Published in Bonik Barta on Monday, 22 June 2015.
চার দেশীয় মোটরযান চলাচল চুক্তি
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সুবিধা পাবে ভারত
ইসমাইল আলী
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে মোটরযান চলাচলে চুক্তি হয়েছে ১৫ জুন। এর আওতায় আগামী বছর থেকে এ চার দেশের মধ্যে শুরু হবে পণ্য ও যাত্রীবাহী যান চলাচল। তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিবিআইএন চুক্তির পূর্ণ সুবিধা পাবে কেবল ভারত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুক্তির আওতায় চার দেশের মধ্যে পণ্য ও যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে। চলবে ব্যক্তিগত গাড়িও। তবে রফতানি বা আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে গেলে তা খালাস করে খালি অবস্থায় ফিরতে হবে পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাবে। আর অতিরিক্ত ব্যয় ব্যবসায়ীদের থেকেই আদায় করবে পরিবহন কোম্পানিগুলো। ফলে ব্যয় সাশ্রয়ে আগের মতোই বর্ডার এলাকায় পণ্য খালাস করে অন্য দেশের গাড়িতে তুলে দিতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন ব্যবসায়ীরা। তবে ভারতের এ ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না। কারণ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের পণ্যবাহী গাড়ি দেশটির এক অংশ থেকে আরেক অংশে যাবে। ফলে স্থানীয় পণ্য পরিবহনের শর্তটি ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
উল্লেখ্য, চুক্তির ধারা ৬-এর ১-উপধারায় বলা হয়েছে, এক দেশের পণ্যবাহী গাড়ি অন্য দেশে প্রবেশ করলে স্থানীয় পণ্য বহন করতে পারবে না। পণ্য খালাস করে সেখান থেকে খালি গাড়ি নিয়ে ফিরতে হবে। কারিগরি ভাষায় যা ‘ক্যাবোটাজ রেস্ট্রিকশন’ হিসেবে বিবেচিত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবিএম রফিকুজ জামান সাগর বণিক বার্তাকে বলেন, ক্যাবোটাজ রেস্ট্রিকশন পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। এক্ষেত্রে খালি গাড়ি নিয়ে ফিরতে হলে পরিবহন কোম্পানিগুলো চার্জ বাড়িয়ে দেবে। ফলে ব্যবসায়ীরা আগের মতোই বর্ডারে পণ্য খালাস করে অন্য দেশের গাড়িতে তুলে দিতেই আগ্রহী হবে। তাই বিবিআইএন সুবিধা আদায়ে ক্যাবোটাজ রেস্ট্রিকশন তুলে দেয়ার দাবি জানান তিনি।
সড়ক পরিবহন বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়ে বলেন, ‘বিবিআইএন চুক্তি একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। সম্পূর্ণ নতুন হওয়ায় এতে কিছু বিষয় অস্পষ্ট রয়ে গেছে। প্রটোকলের আওতায় বিষয়গুলো সমাধান করা হবে। এক্ষেত্রে যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি দেখবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। তবে পণ্য পরিবহনের বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা সীমিত। তাই বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেখতে দেয়া হয়েছে। ক্যাবোটাজ রেস্ট্রিকশনের বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়— তা তারা দেখবে।’
চুক্তির ধারা ৪-এর ৭-উপধারায় বলা হয়েছে, গাড়ির চালক বা ক্রুদের ন্যূনতম একজনকে ইংরেজি ভাষায় বা গন্তব্য দেশের ভাষায় কথা বলতে পারতে হবে।
ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানচালকরা অধিকাংশই কম শিক্ষিত হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য এটি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী। তিনি বলেন, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানচালকদের অধিকাংশের পক্ষেই ইংরেজি বলাটা প্রায় অসম্ভব।
এদিকে ধারা ৩-এর ১৩ উপধারায় বলা হয়েছে, চুক্তি সইয়ের দুই বছরের মধ্যে ভেহিকল ট্র্যাকিং ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে, যাতে এক দেশের যানবাহন অন্য দেশের কোথায় অবস্থান করছে, তা জানা যাবে। এটিও ভবিষ্যতে যানবাহন চলাচলে বাংলাদেশের জন্য বাধা সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া বাংলাদেশের সড়ক বেশির ভাগই দুই লেনের ও নিম্নমানের। এগুলো উন্নয়ন না করে যান চলাচল শুধু ঝুঁকি বাড়াবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারত বড় দেশ, তাই তারা চুক্তির শর্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবে। এতে তারা মূল সুবিধাভোগী হবে। তবে বাংলাদেশকে এর সুবিধা নিতে হলে দরকষাকষি ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে প্রটোকলগুলো চূড়ান্ত করার আগে সবকিছু যাচাই-বাছাই করা উচিত। সম্প্রতি মোটর ভেহিকল এগ্রিমেন্ট বিষয়ক এক সেমিনারেও বিষয়টি তুলে ধরে সিপিডি।
এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে কানেক্টিভিটির প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিবিআইএন চুক্তিটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। এটি বাস্তবায়নে কিছু জটিলতা আছে। সেগুলো দূর করার জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া দ্রুত ভেহিকল ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর চালকদের ভাষাগত সমস্যা সমাধানে সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করা হবে। এতে বাংলাদেশের সীমান্তে একবার চেকিং হলেই চলবে। অন্য দেশের সীমান্তে কথা বলার প্রয়োজন হবে না। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করা হয়েছে।