তবে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে যে বিষয়টি দরকার, তা হলো সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো। এ বিষয়টিতে এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
Published in Bonik Barta on Wednesday, 23 September 2015.
এডিবির পূর্বাভাস
অধরাই থাকছে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
গত অর্থবছরেও ৭ শতাংশের (৭ দশমিক ২) বেশি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। যদিও অর্জন হয় ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরেও সরকার ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করছে। তবে তা সম্ভব হবে না বলেই মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে দেশে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
নিয়মিত প্রকাশনার অংশ হিসেবে ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০১৫’ গতকাল প্রকাশ করে সংস্থাটি। তাতে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষিত ৬ দশমিক ৭ শতাংশের মধ্যেই থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন না হলেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চেয়ে তা বেশি হবে। এর কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। এটি বজায় থাকলে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি বাড়বে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগও। এতে প্রবৃদ্ধিও গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি হবে। তবে তা সরকার ঘোষিত ৭ শতাংশ নয়।
এডিবির এবারের প্রতিবেদনের থিম ‘এনাবলিং উইমেন, এমার্জিং এশিয়া’। ঢাকা কার্যালয়ে গতকাল প্রতিবেদনের প্রধান প্রধান দিক তুলে ধরেন সংস্থার প্রধান কান্ট্রি স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ পারভেজ ইমদাদ। তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রশংসনীয় দৃঢ়তা দেখিয়ে প্রতি বছর গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত পাঁচ বছরে এ হার ছিল গড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
অবকাঠামো সমস্যার পরও ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে পারভেজ ইমদাদ বলেন, ‘বাংলাদেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন বাড়বে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকলে বাড়বে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগও।
এদিকে বর্তমানে দেশের সব খাত যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হবে না বলে মনে করছে সরকার। জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামসুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা সবসময়ই একটু রক্ষণশীল অবস্থানে থাকে। ফলে তারা যে প্রক্ষেপণ করে, বাস্তবে তার চেয়ে কিছুটা বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে রফতানি খুব ভালো অবস্থানে আছে। রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিও ভালো। ইতিবাচক ধারায় রয়েছে কৃষি উৎপাদন। যদিও বন্যায় কৃষি উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে তা পুষিয়ে যাবে। সব মিলে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ বা তার চেয়ে কিছুটা বেশিই হবে।
চলতি অর্থবছরের রফতানি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে এডিবির প্রতিবেদনে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানিতে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। গত অর্থবছরে দেশে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এডিবি বলছে, মজুরি বৃদ্ধি, কর্মপরিবেশের উন্নয়ন, শ্রম অধিকার নিশ্চিতকরণ ও কারখানা ভবনের নিরাপত্তা বাংলাদেশের প্রতি বহির্বিশ্বের ক্রেতাদের আস্থা বাড়াবে। ফলে ইউরো অঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি বাড়বে।
রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিও গত অর্থবছরের চেয়ে বাড়বে বলে মনে করছে এডিবি। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হবে ৯ শতাংশ। আগের অর্থবছরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এডিবি ঢাকা অফিসের আবাসিক প্রতিনিধি কাজুহিকো হিগুচি। বাংলাদেশের ব্যক্তিখাত উন্নতি করছে বলে মন্তব্য করেন তিনিও। কাজুহিকো হিগুচি বলেন, পোশাক খাতের অবস্থা এখন অনেক ভালো। এগিয়ে যাচ্ছে পরিবহন, শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নও। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
বেশকিছু বিষয় বর্তমানে অনুকূলে রয়েছে বলে জানান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজমান। ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনীতিও ধীরে ধীরে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। এতে সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে রফতানি বাড়ার। পাশাপাশি বিদেশ গমনের হারও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে রেমিট্যান্স ভালো পাওয়া যাবে হয়তো। তবে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে যে বিষয়টি দরকার, তা হলো সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো। এ বিষয়টিতে এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকই এখনো শেষ হয়নি। তাই চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধির অবস্থা কেমন হবে, এখনই তা বলা কঠিন।
এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা বেড়ে হতে পারে ৩ দশমিক ২ ও শিল্প খাতে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। আর সেবা খাতে সংস্থাটি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে ৬ শতাংশ। গত অর্থবছর এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনশীল মুদ্রানীতি ও ফসলের ভালো ফলন মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। গতকালের প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, গত অর্থবছর গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪ থেকে কমে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছিল। চলতি অর্থবছর তা আরো কমে ৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
পারভেজ ইমদাদ বলেন, নতুন পে-স্কেলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়লেও তা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলবে না। কারণ অভ্যন্তরীণ চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনও বাড়বে। এ কারণে মূল্যস্ফীতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যেই থাকবে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমদানি খাতে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে মনে করছে এডিবি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২ শতাংশ।