Published in The Daily Manobkantho on Thursday, 4 December 2014.
গার্মেন্টস মালিকদের দৃষ্টি এখন ইথিওপিয়া
উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত রফতানির সুবিধা গ্রহণ : অনুমোদন দিতে হবে সতর্কতার সঙ্গে
আসাদ জোবায়ের
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে উচ্চহারে শুল্ক দিতে হলেও ইথিওপিয়াকে কিছুই দিতে হয় না। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে দেশটিতে বিনিয়োগ করার কথা ভাবছেন বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিকরা। দেশটি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছে। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিডিএল গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সেখানে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যরাও ইতিবাচকভাবে দেখছে বিষয়টি। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে অনুমোদন দিতে হবে। যাতে ডলার পাচার না হয়ে যায়।
জানা গেছে, ইথিওপিয়ার সরকার ও ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে বিজিএমইএসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ফোরামে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এ সপ্তাহেই নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ড. জেনেট জেউইড বাংলাদেশ সফর করেছেন। গত সোমবার বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে সভা করেছে। এ সভায় দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা গেলে কি কি সুবিধা পাবেন তা তারা তুলে ধরেন। দেশটিতে জমির মূল্য অনেক কম, অবকাঠামোগত সুবিধা, সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনা, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত রফতানির সুবিধার কথা প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে দেশটির গড় জিডিপি ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ, গড় রফতানি প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং জিডিপিতে উৎপাদন খাতের অংশ ১৩ শতাংশ বলেও এ সময় উল্লেখ করা হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশটি প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। বিশ্বের বড় বড় ক্রেতা এইচএন্ডএম, টেসকো, জর্জ, কিক, অ্যালবে, টাসুবো সেখান থেকে পোশাক কিনছে বলেও জানানো হয়।
সরকারের প্রাধান্যপ্রাপ্ত খাত, বিপুল পরিমাণ জমি, বিশ্বের চতুর্থ তুলা উৎপাদনকারী দেশ, পানি বিদ্যুতের সহজলভ্যতা, স্বল্পমজুরির শ্রমিকসহ বেশকিছু সুবিধার কথাও বলা হয়েছে। সর্বোচ্চ তিন সেন্টে এক বর্গফুট জমি ভাড়া পাওয়া যায় বলেও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত, চীন, রাশিয়া, তুরস্কসহ প্রায় ১৬টি দেশে শূন্য শুল্কে পোশাক রফতানি করা যায়। বিনিয়োগকারীদের জন্য মেশিনারি আমদানিতে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা, মূলধনের ১৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ পাঁচ বছর শুল্কমুক্ত আমদানি, আয়করমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনা, দুই থেকে আট বছর পর্যন্ত ট্যাক্স হলিডে, স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধাসহ বেশকিছু সুবিধা রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম এ প্রসঙ্গে মানবকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে বিডিএল গ্রুপ ইথিওপিয়ায় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরো দুয়েকটি কারখানাও সেখানে বিনিয়োগের কথা ভাবছে। তিনি বলেন, ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল একটা প্রস্তাবনা দিয়েছে। যা আমাদের কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সাধারণত দেশ থেকে ডলার নিয়ে গিয়ে দেশের বাইরে বিনিয়োগের অনুমতি নেই। তবে উদ্যোক্তারা দেশের বাইরে অন্য কোনো উৎস থেকে ডলার বিনিয়োগ করতে পারে। বিডিএল গ্রুপ বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৯৬ লাখ ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন চেয়েছে। এ পরিমাণ ডলার বিনিয়োগ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে থাকা ইউনিটগুলোর ওপর যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে তা নিশ্চিত করা সাপেক্ষে এ বিনিয়োগ অনুদান দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়নি বলেও তিনি জানান।
সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিডিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ রহীম ফিরোজ বলেন, আমরা সফর করে দেখেছি দেশটিতে বিনিয়োগ করা যায়। সেখানকার অবকাঠামোগত সুবিধা, সরকারের প্রণোদনা ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের বিষয়টি আমরা বিবেচনায় নিয়েছি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমার মনে হয় না বড় ধরনের স্থানান্তরের ঘটনা ঘটবে। তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ার মতো বিদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কিছুটা নমনীয় হওয়ার সময় এসেছে।
এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বিনিয়োগের নামে ডলার পাচার না হয়ে যায়। বিদেশের সেই কারখানাগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হবে কি-না তাও অনুমোদনের সময় বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।