প্রায় এক দশক আলোচনা চালাবার পরে ২৫ নভেম্বর ২০১৩ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম বা টিকফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। টিকফার কার্যক্রম শুরু হয় চলতি বছর ৩০ জানুয়ারি থেকে। ঢাকায় এর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ৮ এপ্রিল। টিকফা চুক্তি বিষয়ে বিশিষ্টজনরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
ড. মোস্তফা আবিদ খান, পরিচালক
বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট
টিকফা চুক্তি বাংলাদেশের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এর মাধ্যম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো আলোচনার একটি প্লাটফর্ম তৈরি হলো। এটিই টিকফা চুক্তির সবচেয়ে বড় সার্থকতা। অনেক কিছুই কেবল কাগজে সইয়ের মাধ্যমে সমাধান হবে না, যা মুখোমুখি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করাও এক্ষেত্রে উঠে আসে। এর আগে জিএসপি নিয়ে আলোচনার কোনো প্লাটফর্ম আমাদের ছিল না।
আবদুস সালাম মুর্শেদী
বিজেএমইএ’র সাবেক সভাপতি
দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম টিকফা। আমরা টিকফা চুক্তিকে স্বাগত জানাই। আমরা টিকফার প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে প্রথমেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা আদায়ের জন্য মার্কিন সরকারের কাছে আহ্বান করব। আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের বিষয়ে জিএসপির ক্ষেত্রে মার্কিন সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা উঠিয়ে নিতেও অনুরোধ করব। কারণ জিএসপি সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে আমরা মার্কিন সরকারের বেঁধে দেয়া অধিকাংশ শর্তই বাস্তবায়ন করেছি। আমরা যদি আমাদের অগ্রগতিগুলো মার্কিন সরকারের কাছে ঠিকমতো তুলে ধরতে পারি নিঃসন্দেহে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা লাভ করব। তাছাড়া তৈরি পোশাক খাতে আমরা নারীদের জন্য শ্রমবাজার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি, যা আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।
ড. মুস্তাফিজুর রহমান
নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ (সিপিডি)
মার্কিন সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো আলোচনার ক্ষেত্রে টিকফা হলো একটি আনুষ্ঠানিক প্লাটফর্ম। এ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ বিক্রয়ের জন্য অনুরোধ করতে পারি। বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনা করে মার্কিন বাজারে আমাদের পণ্য রফতানির সুযোগ পেলে সত্যিকার অর্থে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এর আগে মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ বিক্রয়ের বিষয়টি উত্থাপিত হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। বর্তমানে বাংলাদেশ টিকফা চুক্তি সম্পাদন করেছে। তাই আমাদের বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের জন্য চেষ্ট চালাতে হবে।
ড. আহসান এইচ মনসুর
নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)
টিকফা চুক্তি থেকে দ্রুত কিছু আশা করা ঠিক না। দু’দেশের বাণিজ্যের মধ্যে এ চুক্তি অর্জন একটি সাধারণ বিষয়। তবে এটি দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে একটি প্লাটফর্ম এবং এর মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ যেন জিএসপি সুবিধা পায় তার জোর দাবি করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র যে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে, তাও যেন তুলে নেয় সেদিকেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। তাছাড়া অনেক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়ও এর মাধ্যমে আলোচিত হতে পারে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে অনেক দেশই মার্কিন সরকারের সঙ্গে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
এমএ তসলিম, অধ্যাপক
অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে অনেক বাধা রয়েছে। টিকফা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো এ বাধাগুলো দূর করা। জিএসপি সুবিধা অর্জনের জন্য মার্কিন সরকার যে শর্তগুলো বাংলাদেশকে বেঁধে দিয়েছে তা পূরণে বাংলাদেশ কতটুকু সফলতা অর্জন করেছে, তা আমাদের ঠিকমতো তুলে ধরতে হবে। আমরা যদি শর্তগুলো পালন করতে পারি তাহলেই জিএসবি সুবিধা অর্জনে অনেক দূর এগিয়ে যাব। বর্তমানে আধুনিক সুবিধাসহ শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক পোশাক কারখানা গড়ে উঠছে সেগুলো ঠিকমতো মার্কিন প্রতিনিধিদের দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে টিকফা চুক্তি নিঃসন্দেহে একটি প্লাটফর্ম।
নাজমা আখতার, শ্রমিক নেতা
চুক্তি স্বাক্ষরের প্রাথমিক উদ্দেশ্যই থাকে সুবিধা অর্জন করা। তাই টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রাথমিক উদ্দেশ্যই হলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের সুবিধা অর্জন করা। আমরা চাই, এ চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তথা আপামর শ্রমিকদের স্বার্থ যেন সংরক্ষিত হয়।