Published in Samakal on Tuesday, 9 September 2014.
আখাউড়া-লাকসাম ডাবল রেললাইন হচ্ছে
জাফর আহমেদ
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ নির্বিঘ্ন করতে আরও একটি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ নগরী দুটির মধ্যে রেল যোগাযোগের পুরোটাই ডাবল করতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ জন্য আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডাবল রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প আজ অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পটির জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেবে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যেই এডিবির সঙ্গে ২ শতাংশ সুদে প্রায় ৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের একটি ঋণ চুক্তি হয়েছে। শিগগির ইআইবির সঙ্গে সরকার আরও ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের চুক্তি করবে।
ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে পুরোপুরি ডাবল রেললাইন করতে দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ীসহ অর্থনীতিবিদরা বলে আসছেন। এই দুই গুরুত্বপুর্ণ নগরীর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলে পণ্য পরিবহনসহ যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সহজ হবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আরও দ্রুত সময়ে ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে পণ্য পরিবহন করা যাবে। অন্যদিকে রফতানি পণ্যও দ্রুত সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো যাবে। এতে পণ্য আমদানি-রফতানির ব্যয়ও কমবে। এ কারণে এ প্রকল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে জানান, এটা অনেক দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে একটি আকাঙ্ক্ষিত প্রকল্প এবং রফতানি বাণিজ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে রফতানি পণ্য কম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁৗছানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ট্রানজিট সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয়ের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি ব্যাপকভাবে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে মিরসরাইয়ের চিনকী আস্তানা পর্যন্তস্ন নিরবচ্ছিন্ন ডাবল রেললাইন রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরোটা ডাবল রেললাইন করতে বর্তমানে চিনকী আস্তানা থেকে লাকসাম সেকশন এবং টঙ্গী থেকে ভৈরব বাজার সেকশনে ডাবল রেললাইন নির্মাণে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে ওই প্রকল্পটি শেষ করার কথা রয়েছে।
এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রামকে নিরবচ্ছিন্ন ডাবল রেললাইনে উন্নীত করতে দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। এবার আখাউড়া থেকে লাকসাম সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণ করা হলে ঢাকা-চট্টগ্রামের পুরোটাই ডাবল লাইনে উন্নীত হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে একই সঙ্গে আরও ৭২ কিলোমিটার রেললাইনের পুনর্বাসনও করা হবে। প্রকল্পটি আজ অনুমোদন দেওয়া হলে চলতি অর্থবছর থেকেই এর বাস্তবায়ন কাজ শুরু করে ২০২০ সালের মধ্যেই শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী রেল যোগাযোগের এ রুট ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে ও উপ-আঞ্চলিক করিডোরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশের এ অংশ দিয়ে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটানসহ পুরো উপাঞ্চলে ট্রানজিট ভিত্তিতে পণ্য পরিবহনের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পণ্য পরিবহনের অবাধ সুযোগ সৃষ্টি হলে ব্যাপকভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী ভারত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে কম খরচে পণ্য পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ভারতের অংশ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। আখাউড়া থেকে ত্রিপুরা সীমান্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের অংশের কাজ চলমান। অন্যদিকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল দিয়ে ভারতীয় পণ্য বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ভারতে ট্রানজিটের সুবিধাও বাংলাদেশ নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি ডাবল লাইন হলে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক), সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল ফর কো-অপারেশন (সার্ক) এবং দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) বৃহৎ আন্তর্জাতিক করিডোর হিসেবে কাজ করবে। প্রস্তাবিত এ করিডোর হিসেবে ওই অঞ্চলকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বিশাল লাভবান হবে। জানা গেছে, প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ২৪ জুলাই এডিবির সঙ্গে ৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ৯৩০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি হয়েছে। এ ঋণের মধ্যে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার সহজ শর্তে এবং বাকি ৪০ কোটি ডলার কিছুটা চড়া সুদের ঋণ রয়েছে। গড়ে এ ঋণের বিপরীতে মাত্র ২ শতাংশ সুদ দিতে হবে। বাকি ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণ চুক্তির জন্য ইআইবির সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে। শিগগির এ সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ ছাড়াও আরও অতিরিক্ত ৭২ কিলোমিটার রেললাইনের আধুনিকায়ন করা হবে। এ ছাড়াও ১২টি স্টেশনের সিগন্যালিং সিস্টেম কম্পিউটার বেইজড বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিচালনায় আধুনিকায়ন করা হবে।