Published in Prothom Alo on Monday, 22 June 2015.
গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির প্রতিবেদন
বছরে ১৩২ কোটি ডলার পাচার
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১৩২ কোটি মার্কিন ডলার পাচার হচ্ছে। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৭৯ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮০ কোটি ডলারই পাচার হয় পণ্যের মিথ্যা মূল্য বা মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে। গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্বের উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ পথে অর্থপ্রবাহ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর গড়ে এক লাখ কোটি ডলার বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ থেকে অবৈধ পথে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয় এশিয়ার দেশগুলো থেকে।
এদিকে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বা এসএনবি ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০১৪’ শীর্ষক যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের চেয়ে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের নাগরিকেরা বেশি অর্থ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করেছেন।
গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে যে অর্থ পাচার হয়, তার ৪০ শতাংশ এশিয়ার। ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো থেকে প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়েছে। গড়ে প্রতিবছর এই অঞ্চল থেকে ২৭ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার পাচার হয়ে থাকে, যা এই অঞ্চলের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এসব পাচারের বড় অংশই হয়ে থাকে বাণিজ্যিক লেনদেনের মাধ্যমে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১ হাজার ৩১৬ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাচার হয়েছে ২০০৬ ও ২০০৭ সালে। ওই দুই বছরে যথাক্রমে প্রায় ২৬৭ ও ২৪৪ কোটি ডলার অবৈধভাবে দেশ থেকে পাচার হয়। এরপরের অবস্থানে ছিল ২০১২ সাল। ওই বছর বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে ১৭৮ কোটি ডলার পাচার হয়।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে যাচ্ছে, তারই একটি অংশ জমা হচ্ছে সুইস ব্যাংকে। আর পাচার হওয়া বেশির ভাগ অর্থই যাচ্ছে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের মিথ্যা মূল্য ঘোষণার মাধ্যমে।
সম্প্রতি সিপিডির পক্ষ থেকে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির নামে অর্থ পাচার হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বাজেটের আগে-পরে সংস্থাটির পক্ষ থেকে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার বিষয়টি তুলে ধরে পাচার রোধে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভীর নজরদারির দাবি জানানো হয়।