Published in Jugantor on Wednesday, 10 June 2015.
অবকাঠামো উন্নয়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
যুগান্তর রিপোর্ট
বাংলাদেশের সঙ্গে সড়কপথে ভারত, নেপাল ও ভুটানের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর আগে অবকাঠামো উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, দেশে বিদ্যমান রাস্তাঘাটে নির্বিঘ্নে নিজস্ব যান চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বাকি তিন দেশের যান চলাচলের জন্য উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। তাদের মতে, এ চুক্তির ফলে ভারত বেশি লাভবান হচ্ছে। ভারতের ভারি যান উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে চলাচল করবে। এসব যান চলাচলের উপযুক্ত সড়ক নির্মাণে বড় বিনিয়োগের দিকে যেতে হবে। এ জন্য দেশগুলোর মধ্যে সমান্তরাল ও পরিপূরক অংশীদারিত্ব মনোভাব থাকতে হবে।
সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান চলাচলসংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চার দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ওই চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। তবে এ চুক্তিতে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হবে বা বাংলাদেশের সক্ষমতা কতটুকু রয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
এ চুক্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাখাওয়াত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে কতসংখ্যক গাড়ি চলবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে ভারত নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘদিন ধরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা বাড়ানোর যে চেষ্টা করে আসছে তাতে সফল হতে যাচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতেই মূলত বেশিরভাগ যান চলাচল করবে তা পরিষ্কার। এতে আর্থিক লাভ কী হবে তা আমরা এখনও জানি না। এটা সরকারকে হিসাব করে বলতে হবে।
নিরাপত্তাঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। এ অবস্থায় এ চুক্তি করতে গেলে যথেষ্ঠ নিরাপত্তাঝুঁকি থাকবে। কোনো ঘটনা ঘটলে কীভাবে তা সামাল দেয়া হবে তা জানি না। তিনি আরও বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। সংসদে এটি নিয়ে আলোচনা হয়নি। তাই এ চুক্তিতে কী লাভ বা লোকসান হবে তা জনগণের কাছে পরিষ্কার নয়।
তবে এ চুক্তির ফলে চার দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও বাড়বে বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এ চুক্তি অত্যন্ত ভালো জিনিস। আমরা চাই চার দেশে যাতায়াত সহজ হোক। যাতে এক দেশের মানুষ আরেক দেশে সহজেই যেতে পারে। এতে চার দেশের মধ্যে মানুষের যাতায়াত বাড়বে। যাতায়াত বাড়লে সম্পর্ক আরও সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে। এ ছাড়া যে চারটি দেশের মধ্যে চুক্তি হতে যাচ্ছে সে দেশগুলোর মধ্যে এমন কোনো সমস্যা নেই যা সমাধানের অযোগ্য। চার দেশের গাড়ি চলাচলের জন্য বাংলাদেশের অবকাঠামো উপযুক্ত নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, নেপাল ও ভুটানে হয়তো অল্প কিছুসংখ্যক যান চলাচল করবে। কিন্তু ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে অনেক বেশিসংখ্যক গাড়ি যাতায়াত করবে। ওই সব গাড়ি চলাচলে রাস্তাঘাটসহ যে অবকাঠামো সুবিধা থাকা দরকার তা নেই। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঢাকা-সিলেট রুটে দেশীয় যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে তার জন্যই চার লেন দরকার। বর্তমানে ওই রুটে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। চার দেশের গাড়ি চলাচলের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার বলেও মনে করেন তিনি।
একই মত দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। তার মতে, পরিপূর্ণ ট্রানজিটের কার্যকারিতায় যেতে হলে জরুরি ভিত্তিতে অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ থাকতে হবে। যেহেতু আমাদের রাস্তাঘাট ভালো নয়, সেটি আগে ঠিক করতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের পণ্যযানের তুলনায় ভারতীয় পণ্যযানের লোডিং ক্ষমতা অনেক বেশি। অতি ভারযুক্ত যানবাহন চলাচল উপযোগী ও ধারণক্ষমতার রাস্তা আগে তৈরি করা দরকার। এ ক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগের দিকে যেতে হবে। এ জন্য দেশগুলোর মধ্যে সমান্তরাল ও পরিপূরক অংশীদারিত্ব মনোভাব থাকতে হবে।