Published in Alokito Bangladesh on Sunday, 4 May 2014
বিশ্ববাজারে স্থিতিশীল পণ্যমূল্য প্রভাব নেই অভ্যন্তরীণ বাজারে
জাহিদুল ইসলাম
নিত্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার এক বছর ধরে স্থিতিশীল। এ সময়ে বেশকিছু পণ্যের দাম কমেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ১ দশমিক ১০ শতাংশ কম ছিল বলে দাবি করেছে বিশ্বব্যাংক। বছরের বাকি সময়েও বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য কমে আসবে বলে সর্বশেষ প্রকাশিত কমোডিটি মার্কেট আউটলুকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে দাম কমে আসার সুবিধা নিতে পারছেন না বাংলাদেশের ভোক্তারা। এক বছরে প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,সম্প্রতি টাকার বিনিময় হারের সুবিধাও পেয়েছেন বাংলাদেশের আমদানিকারকরা। ডলারের বিপরীতে দেড় বছরে টাকার মান বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। একসময় প্রতি ডলারের বিপরীতে ৮২ টাকা লাগলেও বর্তমানে পরিশোধ করতে হচ্ছে ৭৭ টাকা। ডলারে পণ্য আমদানি করতে আগের চেয়ে টাকা কম পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে এর সুফল খুচরা পর্যায়ে পণ্যের ক্রেতাদের না দিয়ে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন আমদানিকারকরা। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমার সুবিধা আমদানি পর্যায়ে পাওয়া যায়। তেল ও সারের দাম কমে আসায় এ খাতে সরকারের ভর্তুকি কমেছে। তবে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ক্রেতারা সুবিধা পাচ্ছেন না মুনাফালোভী প্রবণতার কারণে। খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাদের হাতে পণ্য আসার আগেই সুবিধা উঠিয়ে নেন বিভিন্ন পর্যায়ের বিক্রেতারা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন,আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে মুহূর্তের মধ্যেই দেশের বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তবে বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশে এর প্রভাব পড়তে অনেক সময় লাগে। আবার অনেক সময় বিশ্ববাজারের পুরো প্রভাব দেশের বাজারে পড়েও না;লাভের পুরো অংশ চলে যায় ব্যবসায়ীদের পকেটে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বছরের প্রথম প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য স্থীতিশীল ছিল। এ সময় বিদ্যুতের দাম বাড়ে মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ। একই সময়ে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে ধাতব স্থাপনা ও যন্ত্রপাতির দাম ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমে। সারের দাম কমে ৫ শতাংশ। ইউক্রেন-রাশিয়া বিরোধসহ ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন অনিশ্চয়তার মধ্যেও তেলের দাম এক ডলার কমে প্রতি ব্যারেল ১০৩ ডলারে দাঁড়ায়। ভুট্টা ও গমের দাম বাড়লেও এ সময় কমে চালের দাম।
বিশ্বব্যাংক বলছে,২০১৪ সালের পুরো সময়টা তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০৩ ডলারে স্থিতিশীল থাকবে। এতে আগের বছরের চেয়ে এর দাম কমবে ১ শতাংশ। এ সময় প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও স্থিতিশীল থাকবে। জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা কমে আসায় দামও কমে আসবে। ২০১৪ সালে কমবে কয়লার দামও।
চলতি বছর বিশ্বব্যাপী ফসলের উৎপাদন ভালো হবে বলে আশা করছে বিশ্বব্যাংক। এ ধারণা সত্য হলে খাদ্যশস্যের দাম কমবে প্রায় ১০ শতাংশ। ভোজ্য তেল, ডালসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামও সামান্য কমে আসবে। বিনিয়োগের বেশকিছু ক্ষেত্রে চাহিদা কমে আসবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে ধাতব অবকাঠামোর দাম কমবে প্রায় ৫ শতাংশ। তাছাড়া সারের দামও প্রায় ১১ শতাংশ কমে আসবে। উত্তর আমেরিকায় বেশ কয়েকটি কারখানায় সার উৎপাদন শুরু হওয়ায় পণ্যটির সরবরাহ বেড়ে যাবে। তবে তেলের দামে পরিবর্তনের কারণে সবই ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তেলের চাহিদা ও জোগানে সমন্বয়ের মধ্যেই নির্ভর করছে বাজারের স্থিতিশীলতা। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো প্রত্যাশিত হারে উৎপাদনে যেতে না পারলে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে আসবে। অন্যদিকে উপসাগরীয় অঞ্চল ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অস্থিতিশীলতায় তেলের সরবরাহ বিপর্যস্ত হলে ব্যারেলপ্রতি দাম ৫০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ অবস্থা হলে প্রতিটি পণ্যের দামই বাড়বে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে স্থিতিশীলতা থাকলেও দেশে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পায় ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ সময় খাবারের দাম বাড়ে ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বিশ্ববাজারে স্থিতিশীলতার পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী অবস্থানে যাওয়ার পরও পণ্যের দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।