Published in Alokito Bangladesh on Tuesday, 10 June 2014.
কাগজেই সীমাবদ্ধ রইল পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা
জাহিদুল ইসলাম
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা বাদ দিয়েই ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যে মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বড় লক্ষ্য নিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছিল এ পরিকল্পনা। সঞ্চয়, বিনিয়োগ বাড়ানো এবং মূল্যস্ফীতি ও আয়বৈষম্য কমিয়ে আনার পরিকল্পনা ছিল। আগামী অর্থবছরে এ পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। চার বছরে অনেক ক্ষেত্রেই অর্জন লক্ষ্যমাত্রার নিচে। বাজেটে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনাও নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থাৎ কাগজেই সীমাবদ্ধ রইল এ পরিকল্পনা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সঞ্চয় ৩২ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত করে বিনিয়োগ ৩২ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব লক্ষ্যমাত্রার ছিটেফোঁটাও নেই।
প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এ লক্ষ্য অর্জনে আবার প্রতিকূল আবহাওয়া, বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মতো শর্ত জুড়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাস্তবতার নিরিখে এসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থার দাবি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দলিল অবাস্তব। বিনিয়োগ না হওয়ায় কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হয়েছে। বৈষম্য কমানো, স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করার মতো অনেক খাতেও প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা বড় স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করেছি। কিছু ক্ষেত্রে অর্জনও যথেষ্ট। অনেক সূচকে অর্জন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।
প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১২ শতাংশ হতে পারে_ যদিও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলে আসছে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে এসে ঠেকবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঞ্চয় ও বিনিয়োগে মন্দার কারণে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। আগামী অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়ের হার ৩০ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। আর ২০১৫ সালের মধ্যে এর হার উপনীত হওয়ার কথা ছিল ৩২ দশমিক ১ শতাংশে। তবে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কাছাকাছিও নেই।
তাদের মতে, অবকাঠামো খাতে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করতে ২০১৫ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। ঢাকা মহানগরীতে নির্মাণ করার কথা ছিল ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এঙ্প্রেসওয়ে। এসব প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার ৪৫৭ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা ছিল। তবে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর জিডিপির ২৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে। সরকারি বিনিয়োগ ৭ দশমিক ৩০ শতাংশে উন্নীত হলেও বেসরকারি খাতে তা ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশে নেমে এসেছে। গত অর্থবছর বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল ২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ২০১১-১২ অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল সাড়ে ২২ শতাংশ।
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় পাঁচ বছরে ১৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এর মধ্যে সরকারের তহবিল থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা আসার কথা ছিল। আর বেসরকারি খাত থেকে আসার কথা ছিল ১০ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশি সহায়তা আসার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী কোনো খাতেই বিনিয়োগ হয়নি গত অর্থবছর। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ কয়েকটি ভালো পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সঞ্চয় ও বিনিয়োগের অভাবে এসব পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সব সূচক অকার্যকর হয়ে পড়েছে।