Published in Jai Jai Din on Thursday, 22 May 2014.
পোশাক শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে ভয়ঙ্কর প্রতারণা
সরেজমিন প্রতিবেদন- শেষ
যাযাদি রিপোর্ট

শ্রমিকদের ঘামে ভেজা পোশাক রপ্তানি করে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হলেও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তাজনিত ত্রুটিতে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা নিয়ে চলছে ভয়ঙ্কর প্রতারণা। পোশাকশিল্প মালিকরা এ নিয়ে শুধু টালবাহানাই করছে না, উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করা যাচ্ছে। অথচ ভবনধসসহ নানা ধররের দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে তারা সরকার ও বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা আদায় করছেন।
এদিকে বিজিএমইএ ও সরকারের পক্ষ থেকে আহত শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা-ও বাস্তবায়ন করা হয়নি। ক্ষতিপূরণ না দেয়ার ফন্দিতে অধিকাংশ বড় দুর্ঘটনায় নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করেনি বিজিএমইএ। বিশেষ করে তাজরিন ফ্যাশনে অগি্নকা- ও রানা প্লাজা ধসের পর তাদের এ ষড়যন্ত্র প্রকট হয়ে ওঠে।
শ্রমিক নেতারা জানান, বিজিএমইএতে কারখানাগুলোর বেতনের নথি থাকলেও রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিখোঁজ শ্রমিকদের নাম ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তোলা হয়নি। অথচ এ ধরনের বড় দুর্ঘটনায় বেশকিছু লাশের সন্ধান না পাওয়াই স্বাভাবিক। শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নিখোঁজ শ্রমিকদের অবিলম্বে মৃত ঘোষণা করার দাবি জানানো হলেও বিজিএমইএ তাতে গুরুত্ব দেয়নি।
পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা শুরু থেকেই এসব অস্বীকার করলেও তাজরিন ফ্যাশনে অগি্নকা- ও রানা প্লাজা ধসের পর তাদের লোভাতুর ভয়ঙ্কর স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। এ দুটি ঘটনায় দেড় সহস্রাধিক পরিবার পথে বসলেও পোশাকশিল্প মালিকরা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নামে যৎসামান্য অনুদান দিয়ে পিছটান দিয়েছে। এসব ঘটনায় আহত শ্রমিক ও নিহত পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও গত এক বছরে তার কিঞ্চিতাংশ পূরণ করেনি। ১৯৯০ সাল থেকে গত ২৩ বছরে দুই সহস্রাধিক পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু হলেও এদের একজনও পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে দাবি করেছেন শ্রমিক নেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রানা প্লাজা ধসের পর একটি সহায়তা তহবিল গঠন করে বিজিএমইএর প্রত্যেক সদস্যকে নূ্যনতম ২৫ হাজার টাকা করে তহবিলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ৫ হাজার ৪০০ সদস্যের মধ্যে বিজিএমইএর তহবিলে মাত্র ১ হাজার ৮৪২ সদস্য সাড়ে ১৪ কোটি টাকা টাকা জমা দেন। এর মধ্যে বিকেএমইএ দেয় এক কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলেন, ‘বিজিএমইএ যা করছে তা লজ্জাজনক। মালিকদের সংগঠনের সামর্থ্য মাত্র সাড়ে ১৪ কোটি, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এক বাটেক্সপোর ফ্যাশন শোর জন্যই তো বিজিএমইএ কোটি কোটি টাকা খরচ করে।’
এদিকে ক্ষতিপূরণ দিতে আগ্রহ না দেখালেও রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকশিল্পের সঙ্কট ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপুল ক্ষতির তথ্য দেখিয়ে মালিকরা সরকারের কাছ থেকে ঠিকই সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন। এর মধ্যে আছে মোট রপ্তানি মূল্যের ওপর উৎসে কর দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৩ শতাংশ করা। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
এই ছাড় দেয়ায় পোশাকমালিকরা কী পরিমাণ আর্থিক সুবিধা পাবেন এবং সরকার কতটা রাজস্ব বঞ্চিত হবে এর একটি হিসাব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সে অনুযায়ী, নতুন করহার বাস্তবায়িত হলে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ১৫ মাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে সরকার। শুধু পোশাকমালিকদের কাছ থেকেই সরকারের রাজস্ব কমবে ১ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।
এদিকে ক্ষতিপূরণ পরিশোধে শুধু পোশাকশিল্প মালিকরাই নয়, সরকারও নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঠকিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেতারাও।
পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাভারের রানা প্লাজা ধসের ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের জন্য প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার পর বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান থেকে এসেছে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অর্থসাহায্য। গঠিত হয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল, পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তহবিল ও আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর গঠিত তহবিল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে এসব তহবিলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ জমা পড়েনি। ফলে চার কোটি ডলারের এই তহবিল গঠন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সবাই শ্রমিকদের অনুদান হিসেবে অর্থসাহায্য করে দায়িত্ব থেকে পালানোর চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় শ্রমিক ও তাদের স্বজনরা নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সোচ্চার হলেও নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ তারা পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন।
শ্রমিকনেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিকরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উৎস থেকে যে সামান্য অর্থ পেয়েছেন তা অনুদান হতে পারে, ক্ষতিপূরণ নয়। পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন প্রশ্ন তুলছে- কোথা থেকে কত টাকা কার কাছে এসেছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। অনেক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান সাহায্য দেয়ার কথা বললেও প্রতিশ্রুত সাহায্য পাওয়া যায়নি। এমনকি শ্রমিকদের অর্থসাহায্য দেয়ার কথা বলে অনেকেই তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইডের সামপ্রতিক এক জরিপে উল্লেখ করা হয়- সরকার, পোশাক কারখানার মালিক, ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক তহবিলসহ নানা মাধ্যম থেকে শ্রমিক ও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু হলেও একটি অংশ এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যথাযথ অর্থ প্রদান করছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত সরকার, বিজিএমইএ ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান থেকে শ্রমিকদের অনুদানের অর্থ দেয়া হলেও প্রকৃত ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার তথ্যে রানা প্লাজার পাঁচটি কারখানায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ১৩৫ জন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৪৩৮ জন। নিখোঁজ আছেন ১০০ জনের বেশি। আইএলওর ১২১ ধারায় বলা আছে- নিহত বা আহত শ্রমিকের পরিবারে তার ওপর যতজন নির্ভরশীল তার ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এর ভিত্তিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত বিশেষ কমিটি নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১৪ লাখ ৫০ হাজার এবং আহত শ্রমিককে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলে।
ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা বলছেন, তারা প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ আজও পাননি। অনুদান হিসেবে যে অর্থ পেয়েছেন তাও সামান্য। এ ছাড়া কারখানা শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও ভবনে অন্য ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের অর্থ দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে অ্যাকশন এইডের জরিপে বলা হয়- প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১২৭ কোটি টাকা জমা পড়েছে। এখন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে মাত্র ২২ কোটি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, নিহত ৭৭৭ জনের পরিবারের ১ হাজার ১৬ সদস্যকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সদস্যদের ১৩৭ জনের পরিবারের ১৯০ জনকে প্রায় ৩ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়েছে। ডিএনএর জন্য ৫০ লাখ ও গুরুতর আহত ৩৬ শ্রমিকের প্রত্যেককে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দেয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা বাবদ ২২টি ক্লিনিক ও হাসপাতালকে ২ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ত্রাণ তহবিল থেকে তিন ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের অর্থসাহায্য দেয়া হয়েছে। এখানে স্বচ্ছতার কোনো ঘাটতি নেই। যারা এখনো সাহায্য পাননি তাদের যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে এবং একটি তালিকাও প্রকাশ করা হবে।
অন্যদিকে রানা প্লাজা ডোনার ট্রাস্ট ফান্ডে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ৪ কোটি ডলারের তহবিল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেড় কোটি ডলারের তহবিল জোগাড় হয়েছে। এ তহবিলের মূল উদ্যোক্তা আইএলও ও শ্রম অধিকার সংগঠন ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিল। লক্ষ্য ছিল এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তহবিলের অর্থ জোগাড় করা। দেড় কোটি ডলারের তহবিল থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ শ্রমিকের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে বলে সমপ্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীনিবাস রেড্ডি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক নেয়া ২৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮-১০টি ব্র্যান্ড ছাড়া বাকিগুলো অর্থ প্রদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে অনুদান হিসেবে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ৮ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা বাবদ ৩ কোটি ৯০ লাখ, বেতন ও অন্য সুবিধা বাবদ ৭ কোটি ৬০ লাখ, প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে অনুদান ২ কোটি, প্রসূতি শ্রমিক সহায়তা ৪ লাখ ২০ হাজার এবং উদ্ধার কাজ ও পুনর্বাসনে ৯৬ লাখ টাকা। তাদের মতে, আইএলওর তত্ত্বাবধানে ‘রানা প্লাজা ডোনার ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করা হয়েছে। মূল লক্ষ্য বিদেশি পোশাক ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদরে থেকে অর্থ উত্তোলন। কিন্তু তাতেও আশানুরূপ অগ্রগতি নেই।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান হামিদা হোসেন বলেন, যারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তা পূরণ করছেন কি না, তদারকি করা জরুরি। কিন্তু বাস্তবে তা করা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের বাকি টাকা ক্ষতিপূরণ নাকি মানবিক বিবেচনায় দেয়া হবে তা জনসাধারণকে জানানো দরকার।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সংলাপে উঠে আসে রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের দীর্ঘ মেয়াদে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়ার নানা দুর্বলতা ও অব্যবস্থাপনা। জানানো হয়, ক্ষতিপূরণের অর্থও বুঝে পায়নি হতাহতের পরিবার। আহত ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের কোনো ধরনের খোঁজখবর না নেয়ারও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
এ সময় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তদারকি, সমন্বয় ও প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি। একই সঙ্গে রানা প্লাজার ধসের ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে যে অর্থ সাহায্য পাওয়া গেছে তার যথাযথ ব্যবহার এবং এসব অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করারও তাগিদ দেন সিপিডি চেয়ারম্যান।
কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলেও তাতে গুরুত্ব দেয়নি বিজিএমইএ। এ পরিস্থিতিতে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি উদ্যোগ নেন, গঠন করা হয় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি। কমিটি হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিলেও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে এখনো আইনি বাধ্যবাধকতাও তৈরি হয়নি।
তবে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ উপকমিটির প্রধান এম এম আকাশ বলেন, ক্ষতিপূরণের অর্থ কে দেবেন, সে সিদ্ধান্ত দেবে হাইকোর্ট। তবে ইতোমধ্যে হাইকোর্ট এ ঘটনার জন্য ভবন মালিক, দায়িত্বে অবহেলা করা সরকারি কর্মকর্তা ও বিজিএমইএর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছে। আর যারা দায়ী তারাই তো ক্ষতিপূরণ দেবেন।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডবিস্নউএস) ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. ইব্রাহিম যায়যায়দিনকে বলেন, রানা প্লাজা ধসে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ পরিশোধে পোশাকশিল্প মালিকরা যেভাবে টালবাহানা করছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে। যে কোনো সময় শ্রমিক ক্ষোভের ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে একশ কোটি টাকারও বেশি জমা থাকলেও তা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন না করার পেছনে বিশেষ কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে শ্রমিক নেতা ইব্রাহিম বলেন, রানা প্লাজা ধসে পঙ্গু বেশ কয়েকজন শ্রমিক রাস্তায় ভিক্ষা করছে; চিকিৎসা করাতে না পেরে অনেকেই ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে- অথচ দেই-দিচ্ছি বলে সরকার অযথাই শ্রমিকদের মাসের পর মাস ঘোরাচ্ছে।
বিজিএমইএর প্রত্যেক সদস্যকে শ্রমিকদের অনুদানের জন্য মাত্র ২৫ হাজার টাকা করে জমা দেয়ার জন্য বলা হলেও তাদের সিংহভাগই তা এখনো জমা না দেয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্রমিক নেতা ইব্রাহিম বলেন, তাদের এ ন্যক্কারজনক আচরণই প্রমাণ করে তারা শুধু শ্রমিক ঠকিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়তে চায়, বিনিময়ে তাদের কিছু দিতে চায় না। গার্মেন্ট মালিকদের মানসিকতা রাস্তার ভিক্ষুকের চেয়েও সংকীর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।



