Published in Prothom Alo on Monday, 12 May 2014.
প্রাক–বাজেট ২০১৪–১৫: এফবিসিসিআই ও এনটিভির আলোচনায় অর্থমন্ত্রী
সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে পদ্মা সেতু ও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক
নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী বাজেটে পদ্মা সেতু ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে সম্প্রসারণের প্রকল্পকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) এবং বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির যৌথ উদ্যোগে গত শনিবার রাতে আয়োজিত ‘কেমন বাজেট চাই’ অনুষ্ঠানে এসব পরিকল্পনার কথা জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় অর্থমন্ত্রী আরও জানান, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভূমি সমস্যার সমাধানে কিছু জমি চিহ্নিত করে সেগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
রাজধানীর হোটেল রূপসী বাংলার উইন্টার গার্ডেনে এফবিসিসিআই ও এনটিভি যৌথভাবে সপ্তমবারের মতো ‘কেমন বাজেট চাই’ আলোচনার আয়োজন করে, যা এনটিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এনটিভির চট্টগ্রাম ও নিউইয়র্ক স্টুডি থেকেও অতিথিরা এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
অর্থমন্ত্রী ছাড়া অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম ওসমান ফারুক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ও বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ।
আলোচনায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম আড়াই লাখ কোটি টাকার বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলে অভিহিত করে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় দুই লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবসম্মত হবে বলে মন্তব্য করেন৷
জি এম কাদের বলেন, আড়াই লাখ কোটি টাকার বাজেট বিশাল বাজেট। কিন্তু কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, বাজেটে যেসব আশার কথা বলা হচ্ছে, অর্জনগুলোও তার কাছাকাছি হয়েছে।
ওসমান ফারুক বলেন, বাজেটের আকার কোনো বড় বিষয় নয়, বাজেটের ফলাফলটাই হচ্ছে আসল বিষয়। উন্নয়নের চাহিদার ভিত্তিতেই বাজেট প্রণয়ন করতে হবে, সেখানে উচ্চাভিলাষ বলে কিছু নেই।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটের আকারের চেয়ে বড় চিন্তার বিষয় বাস্তবায়নের সক্ষমতা। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের ত্বরণ সৃষ্টিতে আগামী বাজেটে বিশেষ নজর দিতে হবে।
বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেশের তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার দিকনির্দেশনা থাকতে হবে আগামী বাজেটে।
বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাত: অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে, কিন্তু সেই তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। এর কারণ অনুসন্ধান করতে বলেছি আমি। উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে যে অব্যবস্থাপনা রয়েছে, সেটি দূর করতে হবে।’
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাথমিক জ্বালানির দিকে নজর দিতে হবে। অথচ মাটির িনচে কয়লা রেখে দিয়ে সরকার আমদানিনির্ভর কয়লার ওপর ভিত্তি করে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের বিদ্যমান সিস্টেম লস কমিয়ে আনার সুপারিশ করেন তিনি।
ওসমান ফারুক বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা যেভাবে সমাধান করা হয়েছে, অর্থনৈতিক দিক থেকে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের বিদ্যুতের সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ। দু-একটি কোম্পানির কাছে কুইক রেন্টালের বেশির ভাগ কাজ চলে গেছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে অর্থায়ন পরিষ্কার করা দরকার। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে আমরা দেখলাম, ১ শতাংশ সুদে ঋণসুবিধার পরিবর্তে এখন ১২ শতাংশ সুদে দেশীয় উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে এটির টোলহার কী হবে, সেটি এখনো আমরা জানি না।’
সুপারিশ: সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মতো দেশের প্রতিটি শিল্প এলাকায় ভ্যাট তল্লাশি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন শিল্পপ্রতিষ্ঠান জিপিএস ইস্পাতের পরিচালক আলমাস শিমুল। ভূমি সমস্যার সমাধানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রাইস কমিশন ও শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। কৃষিপণ্য সংরক্ষণে দেশে গুদামের সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা বাজেটে নারীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান। আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, নিউইয়র্কপ্রবাসী ও এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক নুরুন্নবী প্রমুখ৷
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, আসছে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য এক দিনের জন্যও বাড়বে না।