Published in Bhorer Kagoj on Wednesday, 18 June 2014.
রোজার আগেই বাজার চড়া
পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে, ক্রেতাদের এক সঙ্গে বেশি পণ্য না কেনার পরামর্শ
টুটুল রহমান
সেই পুরোনো দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি। বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠক। ব্যবসায়ীদের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি। কিন্তু লাগাম ছাড়া নিত্যপণ্যের মুল্যবৃদ্ধির পাগলা ঘোড়া। বাজার নিয়ন্ত্রণের সবই কথার ফুলঝুড়ি। বদলাচ্ছে না কিছুই। সব প্রস্তুতির পরেও রমজান আসার আগেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। এই পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে। সবার মনে আশঙ্কা, রমজানে ঠিক থাকবে তো নিত্যপণ্যের বাজার?
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেকেই এক মাসের বাজার এক সঙ্গে করেন। এ কারণে একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি হয় বলেই রমজানে শুরুর দিকে বাজার কিছুটা চড়ে যায়। তবে কয়েক দিনের মাথায় আবার সেটা সহনীয় হয়ে আসে।
সাত দিন আগেও বেগুনের দাম ছিল ৪০ টাকা কেজি। পেঁয়াজ ২৮ টাকা। আর কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা। অথচ গতকাল মঙ্গলবার সেই বেগুন কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৩৮ টাকায়। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরেও চিনি ছোলা, বুটের ডালের দাম বেড়েছে। ভোজ্যতেলের দামও লিটারে বেড়েছে ১০ টাকা।
বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যে কোনো মূল্যে বাজার নিয়ন্ত্রণের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিংয়ের কাজ করবে ব্যবসীয়দের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। আগামী সপ্তাহে রমজানের বাজার নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রমজানের চাহিদা অনুযায়ী ছোলা, তেল, খেঁজুর, চিনি মজুদ শুরু করেছে। এমনকি ১১ জুন থেকে খোলা বাজারে ট্রাকে করে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রিও শুরু করেছে। টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে পণ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া শেষে হয়েছে। রমজান মাসে পণ্যের সরবরাহ ও নিত্যপণ্যের দর সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে এবার একটু আগেভাগেই কাজ শুরু করে দিয়েছে টিসিবি। এবারো তেল, চিনি, ডাল, ছোলা ও খেজুর আমদানি করছে সংস্থাটি।
টিসিবি জানায়, এ বছর ৩ হাজার টন তেল, দেড় হাজার টন ছোলা, ১৫০ টন খেজুর ও ২ থেকে ৩ হাজার টন মসুর ডাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চিনি, ডাল ও তেলের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও খেজুর ও ছোলা এখনো তাদের হাতে এসে পৌঁছেনি। তবে সংস্থাটি আশা করছে আগামী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পণ্য দুটি তাদের কাছে পৌঁছাবে। আর এই চালান এলে রমজানের জন্য সব পণ্যের মজুদ থাকবে টিসিবির কাছে। তানজানিয়া থেকে দেড় হাজার টন ছোলা আমদানি করা হচ্ছে, যা দু-একদিনের মধ্যে সংস্থাটির কাছে পৌঁছাবে। আর ইরাক কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৫০ টন খেজুর আমদানি করা হচ্ছে, যা আগামী মাসের ৮ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে হাতে পাবে টিসিবি।
রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজারে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুকনা মরিচ ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা, রসুন ৭০ থেকে ৮৫ টাকা, আদা ১৭০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ছোলার দাম ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, চিনি ৪৪ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮ টাকা, বুটের ডাল ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকা, খেসারির ডাল ৪৫ টাকা, মসুর ৭৫ থেকে ১১০ টাকা, মুগ ৯০ থেকে ১২০ টাকা, আর খোলা সয়াবিন তেল ১১৫ থেকে ১১৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস শবেবরাতের পর থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা আবদুল
কাদের জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে পণ্যের আমদানি ও মজুদের দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহে কোনো বাধা আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। আর সবচেয়ে বেশি দরকার হলো বাজার মনিটরিং। তিনি জানান, বাজার মনিটরিং জোরদার না হলে এবং পণ্যের পর্যাপ্ত জোগান দিতে না পারলে রমজান মাসে দাম অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, এবার আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। বাজার চড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে ক্রেতাদের কাছে আমাদের অনুরোধ তারা যেন এক সঙ্গে বেশি পণ্য কিনে মজুদ না করেন। এটা হলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়।
তিনি বলেন, গত ৫ বছর ধরে রমজানের শুরুর তিন দিন জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বাড়ে। কিন্তু কয়েক দিন পর থেকে কমতে থাকে। এবারো হয়তো এমনটা ঘটতে পারে, ক্রেতাদের বেশি পণ্য কেনার প্রবণতা থেকে। হেলাল উদ্দিন জানান, প্রতি বছরের মতো এবারো বাজার মনিটর করা হবে। আগামী সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে ব্যবসায়ীদের।