Published in Prothom Alo on Sunday, 30 November 2014.
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ছে
বিশেষ প্রতিনিধি
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা কলকারখানা স্থাপনে আগের চেয়ে অধিক পরিমাণ যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কারখানা সম্প্রসারণ হোক অথবা নতুন কারখানা স্থাপন হোক মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বৃদ্ধির এটাই হলো ইঙ্গিত।
চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা ব্যাংকগুলোতে ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের এলসি খুলেছেন। একই সময়ে নিষ্পত্তি হওয়া এলসির পরিমাণ হয়েছে ৯১ কোটি ৭২ লাখ ডলার।
আগের বছরের একই সময়ে অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিতে ব্যবসায়ীরা এলসি খোলেন ৯৭ কোটি ১৬ লাখ ডলারের। আর নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭১ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের এলসি। এতে করে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানিতে প্রবৃদ্ধির হার হয়েছে ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর এলসি নিষ্পত্তিতে প্রবৃদ্ধির হার হয়েছে ২৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে।
যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বৃদ্ধির এই প্রবণতাকে তিনি ইতিবাচক মনে করছেন। তবে তিনি বলেন, এর সঙ্গে একই সময়ে শিল্পের জন্য মেয়াদি ঋণের পরিমাণ জানা গেলে বিষয়টি পরিষ্কার হতো।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে উদ্যোক্তাদের মধ্যে একধরনের হতাশা ছিল, তাঁরা দ্বিধাতে ছিলেন। হয়তো সেটা এখন কাটতে শুরু করেছে। এত দিন উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে চলতি মূলধন নিয়েই উৎপাদন বাড়াতে সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ায় বোঝা যায় নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়লে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা রাখতে যে প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রয়োজন তা মেটানো যাবে। তাতে কর্মসংস্থানও বাড়বে।
অবশ্য গত বছরের শেষভাগে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল ব্যবসায়ীদের মধ্যে। সে সময় দেশজুড়ে হরতাল-অবরোধের কারণে বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দেয়।
যোগাযোগ করা হলে নিট পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, পোশাক খাতে সব সময়ই যন্ত্রপাতি পুনঃস্থাপনের চাহিদা থাকে। তিনি বলেন, ‘ইদানীং পোশাক শিল্প মালিকদের মধ্যে একধরনের ইতিবাচক প্রতিযোগিতাও তৈরি হয়েছে কারখানা আধুনিকায়নের। সে প্রক্রিয়াতে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি এ খাতে বাড়তে পারে।’
পোশাক খাতে তাজরীন ও রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর ক্রেতাদের প্রধান শর্ত হিসেবে কারখানায় শ্রমিকের কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। এতে অনেক পোশাক কারখানা আধুনিকায়নও করা হচ্ছে। বাড়ছে মূলধনি যন্ত্রপাতিতে শিল্পমালিকদের বিনিয়োগ।