Published in The New Nation on Wednesday, 06 January 2016
8 pc cut in jet fuel price likely
Anisul Islam Noor
The government has planned to cut the price of A-1 jet fuel further, known as aviation fuel, by about eight percent. But the prices of other petroleum products will remain unchanged.
Though the oil prices fell drastically in the international market, there was little impact thereof in Bangladesh, said Consumers Association of Bangladesh (CAB).
Business quarters increased their demand for oil cut as per ratio, as there is no sign of any increase in the near future, said Professor Shamsul Alam, adviser of CAB.
The domestic market is always connected to the international one. Whenever oil prices rise in the international market, it is raised here instantly. But when price falls, it has no effect here. Since oil prices have fallen by one-third in the international market. Why price should not be decreased in Bangladesh? Questioned Shamsul Alam.
Business men of the country say that a cut in oil prices is essential for the sake of economic growth, Economists and experts say if oil prices are reduced, inflation will come down too. Investment and production will increase. This will be fruitful for economic growth.
Centre for Policy Dialogue (CPD) says if the price of fuel oil is reduced by 10 percent on average, GDP growth will increase by 0.3 percent. CPD has also called for a reduction in fuel prices.
Contrarily, the Finance Minister has said, the government did not reduce prices, because it wanted to compensate the Bangladesh Petroleum Corporation’s losses.
This is for the third time the BPC has slashed the A-1 jet fuel price in 2015. The BPC last reduced the jet fuel price in August 18, 2015.
Brent crude, the benchmark in oil prices for international market, fell to an 11-year low around US$ 35 per barrel recently from maximum $ 120 per barrel.
“It is good to see that the government has reduced the jet fuel prices,” Chief Operating Officer of Regent Airways Ashish Rai Choudhury said.
But the extent of the price cut is not sufficient, he said, adding that cut should have been extensive further to ensure competitiveness of local airliners with foreign ones.
When contacted, a senior official concerned said, the government has no immediate plan to reduce the prices of other petroleum products in domestic market.
Association of Travel Agents of Bangladesh (ATAB) Secretary General Aslam Khan also welcomed the price cut in jet fuel.
“We are expecting that all airliners operating domestically and internationally from the country will reduce airfares in line with the price cut,” he said. Consumers would also be happy to travel at cheaper airfares, said Mr Khan.
The country buys around 350,000 tonnes A-1 jet fuel every year from Kuwait Petroleum Corporation (KPC) and Petco Trading Labuan Company Ltd, the trading arm of Malaysia’s Petronas.
Published in আলোকিত বাংলাদেশ on Tuesday, 05 January 2016
জ্বালানি তেলের দাম কমানো হোক
বিশ্ববাজারে তেলের দাম ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হওয়ার পরও দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ অতীতের দৃষ্টান্ত হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার সমন্বয়ের যুক্তি দেখিয়ে দাম বাড়িয়েছে। একই যুক্তিতে এখন জ্বালানি তেলের দাম কমানো সরকারের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সে ধরনের প্রত্যাশিত কোনো সাড়া জনগণ ও উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা এখন পর্যন্ত পাননি। উল্লেখ্য, সরকার সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে। সে সময় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ছিল ৯৭ ডলার আর এখন তা ৩৬ ডলার। এর আগে বর্তমান সরকার ২০১১ সালে একই বছর চারবার, পরের বছরের শুরুতে আরেকবার তেলের দাম বাড়ায়। ফলে জনজীবন ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়। তখন দাম বাড়ানোর এ প্রবণতায় সরকারের নানা যুক্তি থাকলেও এখন তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে হ্রাস পেলে কেন দাম কমানো হচ্ছে না, তার কোনো সদুত্তর নেই।
তেলের দাম কমানোর দাবি ও যৌক্তিকতা দুইটিই বিদ্যমান। উৎপাদন ব্যয় কমাতে জ্বালানি তেলের দামের সমন্বয় চান বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। অর্থনীতিবিদরাও রীতিমতো অঙ্ক কষে দেখাচ্ছেন, জ্বালানি তেলের দাম কমালে অর্থনীতির কতটা উপকার হবে। সাধারণ ভোক্তারাও চান তেলের দাম কমুক, তাতে প্রতিদিনকার পরিবহন ব্যয় খানিকটা কমবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, দেশে জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ১০ শতাংশ কমানো হলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে।
স্মর্তব্য, আশপাশের সব দেশই পরিবর্তিত দামের পরিপ্রেক্ষিতে তেলের দাম কমিয়েছে। আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নিম্নপর্যায়ে থাকায় অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে এর সুবিধা নেয়া উচিত। বিষয় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তেলের দাম কমলে মূল্যস্ফীতি কমবে। ফলে একদিকে যেমন ভোক্তা চাহিদা বাড়বে, অন্যদিকে সুদের হার কমবে। এতে উৎপাদন ও বিনিয়োগ বাড়বে। বাড়বে প্রবৃদ্ধি। তাই অর্থনীতি ও জনস্বস্তির কারণেই জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে যৌক্তিক।
Published in ভোরের ডাক on Tuesday, 05 January 2016
ব্যবসা অনেক হয়েছে
এবার তেলের দাম কমান
বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নৈরাজ্য চলছে। বিশ্ববাজারে অব্যাহতভাবে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে তা কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বিগত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। পাঁচ বছর আগেও অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি প্রায় দেড় শ’ ডলার ছিল, যা বর্তমানে নামতে নামতে ৩৬ ডলারে নেমে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে তেলের দাম সেই বাড়তি বাজারের সময় যা নির্ধারণ করা হয়েছিল, এখনো তাই আছে। অথচ জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হলে, প্রবৃদ্ধি বাড়বে, মূল্যস্ফীতি কমবে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন, বিশেষ করে গার্মেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা। খুব সঙ্গত কারণে বিভিন্ন মহল থেকে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করায় দাবি উঠলেও অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত ফের বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম এখুনি সমন্বয় করা হবে না। এ ব্যাপারে একটা নীতিমালা তৈরি করে তারপর জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে।
বর্তমান বিশ্বে জ্বালানি তেল সভ্যতার একটা অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। এর সাথে যেমন পরিবহন খাত জড়িত আছে, তেমনি কৃষি খাতে এর অবদান ব্যাপক, পাশাপাশি শিল্প উৎপাদন, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রে জ্বালানি তেলের ভূমিকা আছে। এ জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার জ্বালানি তেল খাত রাষ্ট্রীয়করণ করে এই খাতে ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যা দীর্ঘদিন চলে আসছিল। কিন্তু মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হওয়ার আর সব খাতের মতো জ্বালানি তেল খাতও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে রেখেই মূল্য বাজারব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। যার আলোকে ৯০ দশকে ইরাক সংকট শুরু হলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যায়। তখন বাংলাদেশেও তেলের দাম কমিয়ে দেয়া হয়। এক লিটার পেট্রোল ২৬ টাকা স্থলে রাতারাতি ১৩ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু ইরাক সংকট কেটে গেলে আস্তে আস্তে তেলের দাম বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে বিশ্ববাজারে অশোধিত তেল ব্যারলপ্রতি প্রায় দেড় শ’ ডলারে উঠে যায়। এ সময় সরকারগুলো তেলের মূল্যের ক্ষেত্রের বঙ্গবন্ধুর নীতিতে ফিরে যায়। জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিয়ে সরকারগুলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নীতি অনুসরণ করে, ফলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) অব্যাহতভাবে লোকসান দিতে থাকে। বিপিসি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে ভর্তুকি দিতে থাকে। ফলে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। বিপিসির দেনা বাড়তে বাড়তে পাঁচ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এ রকম প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসে। নানা কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি স্টেট বা আইএস সংকট শুরু হলে তেলের দাম একদম পড়ে যায়। কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে গেলেও বিপিসি আগে যে লেকসান দিয়েছিল, তা পুষিয়ে নেয়ার কথা বলে দেশে তেলের দাম কমানো হয় না। সর্বশেষ সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, বিপিসির লোকসানের পাঁচ হাজার কোটি টাকা উসুলের পরও বিপিসি লাভ করেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এটা বিপিসি করেই যাচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নীতিবাচক আলোচনা চলছে অনেক দিন হলো। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, বেসরকারিভাবে তেল আমদানি করে তারা যাতে শিল্পে ব্যবহার করতে পারে সেই অনুমতি দেয়ার জন্য। সিপিডি এ নিয়ে তাদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাবে।
জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় নিয়ে খোদ সরকারের মধ্যে দ্বিমত দেখা দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত বলেছেন, সরকার সচেতনভাবেই এত দিন জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করেনি, সরকারের মনোভাব ছিল বিপিসির লোকসান সমন্বয় করা, এখন বিপিসির লোকসান পুরোটা সমন্বয় হয়ে গেছে। তবে এখুনি তেলের দাম কমানো হবে না, এ ব্যাপারে একটা নীতিমালা করে তারপর সমন্বয় করা হবে।’ অন্য দিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ মিডিয়াকে বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে, এটা আমার মন্ত্রণালয়ের বিষয় না হলেও ব্যবসায়ীদের এই দাবি নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা বলব। সিপিডির গবেষণা মতে জ্বালানি তেলের দাম মাত্র ১০ ভাগ কমানো হলে জিডিপি বাড়বে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ, তৈরি পোশাক রফতানি বাড়বে ০ দশমিক ৪ শতাংশ, ভোক্তার চাহিদা বাড়বে ০ দশমিক ৬ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি কমবে, ০ দশমিক ২ শতাংশ, পাশাপাশি সরকারের সঞ্চয় কমবে ০ দশমিক ৪ শতাংশ। সরকার বড়লোক হলে দেশ বড়লোক হয় এটা ঠিক; কিন্তু এখন আমরা বলব তেল নিয়ে সরকারের অনেক ব্যবসা হয়েছে আর নয় এখুনি তেলের দাম সমন্বয় করা হোক।
Published in বণিক বার্তা on Tuesday, 05 January 2016
তেলের দাম
প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিন
সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় অন্য অনেক বিষয়ে পূর্বাভাসের সঙ্গে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছর রাজস্ব ঘাটতি হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতি ও আহরণ প্রবণতার ভিত্তিতে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের দুর্বল চিত্রসহ অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে তারা কথা বলেছেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হলো, জ্বালানি তেলের দাম কমলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে। সংস্থাটি হিসাব দিয়ে বলেছে, জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ১০ শতাংশ কমানো হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে। তৈরি পোশাকের রফতানি বাড়বে দশমিক ৪ শতাংশ। ভোক্তা চাহিদা বাড়বে দশমিক ৬ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি কমবে দশমিক ২ শতাংশ। তবে সরকারের সঞ্চয় কমবে দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির পর্যবেক্ষণকে গুরুত্বের সঙ্গেই দেখতে চাইবে সবাই।
সিপিডি জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম ১০ শতাংশ কমানো হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে, মূল্যস্ফীতি কমবে দশমিক ২ শতাংশ ও পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি দশমিক ৪ শতাংশ হবে। তবে সরকারের সঞ্চয় দশমিক ৪ শতাংশ কমবে। আর সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে জনগণ, বিশেষত গ্রামের জনগোষ্ঠী। এতে জনগণের ভোগব্যয় বাড়বে দশমিক ৬ শতাংশ, তবে গ্রামে বাড়বে দশমিক ৭ শতাংশ। এক্ষেত্রে ডিজেল, কেরোসিন ও ফার্নেস অয়েলের দাম বেশি কমানোর সুপারিশ করে সংস্থাটি; বিশেষত গ্রামের জনগোষ্ঠী উপকৃত হয়। গত ৩০ বছর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ব্যাপক লোকসানের মধ্যে ছিল। দীর্ঘদিন লোকসানে থেকে গত অর্থবছর সংস্থাটি ৫ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা লাভ করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর বিপিসির মুনাফা ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে তুলনা করে এখনই জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুপারিশ করেছে সিপিডি। বণিক বার্তাও একাধিক প্রতিবেদন ও নিবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানিয়েছে, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সুফল পুরোপুরি একা ভোগ করা ঠিক হবে না, জনগণকেও এর ভাগীদার করা উচিত। অর্থমন্ত্রীও একাধিকবার জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু সবকিছুই বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। এক্ষেত্রে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই আমরা।
এ মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে কৃষি, শিল্প, পরিবহন, যাতায়াত, দ্রব্যমূল্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুপ্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। জ্বালানি তেলের সঙ্গে অর্থনীতি ও জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রেরই সম্পর্ক রয়েছে। কৃষিতে জ্বালানি তেল বিশেষ করে ডিজেলের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। ডিজেলের দাম যদি কমে, সেচ খরচ কমবে, কৃষি উত্পাদন ব্যয়ে তার প্রভাব পড়বে। কৃষিপণ্যের দাম কমবে। তেলনির্ভর শিল্পের ক্ষেত্রেও এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। তেলের দাম কমলে গ্যাসের ওপরও চাপ কমবে। গ্যাসচালিত পরিবহন তেলে চলে গেলে গ্যাস সাশ্রয় হবে। অর্থনীতি ও মানুষের মঙ্গলের কথা চিন্তা করলে সরকারের উচিত অবিলম্বে তেলের দাম কমানো।
Published in ইনকিলাব on Tuesday, 05 January 2016
অবিলম্বে তেলের দাম কমাতে হবে
আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে একটি নীতিমালা করার পরই সরকার দাম পুনর্নির্ধারন করবে। গত রোববার এমসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সরকার সচেতনভাবেই এতদিন জ্বালানি তেলের দাম কমায়নি। সরকারের মনোভাব ছিল বিপিসির লোকসান কিছুটা সমন্বয় করা। বিপিসির লোকসান পুরোটা সমন্বয় হয়ে গেছে। এদিকে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) শূন্য দশমিক তিন শতাংশ বাড়বে। সিপিডির সুপারিশে কেরোসিন, ডিজেল ও ফার্নেসঅয়েলের দাম কমানোর পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি মনে করছে, মূল্য সমন্বয় করা হলে, তৈরি পোশাকের রফতানি বাড়বে দশমিক ৪ শতাংশ। ভোক্তা চাহিদা বাড়বে দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমবে ২ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের বড় ধরনের মূল্যহ্রাসের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে তা সমন্বয় করার দাবি ও আলোচনা অনেক দিন থেকেই হয়ে আসছে। এমনকি গত বছরের প্রথমদিকে বিষয়টি সংসদেও আলোচিত হয়েছিল। তখন প্রশ্নোত্তর পর্বে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কমছে না। এখাতের আগের লোকসান কাটিয়ে ওঠার পর সরকার দাম কমানোর বিষয়টি বিবেচনায় নিবে। বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে কম দামে জ্বালানি তেল কিনে বেশি দামে, বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করেছে সরকার। এতে সরকার বা কোন কোন বিশেষ মহলের লাভ হলেও সব শ্রেণীর মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। সরকার যে শুধু গাড়ীতে ব্যবহৃত অকটেন বিক্রি করেই মুনাফা করেছে তা নয় তুলনামূলক কম দামি ডিজেল বিক্রি করেও বিপুল পরিমাণ মুনাফা করেছে। সরকার সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে। সে সময়ে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ছিল ৯৭ ডলার। আর এখন তা দাঁড়িয়েছে ৩৬ ডলারে। সরকার প্রতি লিটার অকটেনে মুনাফা করছে প্রায় ৪০ টাকা, আর কেরোসিন ডিজেল ও ফার্নেসঅয়েলে মুনাফা করছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। এদিকে মনে করা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরো কমে যেতে পারে। তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক উত্তোলন ও সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। তেলের অন্যতম ভোক্তা চীনের অর্থনীতির গতিশ্লথ হয়ে পড়ায় তেলের চাহিদা কমে গেছে। রাশিয়া আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের সরবরাহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও নিজস্ব তেল রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। দেশটি যেকোন সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল রফতানি শুরু করতে পারে। ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে চলতি বছরে দেশটির তেল বিশ্ববাজরে প্রবেশ করবে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের মূল্য না কমানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাসজনিত সুবিধা গ্রহণ করেছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্য নির্ধারনের জন্য একটি নীতিমালা তৈরির সুযোগ এসেছে। তিনি মনে করেন, জনসাধারণকে আগে থেকেই জানিয়ে দিতে হবে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে বা বাড়লে তা সমন্বয় করা হবে। এই পদ্ধতিতে দীর্ঘমেয়াদে সুফল পাওয়া যাবে।
একথা অস্বীকারের কোন উপায় নেই যে বিনিয়োগ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। নানা আশঙ্কা থাকলেও চলতি অর্থ বছরের প্রথম চার-পাঁচ মাস এক ধরনের স্থিতিশীল পরিবেশ বহাল ছিল। তাসত্ত্বেও বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধন কমার পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে। শিল্প খাতে মেয়াদি, ঋণ কমেছে। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রমাণ দেয় না। এই পরিস্থিতিকে সিপিডি ‘পুঁজি দুর্ভিক্ষের’ বছর হিসেবে উল্লেখ করেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি জ্বালানি তেলের মূল্য না কমা এবং গ্যাস বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করাকে বিনিয়োগের অন্তরায় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বলাবাহুল্য, ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয় বরং জনগণের কল্যাণ করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ বা কোন মহলের স্বার্থরক্ষার মাশুল ইতোমধ্যেই জনগণকে দিতে হয়েছে। অনেকভাবে তারা অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে কালবিলম্ব না করে তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করা অপরিহার্য।