এটাকে ঠিক তত ভালো গণতন্ত্র বলে মনে করা হচ্ছে না।
Published in Jugantor on Thursday, 17 September 2015.
গণতন্ত্র প্রশ্নে বাংলাদেশ ৮৫তম
বিবিসি বাংলা
গণতন্ত্র প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭টি দেশের মধ্যে ৮৫তম। সেই সঙ্গে অন্য সূচকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য ইকোনোমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের হিসাবে এ তথ্য জানা গেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘ পালন করে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য ‘স্পেস ফর সিভিল সোসাইটি’ বা ‘সুশীল সমাজকে জায়গা করে দিন।’
পৌনে দুই বছর ধরে বাংলাদেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল সরকার প্রক্রিয়ার বাইরে। নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলটি সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণই করেনি। ফলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনটি একতরফা হিসেবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে। প্রধান একটি দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই যে সরকার দেশটিকে চালাচ্ছে, সেটি কতটা গণতান্ত্রিক?
এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রওনক জাহান বিবিসিকে বলেন, এটাকে ঠিক তত ভালো গণতন্ত্র বলে মনে করা হচ্ছে না। অনেকদিন ধরে মান নিয়ে প্রশ্ন চলছিল। কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ ছাড়া কোনো নির্বাচন যতদিন হচ্ছিল না, ততদিন নিুমানের হলেও এটাকে লোকে গণতন্ত্র বলেই দেখত।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর থেকে যখন নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন শুরু হল এবং একটা একতরফা নির্বাচন হয়ে গেল, তারপর থেকেই গণতান্ত্রিক যে অবস্থান, সেটা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল নানা প্রশ্ন করে চলেছে।
Published in Shokaler Khobor
গণতন্ত্র: কতদূর এগোল বাংলাদেশ
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দিবসের মতো গণতন্ত্রেরও আন্তর্জাতিক দিন রয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সেই ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ পালিত হয়েছে দুনিয়াব্যাপী। এই ধরনের দিবসের জন্য প্রতিবছরই একটি করে স্লোগান থাকে। এবারের গণতন্ত্র দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘স্পেস ফর সিভিল সোসাইটি’ বা ‘নাগরিক সমাজের জন্য স্থান’। গণতন্ত্রের অন্যতম বিষয় হল নাগরিক সমাজের জন্য স্পেস বা জায়গা। নাগরিক সমাজের কার্যকর উপস্থিতি স্থিতিশীল গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত এবং নাগরিক সমাজ ছাড়া গণতন্ত্র পূর্ণতা পায় না। বর্তমান বাংলাদেশেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে।
এবারের গণতান্ত্রিক উত্তরণের সূচক নিয়ে দুনিয়াব্যাপী পর্যবেক্ষকদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। খুব আশাবাদী হওয়ার মতো উত্তরণ চোখে পড়ছে না। গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে একযোগে যে ‘আরব বসন্ত’ হয়েছিল তা ব্যর্থ হয়েছে। নতুন করে মধ্যপ্রাচ্য অশান্ত হয়েছে। সেই সুযোগে জঙ্গিবাদী তত্পরতা বেড়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য অঞ্চলে। উত্থান হয়েছে আইএসের মতো ভয়ঙ্কর লিমিট্যান্ট গ্রুপের। গণতন্ত্র প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭টি দেশের মধ্যে ৮৫তম। সেই সঙ্গে অন্যান্য সূচকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। বিখ্যাত ব্রিটিশ পত্রিকা ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্যটি নিয়ে সারা দুনিয়ায় বিশ্লেষক ও গবেষকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশেও কম-বেশি আলোচনা হয়েছে। অতীতে নাগরিক সমাজ ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও বর্তমানে এরা দ্বিধাবিভক্ত। স্বাধীনতার পর তিনটি সামরিক শাসন সত্ত্বেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছিল। সবশেষ ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন এবং এই নির্বাচন নিয়ে বড় একটি দলের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে অবস্থান করার ফলে বাংলাদেশেও গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রধান একটি দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য প্রতিকূল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বিবিসিকে বলেন, ‘২০১৪ সালের পর থেকে নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন শুরু হল এবং একটা একতরফা নির্বাচন হয়ে গেল। তারপর থেকেই সেটা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’
গণতন্ত্রে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি অন্যতম মূল ভিত্তি। এ ছাড়া একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বুনিয়াদের জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তৈরি, অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তদের দমন করা এবং জনগণের মাঝে সম্পত্তি ও অধিকারের সমান বণ্টন নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আইনের শাসনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। আইনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ প্রয়োগ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কাঙ্ক্ষিত উন্নতিতে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। উপরিউক্ত বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, বাংলাদেশে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে ভোট এবং ভোটকে নানাভাবে নিজেদের দখলে রাখার প্রতিযোগিতা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো তৈরি করতে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।
বাংলাদেশে নির্বাচন পদ্ধতির যে সঙ্কট তা মোটাদাগে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তৈরিতে আমাদের ব্যর্থতাকেই ইঙ্গিত করে। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ ধরনের সঙ্কট নেই। নানা সমস্যার পরও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় ভারতের যে সফলতা তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এর অন্যতম কারণ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে গণতান্ত্রিকভাবে গড়ে তুলতে তারা সক্ষম হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণ ও প্রশাসনের কঠোর অবস্থানও লক্ষণীয়। বাংলাদেশের সামনে এখন সময় এসেছে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে স্বাধীনতার এতদিন পর কতদূর আমরা এগোলাম তা ভেবে দেখা। প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সমাজে আলোচনা করা। সিভিল সমাজের ভূমিকাকে শক্তিশালী করা। রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর দাঁড় করানো। আর এজন্য সবার সক্রিয়তার কোনো বিকল্প নেই।