Published in Shokaler Khobor on Monday, 19 May 2014.
চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন
রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি (২০১৩-১৪) অর্থবছরে দেশে মোট দেশজ উত্পাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার। কিন্তু নতুন ভিত্তি বছরে শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরেই থাকছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক হিসাবে চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থবছরে সরকারের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। উল্লেখ্য, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিএসের এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা জানান, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে ৬ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো। কৃষিতে প্রবৃদ্ধি কমলেও শিল্প খাতে আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমলেও রিজার্ভ বেড়েছে-এ কারণে প্রবৃদ্ধিও ভালো হয়েছে। বিবিএস অর্থবছরের প্রথম আট মাসের প্রকৃত ভিত্তিতে জিডিপির সাময়িক হিসাব চূড়ান্ত করেছে।
আগামী ৫ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান উপস্থাপন করবেন। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান থাকলেও অনেক খাত হিসাবের বাইরে ছিল। নতুন ভিত্তি বছরে নতুন অনেক খাত যুক্ত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সেবা খাত ও শিল্প খাত সম্প্রসারিত হয়েছে। অন্যদিকে কমে যাচ্ছে কৃষি খাতের অবদান। তবে চলতি অর্থবছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেবা খাতে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন হয়নি। এছাড়া কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি কমেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের ৫ দশমিক ৭, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৬ শতাংশের নিচে প্রবৃদ্ধি নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস ছিল। অন্যদিকে সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ) পূর্বাভাস ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকও ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করেছে।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ৬ মাসের বাজেট বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি হতাশ নন। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খনিজ ও বিদ্যুত্ খাতের উত্পাদন সূচক বেড়েছে। আউশের উত্পাদন বেড়েছে। বিদ্যুত্ উত্পাদন বৃদ্ধির কারণে সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহ নিশ্চিত হবে বিধায় বোরোর উত্পাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ, কৃষিঋণ বিতরণের পরিমাণ, রফতানি ও আমদানি বেড়েছে। শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ওপর ঋণপত্র খোলার হার বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা আবাসিক কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানান, রফতানি বাদ দিলে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত সব সূচকেরই অবস্থা গত বছরের চেয়ে খারাপ। রেমিট্যান্স, ব্যক্তি খাতের ঋণপ্রবাহ, আমদানি ও শুল্ক আয়করের প্রবৃদ্ধি গত বছরের চেয়ে কম হয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের সমান বা তার চেয়ে বেশি হলে সরকারকে এর ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত।