Published in Samakal on Friday, 23 May 2014.
বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সংসদের ভূমিকা সীমিত
বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জাতীয় সংসদের ভূমিকা খুবই কম। বাজেট পাসের আগে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয় না। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ততম আলোচনা শেষে বাজেট পাস হয়। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোর আয়োজিত ‘বাজেট ও অর্থনীতি’ বিষয়ে ‘টক শো’ সিরিজের শেষ দিনের আলোচনায় অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদরা এমন মতামত দিয়েছেন। তারা বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সংসদের আরও কার্যকর সম্পৃক্ততা চান। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রচারিত এ অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল ‘অর্থনীতি বহির্ভূত বিষয়সমূহ’। এতে অংশ নেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক এবং সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. রওনক জাহান। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান। দৈনিক সমকাল এ আয়োজনের প্রিন্ট মিডিয়া সহযোগী।
রওনক জাহান বলেন, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে সংসদের প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন এবং বাজেট আলোচনা ও অনুমোদন। বাজেট প্রক্রিয়ায় আইনপ্রণেতাদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বাংলাদেশে বাজেট আলোচনার সময় খুবই কম, মাত্র তিন সপ্তাহ। এই সময় হওয়া উচিত তিন মাস। বাজেট কখনও সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয় না। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিরোধী দল সংসদ বর্জন করলেও তারা সংসদীয় কমিটির বৈঠকে যান। সুতরাং কমিটিতে বাজেট নিয়ে আলোচনা হলে বিরোধী দলের মতামত নেওয়ার সুযোগ থাকে।
বাজেট প্রক্রিয়ায় সংসদীয় কমিটির অংশগ্রহণ সম্পর্কে ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, এবার যেহেতু নির্বাচনের পরপরই বাজেটের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেহেতু কমিটিগুলো হয়তো ততটা সম্পৃক্ত হতে পারেনি। তারপরেও কমিটিগুলোর সঙ্গে অর্থমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ নিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় এমপিদের মাত্র ৩-৪ মিনিট সময় দেওয়া হয়। এ সময় বাড়ানো উচিত। আবার কেউ কেউ বাজেট আলোচনা করতে গিয়ে অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন। এ বিষয়ে এমপিদের ওরিয়েন্টেশন দরকার। বাজেট বাস্তবায়নে সংসদীয় কমিটির সম্পৃক্ততা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনা খুব কম হয়, যা হতাশাজনক। রাজনীতিবিদরা সারা বছর একে অন্যের সমালোচনা করেন। বাজেট নিয়ে আলোচনা নেই বললেই চলে। বাজেট প্রণয়নে সংসদীয় কমিটির ভূমিকা নেই। বাজেট পাসের দিন সংক্ষিপ্ততম সময়ের আলোচনা হয়। অথচ সংসদে অনেক সময়ের অপচয় হয়।
রাজনীতির প্রভাব কতটুকু : অর্থনীতির ওপর বর্তমানের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব বিষয়ে রওনক জাহান বলেন, গত বছরের মতো সহিংসতা নেই। তবে জনগণের মধ্যে ভয়ভীতি ও আশঙ্কা রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আছে। যে সমস্ত ইস্যুতে সহিংসতা হয়েছিল এবং যা নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির দ্বন্দ্ব ছিল, তার নিষ্পত্তি হয়নি। আগামী নির্বাচন কি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে, নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে তার কোনো আলোচনা হচ্ছে না। এ ইস্যু নিয়ে বিএনপি আন্দোলনে গেলে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি রায় হলে আবার কি সহিংসতা হবে_ এমন ভাবনা মানুষের মধ্যে কাজ করছে।
এ বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কোনো গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হচ্ছে একটি নির্বাচিত সরকার যা এখানে নেই। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা না হবে, তারা ভোটাধিকার না পাবে তখন বাজেটের আলোচনার কোনো মানে নেই। যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রের মৌলিক বিষয়গুলো অনুপস্থিত সেখানে কে বিনিয়োগ করবে_ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আমীর খসরুর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আবদুর রাজ্জাক বলেন, গত সংসদের ৫ বছরে বিরোধী দল সংসদে আসেনি। এবার বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে আসেনি। কিন্তু নির্বাচন হয়েছে। এ পরিস্থিতিকে ‘গণতন্ত্র নেই’ বলা যায় না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমানে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো অবকাঠামো। বিদ্যুতের উন্নতি হলেও শিল্পে গ্যাস সংকট প্রকট।
ছায়া বাজেট দেবে না বিএনপি : গত তিন বছর প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সংসদে সরকারের বাজেট উপস্থাপনের আগে ছায়া বাজেট ঘোষণা করে। এবার কী হবে জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তারা সরকারের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। এ অবস্থায় ছায়া বাজেট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। রওনক জাহান এ প্রসঙ্গে বলেন, অনেক দেশে বিরোধী দল সংসদে ছায়া বাজেট দেয়। আবার অনেক জায়গায় সরকারের বাজেট উপস্থাপনের পর ছায়া বাজেটের রেওয়াজ রয়েছে। বাংলাদেশে এ দুটো প্রক্রিয়াই অনুপস্থিত।
প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব : রওনক জাহান বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে স্বাধীন ও দক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। প্রশাসনিক দুর্নীতিও রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের লোকজনও যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশকে এই ক্ষতিকারক প্রবণতা থেকে বের হতে হবে। আমীর খসরু বলেন, সরকারের দলীয় লোকজন শেয়ার বাজার লুট করেছে। ব্যাংক থেকে টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এমএলএমের মাধ্যমে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হচ্ছে।