Published in Bonik Barta on Friday, 20 March 2015.
তৈরি পোশাক শিল্প
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিকল্প নেই
সন্দেহ নেই, তৈরি পোশাক রফতানি বাড়াতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি আমূল পরিবর্তন আনতে হবে এ শিল্পে। এতে পণ্যে বৈচিত্র্যও আসবে। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশন এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের যৌথ গবেষণা অনুযায়ী, প্রযুক্তিগত উত্কর্ষের মাধ্যমে পোশাক রফতানি থেকে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বাড়তি রফতানি আয় সম্ভব। তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়, সুযোগ রয়েছে প্রথম স্থানে ওঠার। এজন্য আমাদের ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কর্মপরিবেশ উন্নয়নে এরই মধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর কিছু সুফল মিলছে বটে। তবে এখনো অধিকাংশ কারখানা ক্রেতাদের শর্ত মেনে পরিবেশ উন্নত করতে পারেনি। ইতিবাচক বিষয় হলো, উদ্যোক্তারা কারখানার পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি নজর দিয়েছেন প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে। উদ্যোক্তারা এরই মধ্যে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আমদানি করছেন। উত্পাদনশীল এবং বিদ্যুত্-জ্বালানি ব্যবহার কম হওয়ার কারণেই মালিকদের মধ্যে এমন প্রবণতা বাড়ছে। প্রযুক্তিগত উত্কর্ষ সাধনের জন্য সরকারকে জোগাতে হবে সহায়তা। কারণ উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির দাম একটু বেশি, যা অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পক্ষে ব্যবহার করা কঠিন। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আমদানিতে যেন স্বল্প সুদে ঋণ দিতে পারে, তার ব্যবস্থা করা জরুরি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্কমুক্ত করা প্রয়োজন। উত্পাদনশীলতা বাড়ানোর জন্যও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে আমাদের। পাশাপাশি এসব চালাতে দক্ষ কর্মিবাহিনী গড়ে তুলতে হবে, যারা আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনায় পারদর্শী।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির বিকাশ ও সম্প্রসারণ হচ্ছে। আজ বিশ্বের যেসব দেশ কৃষি-শিল্প-সেবা খাতে এগিয়েছে, তাদের সবাই এদিকে নজর দিয়েছে একসময়। ফলে তাদের উন্নয়ন হয়েছে টেকসই। বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে এবং ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এমন অবস্থায় বিশ্ব থেকে পিছিয়ে থাকা চলবে না। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উত্পাদন প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে চলেছে। প্রতিযোগিতা করতে হলে আমাদেরও একই পথে এগোতে হবে। সেক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি খুঁজতে হবে এবং তা অবশ্যই বাংলাদেশের উপযোগী হতে হবে। আমাদের প্রতিটি খাতেই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রয়োজন। এতে কমে আসবে উত্পাদন ব্যয়ও। ফলে প্রতিযোগিতায় সুবিধা পাবেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বা ৫০ বছর উদযাপন হবে ২০২১ সালে। ওই বছরই দেশবাসীকে তৈরি পোশাক রফতানিতে ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার উপহার দিতে চায় পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। লক্ষ্য অর্জনে প্রতি বছর গড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। যদিও এক ধরনের চাপে রয়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে এ খাতের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ন হয়েছে। এত উচ্চহারে তৈরি পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে অবশ্যই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে, বাড়াতে হবে উত্পাদনশীলতা। সেজন্য বর্তমানে কম মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যের পণ্য তৈরি এবং রফতানির দিকেই গুরুত্ব দেয়া দরকার। এসবের জন্য কারখানাগুলোর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।