হয়। ভারত পোশাক রপ্তানি বাড়াতে কয়েক বছর ধরে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে চলেছে। তার ওপর ডলারের বিপরীতে রুিপর বড় দরপতনও হয়েছে। এসব সুযোগ কাজে লাগাতে দেশটির ব্যবসায়ীরাও বেশ তৎপর হয়েছেন।

অন্যদিকে গত বছরের শেষ ভাগে বাংলাদেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু, তাজরীন, স্মার্ট ফ্যাশনস, গরীব অ্যান্ড গরীব কারখানাতে আগুন লেগে শত শত শ্রমিকের মৃত্যুর খবরও বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় তোলে। এসব ঘটনায় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তাদের চাপে পড়ে। মনে করা হচ্ছে, এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে চেয়েছে প্রতিযোগী দেশগুলো।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে এখন পোশাকপণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। অধিক মূল্যের পোশাকপণ্য তৈরি করতে মনোযোগী হতে হবে। তাহলে আগামী দিনে বাজার অবস্থান ধরে রাখা যাবে।

ওটেক্সার তথ্যে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া উভয় দেশই জানুয়ারি-জুন সময়ে তাদের বাজার হিস্যা হারিয়েছে। তবে ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বাংলাদেশ বেশি হারে বাজার হিস্যা হারায়। আলোচ্য ছয় মাসে আমেরিকায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর ইন্দোনেশিয়ার ২৪৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

ভিয়েতনাম আমেরিকার বাজারে গত ছয় মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধি করেছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশটির রপ্তানির পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ৪২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। একই সময়ে চীনের রপ্তানি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর এই ছয় মাসে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৮২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের।

এ প্রসঙ্গে দেশের অন্যতম পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের শেষ ভাগে চরম সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো ক্রেতাই বাংলাদেশে তাঁদের ক্রয়াদেশ দিতে চাননি। তিনি বলেন, ‘ওই সময় ছোট-বড় সব ক্রেতাই ভিয়েতনামে গেছেন। এমনকি চীন পর্যন্ত পরিস্থিতি বুঝে সে সময় ভিয়েতনামের পোশাক খাতে বিনিয়োগ করে। যদিও সম্প্রতি ভিয়েতনাম থেকে চীন তাদের বিনিয়োগ আবার কমিয়ে এনেছে।’

কুতুবউদ্দিন আহমেদ জানান, এ সময় ইন্দোনেশিয়ায় অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ নিয়ে যায়। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে পোশাক খাতে বিদেিশ বিনিয়োগ হয়। ভারতেও অনেক রপ্তানিকাজ গেছে, যার একটা বড় অংশ বহুদিন ধরে বাংলাদেশই করত। তবে আশার দিক হিসেবে এনভয় চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখন আবার আমরা ক্রেতাদের বিভিন্ন ধরনের আনাগোনা দেখতে পাচ্ছি। হয়তো এ পরিস্থিতি ভালো হতে পারে।’