Published in Bhorer Kagoj on Wednesday, 4 June 2014.
সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির বাজেট চাঙ্গা হবে বেসরকারি খাত
বাজেটের আকার ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, কমতে পারে সামাজিক খাতের ভর্তুকি
বিশ্বজিৎ দত্ত
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জগদীশ ভগবতী। যিনি অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য প্রবৃদ্ধিকেই প্রধান মনে করেন। এর জন্য তিনি সবসময়েই উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন ভারতের গুজরাট মডেলকে। এই মডেলের আলোকে তিনি সব সময়েই বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথা বলেছেন। তার মতে, প্রবৃদ্ধি বাড়াও সরকারের হাতে টাকা চলে আসবে। সামাজিক অন্য খাতে তখন টাকা খরচ করা যাবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী ২০১৩-১৪ সালের বাজেটটি অনেকটা জগদীশ ভগবতীর মডেলেই উপহার দিতে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের বাস্তবতা বিবেচনায় কিছুটা সংস্কার করেছেন মাত্র। এই সংস্কারটি হলো সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। বাজেটের আগাম আভাসে মনে করা হচ্ছে সরকারের রাজস্ব নীতিও বিনিয়োগবান্ধব হবে বাজেটে।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ভোরের কাগজকে বলেন, গত এক বছর দেশে বিনিয়োগ হয়নি। আগামী বাজেটে সরকারের লক্ষ্য থাকবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির। বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে। তবে সামাজিক খাতের বিষয়গুলোতেও সরকারের মনযোগ থাকবে। এই কারণেই বড় উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজস্ব খাতকেও বেসরকারি বিনিয়োগের অনুকূল করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১২-১৩ সালে দেশে বিনিয়োগ হয়েছে মোট জিডিপির ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি হার ৭ শতাংশ করতে হলে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশ করতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত।
সরকার ইতোমধ্যে ৮৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করেছে। তাতেও দেখা যাচ্ছে অবকাঠামো খাতকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে যোগাযোগ খাতে। তারপরেই রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত।
জানা যায়, আগামী বাজেটে রাজস্ব নীতির মাধ্যমেও বেসরকারি বিনিয়োগকেও উৎসাহিত করা হবে। বিশেষ করে বাজেটে কর্পোরেট কর হার কমানো হচ্ছে গড়ে আড়াই শতাংশ। ব্যক্তিগত করহার বৃদ্ধি করে করমুক্ত আয়ের সর্বনিম্ন সীমা করা হচ্ছে ২ লাখ ৫০ হাজার। আমদানিতে বেশিরভাগ পণ্যে সম্পূরক শুল্ক তুলে দেয়া হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত হয় এমন ১৩০টি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক থাকছে। ভ্যাটের ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হচ্ছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ভালো। স্থিতিশীল রয়েছে মুদ্রা বিনিময় হার। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে আগামী বাজেট সরকার প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে। তবে এই বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রয়োজন হবে রাজনৈতিক সমঝোতা।
আগামী বাজেটে সামাজিক খাতে সরকারের ভর্তুকি কমবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, সামাজিক যেসব খাতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। আগামী বাজেটে সেসব বিষয়ে কাটছাঁট করতে হতে পারে। তার মতে, বড় আকারের বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা সরকারের নেই। তিনি মনে করেন, সরকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না। যার ফলে তাকে বাজটে ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নিতে হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে সরকারের বিনিয়োগ বৃদ্ধির যে ঘোষণা রয়েছে তা বাস্তবায়ন নাও হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। যার মধ্যে রাজস্ব খাত থেকে সরকারের সংগ্রহ ১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। বাজটে ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যেই থাকছে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামীকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন।