Professor Mustafizur Rahman’s comments on implications of politics on Bangladesh’s macroeconomic stability cited in the Daily Naya Diganta Editorial, published on Thursday, 2 January 2014.
নতুন বছরে অর্থনীতি
সব সম্ভাবনা হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা
বিগত বছরটিজুড়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়া ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ করেছি। ব্যবসায়-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে ইতোমধ্যে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, তা নিয়ে ব্যবসায়ী সমাজসহ অনেকেই হতাশ। বিশেষ করে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরী পোশাক শিল্প আজ ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। শত শত তৈরী পোশাক কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। অচিরেই রাজনৈতিক সঙ্কট অবসান না হলে আরো শত শত কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, এমনটিই বলছেন তৈরী পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে অর্থনীতিতে যে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে, রাজনৈতিক সঙ্কটের আশু সমাধানের সম্ভাবনা না দেখায় অর্থনীতিবিদেরা বলছেন এই পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাবে। নতুন বছরে এই পরিস্থিতি কতটুকু মাত্রায় খারাপের দিকে যাবে, তা এখনই আন্দাজ-অনুমান করা যাচ্ছে না বলেই মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, গত দুই দশক অর্থনীতি একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে ছিল। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এর বিরূপ প্রভাব অবশ্যই অর্থনীতির ওপর পড়বে। সে প্রভাব হবে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি। আর এর প্রভাব আসবে তিন দিক থেকে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়বে, প্রধান প্রধান নীতিসিদ্ধান্ত গ্রহণে নেমে আসবে নিশ্চলতা এবং আমরা হারাব অনেক সুযোগ আর সম্ভাবনা। বর্তমান পরিস্থিতির অবসান না ঘটলে অর্থনীতি জিম্মি হয়ে পড়বে রাজনীতির কাছে। অথচ দেশের মানুষের স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল সরকার তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে বিরোধী দলকে আস্থায় নিয়ে এসে এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যা অর্থনীতি বিকাশের পথ সুগম করবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, নতুন বছরের শুরুটায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল বলে মনে হয় না। জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার নেমে যাবে ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশে। গত চার বছরে এই হার সবচেয়ে কম। এখনো রফতানি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আওতায় থাকলেও তৈরী পোশাকের অর্ডার বাতিল হচ্ছে। ক্রেতারা চলে যাচ্ছেন অন্যান্য দেশে। রাজনৈতিক সঙ্কটে রফতানি কার্যক্রমে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে রফতানি খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। রাজনৈতিক সঙ্কটের ফলে অর্থনৈতিক সূচকগুলো খারাপের দিকেই যাচ্ছে। বেশির ভাগ বড় ব্যাংক ২০১৩ সালে তাদের মুনাফা কমে যেতে দেখেছে। কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, অচলাবস্থা, সঙ্কট যাই বলি না কেন; ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে মুনাফা কমেছে অগ্রণী, জনতা, রূপালী, ন্যাশনাল, ইসলামী, বেসিক, প্রাইম ব্যাংকসহ আরো অনেক ব্যাংকের। ব্যাংকগুলোর মুনাফায় এই ভাটা ঋণ ও বিনিয়োগের বাজারে ভাটা পড়তে বাধ্য।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতার প্রভাব পড়েছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নেও। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাস (জুলাই-নভেম্বর) পেরিয়ে গেলেও এডিপি বাস্তবায়নে গতি আসেনি। এ সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ। অপর দিকে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে অসহায় ুদ্র ব্যবসায়ীরাও। ছয় মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাদের ব্যবসায়ে চলছে চরম মন্দাবস্থা।
অর্থনীতির যে দিকেই তাকানো যায়, সেখানেই রাজনৈতিক অচলাবস্থার বিরূপ প্রভাব সুস্পষ্ট। এ দিকে সরকার একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার ব্যাপারে মরিয়া। এ নির্বাচনের পর সরকারি দলের কোনো কোনো নেতা আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার ইশারা-ইঙ্গিত দিচ্ছেন। বিরোধী দলের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখিয়ে তখন চলবে দমন-পীড়ন। এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে অর্থনীতি যে আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই সাথে বিনষ্ট হবে অর্থনীতির যাবতীয় সম্ভাবনা ও সুযোগ। অতএব সরকার আর বিন্দুমাত্র দেরি না করে রাজনৈতিক সমঝোতা সৃষ্টির ব্যাপারে আন্তরিক পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসবে, সেটাই সবার প্রত্যাশা।