Published in Prothom Alo on Tuesday, 30 September 2014.
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন: ১০০০ টাকা দুই চুলা, ৮৫০ টাকা এক চুলা, ৩৩% বাড়ছে সিএনজির দাম
সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়ছে
বিশেষ প্রতিনিধি
সব ধরনের গ্যাসের দাম আবারও বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ছে আবাসিক খাতের গ্যাসের দাম। আবাসিক খাতে দুই চুলার ক্ষেত্রে দাম বাড়বে সর্বোচ্চ ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে।
দাম বাড়ানোর এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য জানিয়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত প্রস্তাব ইতিমধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় পেট্রোবাংলায় পাঠিয়েছে। এখন তারা ওই প্রস্তাব এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে জমা দেবে। এরপর কমিশন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেবে।
সূত্র জানায়, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম রেগুলেটরি কমিশন বাড়ানোর ঘোষণা দেবে না। এটা সরকার নির্বাহী আদেশে বাড়াবে। এ জন্য কেবল কমিশনের মতামত নেবে। তবে তা আগে জানানো হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী, আবাসিক খাতে দুই চুলার গ্যাসের জন্য বর্তমান দাম ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। বৃদ্ধির হার ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ। আর এক চুলার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বর্তমান দাম ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হবে। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ার হার ১১২ দশমিক ৫০ শূন্য শতাংশ।
আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে যাঁরা মিটার ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম বর্তমানে ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে এটা ২৩৫ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের দাম এককালীন বড় আকারে বাড়ার ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের মধ্যে যাঁরা গ্যাস ব্যবহার করেন, তাঁদের ওপর চাপ বাড়বে। নির্ধারিত আয়ের মানুষের ব্যয়ও বাড়বে। তবে দাম বাড়ার ফলে সরকারের যে বাড়তি আয় হবে, সেটা যদি গ্যাস উত্তোলন, বিতরণ এবং যাঁরা গ্যাস পাচ্ছেন না, তাঁদের দেওয়ার জন্য ব্যয় করা হয়, তাহলে দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা মেনে নেওয়া যায়। এ ছাড়া চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য আনতে হলে একটা মূল্য সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে, সেটা অস্বীকার করা যায় না।
আবাসিক খাতের পরেই গ্যাসের সবচেয়ে বেশি দাম বাড়বে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য মালিকদের নিজস্ব উৎপাদিত) উৎপাদনে। বর্তমানে এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে তা ২৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বৃদ্ধির হার ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
সিএনজির দাম বাড়বে ৩৩ শতাংশ। বর্তমানে সিএনজির প্রতি এক হাজার ঘনফুটের দাম ৮৪৯ টাকা ৫০ পয়সা। নতুন প্রস্তাবে তা করা হচ্ছে এক হাজার ১৩২ টাকা ৬৭ পয়সা।
শিল্পে বর্তমানে প্রতি এক হাজার ঘনফুটের দাম ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা। এটা বেড়ে হচ্ছে ২২০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বর্তমান দাম ২৬৮ টাকা ৯ পয়সা, এটা হচ্ছে ৩৫০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সিএনজি খাতে গ্যাসের দাম এখন ৬৫১ টাকা ২৯ পয়সা। এটা বেড়ে হচ্ছে ৯০৫ টাকা ৯২ পয়সা। বৃদ্ধির হার ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ। চা-বাগানে ব্যবহৃত গ্যাসের বর্তমান দাম ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা। এটা করা হচ্ছে ২০০ টাকা। বৃদ্ধির হার ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে গ্যাস দেওয়া হয় বর্তমানে সে রকম প্রতি এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭৯ দশমিক ৮২ টাকা। এটা হচ্ছে ৮৪ টাকা, বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ।
সার উৎপাদনে বর্তমানে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭২ দশমিক ৯২ টাকা। এটা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৮০ টাকা। বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার সূত্র জানায়, এবারই প্রথম দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্পদ হিসেবে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ২৫ টাকা ধার্য করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছেন। এর ফলে বাপেক্সসহ বিভিন্ন গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি যে গ্যাস উত্তোলন করে, তার ওপর এই দাম ধার্য হবে। এখন পর্যন্ত উত্তোলনকারী কোম্পানিকে উত্তোলিত গ্যাসের জন্য কোনো দাম দিতে হয় না। এই অর্থ রাষ্ট্র পাবে।
এর আগে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে সরকার সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল। আর গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের ১ আগস্ট।