Published in Janakantha on Sunday, 30 March 2014.
কৃষি জমি শেষ!
আগামী দশ বছরের মধ্যে
সব থেকে বেশি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিভাগে
কৃষি জমি কমার মূল কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন
রাজন ভট্টাচার্য
ভূমি রক্ষায় নেই রাষ্ট্রের সমন্বিত কোন পরিকল্পনা। অপরিকল্পিতভাবে চলছে জমির ব্যবহার। যেখানে সেখানে হচ্ছে বাড়ি। নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, রাস্তা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার দোকানসহ বিভিন্ন রকমের স্থাপনা। হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন। গ্রামের কৃষি জমি দ্রুত অকৃষি খাতে যাচ্ছে। সংরক্ষিত ভূমি বলতে কিছু নেই। তবে জলাধার, বন, পাড়ার রক্ষায় আইন ও নীতিমালা থাকলে সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবে এর তোয়াক্কা করছেন না কেউ। ভূমিদস্যুদের কাছে এসব আইন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা অসহায়! নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন জমি কমার মূল কারণ। দ্রুত ভূমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ না করলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিলুপ্তি পেতে পারে কৃষি জমি। তখন চরম খাদ্য সঙ্কটেরমুখে পড়বে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মোট ভূমির পরিমাণ ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার একর। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চাষযোগ্য জমি রয়েছে মাত্র ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। এর এক-চতুর্থাংশই এখন হুমকির মুখে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, বছরে বাড়ছে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। দিনে ২২০ হেক্টরের বেশি কৃষি জমি অকৃষি খাতে যাচ্ছে। বছরে কমছে ৮২ হাজার হেক্টর জমি। যা মোট জমির এক ভাগ। বছরে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এক হাজার হেক্টর জমি। ৮০ শতাংশ সরকারী খাস জমিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। নির্মাণ কাজের কারণে বছরে বিলীন হচ্ছে তিন হাজার হেক্টর জমি। গেল ৩৭ বছরে শুধু ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে! গেল পাঁচ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ‘জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০’ এবং কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন-২০১০।’ তবে বর্তমান ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জনকণ্ঠ’ কে বলেছেন, জমির সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে চলতি বছরের মধ্যেই নীতিমালা তৈরি করবে সরকার।
কমছে কৃষিজমি ॥ তিন-চতুর্থাংশ মানুষ সরাসরি কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। এ তিন-চতুর্থাংশ মানুষের জীবনজীবিকা চলে কৃষি উৎপাদন ও কৃষিবিপণন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে। বাংলাদেশে বর্তমানে অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প, শিল্পায়ন এবং নগরায়নের ফলে ক্রমশ কমছে কৃষিজমির পরিমাণ। পরিসংখ্যান বলছে, মোট ৮ দশমিক ৫২ মিলিয়ন হেক্টর কৃষিজমি আছে। এ জমিতেই দেশের কৃষকরা কৃষিপণ্য উৎপাদন করে থাকেন এবং দেশের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হয় এ জমিতে উৎপাদিত খাদ্যশস্য দ্বারা।
জানা যায়, প্রতিবছর দেশের ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর চাষাবাদ যোগ্য জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৭৬২ মিলিয়ন হেক্টর। গত ৩৮ বছরের এ জমির পরিমাণ কমেছে ১ দশমিক ২৪২ মিলিয়ন হেক্টর। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য কৃষিজমি অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে। শিল্পায়ন ও আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য কি প্রকারের ভূমি ব্যবহার করা দরকার সে বিষয় নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমি কমতে কমতে প্রান্তসীমায় এসে দাঁড়িয়েছে। এভাবে কৃষিজমি কমতে থাকলে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবনজীবিকা চরম হুমকির সম্মুখীন হবে।
বাংলাদেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৭৬ লাখ ৮০৪টি কৃষক পরিবার রয়েছে। তাদের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। কৃষিজমি অকৃষিতে রূপান্তরিত হওয়ায় এ প্রান্তিক কৃষকরা সংসারের হিসেব মিলাতে পারছে না। এসআরডিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিভাগওয়ারি অকৃষি খাতে জমি চলে যাওয়ার প্রবণতা চট্টগ্রাম বিভাগে বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে প্রতিবছর ১৭ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। অন্য বিভাগের বেলায় দেখা যাচ্ছে রাজশাহী বিভাগে ১৫ হাজার ৯৪৫ হেক্টর, ঢাকায় ১৫ হাজার ১৩১ হেক্টর, খুলনায় ১১ হাজার ৯৬ হেক্টর, রংপুরে ৮ হাজার ৭৮১ হেক্টর, বরিশালে ৬ হাজার ৬৬১ হেক্টর জমি প্রতিবছর অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে। কৃষিজমি অকৃষি জমিতে পরিণত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন। আর কিছু জমি অকার্যকর হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষাবাদের কারণে।
নেত্রকোনা পৌরসভার মেয়র প্রশান্ত কুমার রায় জনকণ্ঠ’কে বলেন, দেশের ৩১৯টি পৌরসভার মধ্যে ৩০টিতে ‘তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্প’-র কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৩১ মের মধ্যে প্রকল্পের সার্বিক পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে নগরকেন্দ্রিক সব উন্নয়ন প্রকল্পে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করা। এলাকাবাসীর মতামতেরভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প হবে। এ ছাড়া ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা অংশ নেবেন। তারাই ঠিক করবেন নিজেদের এলাকায় উন্নয়ন কিভাবে হবে। স্থানীয়ভাবে কয়টি বাজার, স্কুল, বাড়ির আকৃতি, শিল্প স্থাপন হবে কি হবে না, এলাকার কোন কোন অংশের জমি ব্যবহার করা যাবে তা নিশ্চিত হবে প্রকল্পের মধ্য দিয়ে। এ কাজে সহযোগিতা করবেন নগরপরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলীরা। নতুন পরিকল্পনার বাইরে যেখানে সেখানে ইচ্ছা করলেই জমির ব্যবহার করা যাবে না। তিনি বলেন, একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকলে জমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আসবে। তা ছাড়া সচেতনতার অভাব ও অজ্ঞতার কারণে সাধারণ মানুষ নিজেদের ইচ্ছামতো জমি ব্যবহার করছেন বলেও মত দেন তিনি।
কৃষিজমি কমার কারণ ॥ কৃষিজমি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে মূল বলে মনে করেন অনেকেই। বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে ঘরবাড়ি তৈরির জন্য ব্যবহƒত হচ্ছে ভূমি। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বসতবাড়ির সংখ্যা ছিল দুই কোটি সাড়ে ৪৮ লাখ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে বসতবাড়ির সংখ্যা তিন কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩০। বসতবাড়ি এলাকার পরিমাণ ১৯৯৬-২০০৮ সময়ে তিন লাখ ৫২ হাজার একর থেকে বেড়ে ছয় লাখ ৭৭ হাজার একরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ‘বিশ্ব উন্নয়নসূচক ২০০৯’ থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালে দেশের ২০ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করত। ২০০৭ সালে তা বেড়ে হয় ২৭ শতাংশ। বৃদ্ধির এ হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা নিয়ে নতুন শহর হচ্ছে। বাড়ছে রাস্তাঘাট। রাস্তাঘাটের বড় অংশই হচ্ছে কৃষিজমিতে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২ অনুযায়ী, ২০০১ সালে দেশে জাতীয় মহাসড়কের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৮৬ কিলোমিটার। বর্তমানে জাতীয় মহাসড়ক আছে তিন হাজার ৫৪৪ কিলোমিটার। আঞ্চলিক মহাসড়ক চার হাজার ২৭৮ ও জেলা সড়ক রয়েছে ১৩ হাজার ৬৫৯ দশমিক ১৩ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সড়ক ও জনপথের রাস্তার পরিমাণ ২১ হাজার ৪৮১ কিলোমিটার। এলজিইডির ৮০ হাজার ১১৯ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে।
জমি হ্রাস নিয়ে গবেষণা ॥ দ্রুত কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। কেন কমছে? এ নিয়ে সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে রয়েছে নানামুখী গবেষণা। আছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০১০ সালে দ্রুত জমি কমে যাওয়া রোধ করতে কঠোর আইন পাস করাসহ ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরে। রিপোর্টে বলা হয়, নির্মাণ কাজের কারণে প্রতিবছর তিন হাজার হেক্টর জমি বিলীন হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ১০ বছরে আবাদি জমি বিলুপ্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়, দেশে মোট জমির পরিমাণ ১৪ দশমিক চার মিলিয়ন হেক্টর। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে এ জমি ভাগ করলে জনপ্রতি পাবেন ২৪ শতাংশ, চাষযোগ্য জমি পাওয়া যাবে ১৫ শতক। সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো বছরে বাড়ছে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। কমছে দুই লাখ একর কৃষিজমি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮৬ সালে আবাদি যোগ্য জমি ছিল ৮১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর। ২০০০ সালে তা কমে ৭১ লাখ ৯ হাজার হেক্টরে আসে। ২০০৩ সালে ৭০ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরে এসে দাঁড়ায়। গড়ে প্রতিবছর ৪০ হাজার একর আবাদি জমি হারাচ্ছে। এ ছাড়া ৮০ শতাংশ সরকারী খাসজমির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের এক গবেষণায় বলা হয়, ১৯৭২-২০০৯ সাল পর্যন্ত ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫৬ একর জমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। এ খাতে চলে যাওয়া জমির মধ্যে ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়েছে ৬৪ হাজার ৪৮৯ একর জমিতে। দোকান নির্মাণ হয়েছে ৬ হাজার ২৬২ একর জমিতে। কলকারখানা নির্মাণ হয়েছে ২২২ একর জমিতে। বিদ্যালয় দুই হাজার ৮২৭ একর, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৪৯৯ একর ও মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে এক হাজার ৯৯৯ একর জমিতে। সরকারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কৃষিজমি বিলুপ্তির প্রবণতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সাল পরবর্তী ১২ বছরে দেশে প্রতিবছর ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে।
যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে মৎস্য খামার ॥ বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলাসহ সারাদেশে মাছ চাষ একটি বৃহত্তম কৃষিভিত্তিক খামারে পরিণত হয়েছে। মাছের এ খামারগুলো গড়ে উঠেছে কৃষি জমিতে। এ খামার স্থাপনেও পরিকল্পনা না থাকায় কৃষিজমিতে মৎস্য চাষ হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। সরেজমিন দেখা যায়, নিচু ইরি ধান চাষের উপযোগী জমিতে মাটি কেটে মাছের চাষ উপযোগী করা হয়। আর এভাবে গড়ে উঠা মাছের খামারের পানির চাহিদা পূরণ করা হয় স্যালো মেশিনের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করার মাধ্যমে। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য অনেক পুঁজির প্রয়োজন হয়। তাই দেখা যায়, ব্যবসায়ী ও উচ্চবিত্তরা এ মাছ চাষের খামারগুলোর মালিক, তারা এ পদ্ধতিতে মাছের খামার স্থাপনের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে জমি ভাড়া নেয়। ফলে প্রান্তিক ও নিম্নবিত্ত কৃষকরা জমি ভাড়া দিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়ে আর কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যহত হয়।
শিল্প কারখানার দৌরাত্ম্য বৃহত্তর ঢাকায় ॥ বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলের নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকা জেলার রাজধানী পার্শ্ববর্তী হওয়ায় যত্রতত্র গড়ে উঠছে আবাসন প্রকল্পসহ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। প্রকল্পে কৃষিজমি গ্রাস করায় এ এলাকায় দ্রুত কমছে আবাদযোগ্য জমি। নতুন আবাসন এলাকাগুলো আবাসনের উপযোগী করে তোলার জন্য মাটি ভরাট করতে হয়। পরবর্তীতে এ জমিগুলো আর চাষাবাদের যোগ্য থাকে না। বাংলাদেশের বৃহত্তম শালবনের বনভূমি ভাওয়াল ও মধুপুরের গড় অবস্থিত গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত। এ শালবনী এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার আয়তন ১৭১ বর্গমাইল। এ উপজেলার এক-পঞ্চমাংশ জুড়েছিল সরকারী বনভূমি। এ বনভূমির আশপাশে পরিকল্পনাহীনভাবে কয়েক হাজার শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এখানকার সরকারী বনভূমির অনেক অংশ এখন শিল্প-মালিকদের দখলে। শিল্পকারখানার অন্তর্ভুক্ত না হতে পারা অনেক কৃষিজমি অকৃষি ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
ভালুকা উপজেলার ক্ষিরু, লাউতি, বনক্ষিরু নদীসহ খালগুলোর পানি আর কৃষকরা সেচকার্যে ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে নদী তীরবর্তী কৃষিজমিগুলো আবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাস্তব চিত্র হলো ঢাকা-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে কি পরিমাণ কৃষিজমি শিল্পায়নের মধ্য দিয়ে অকৃষিতে পরিণত হয়েছে তা চোখে না দেখলে বোঝার অবকাশ নেই। তা ছাড়া ঢাকা-গাজীপুর-নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী-মুন্সীগঞ্জ-মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোতে দ্রুত কৃষিজমি কমছে। জমির ব্যবহার এসব জেলাসমূহে কী ভাবে হচ্ছে তা খোঁজ করারও কেউ নেই। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, আগামী ৫ বছর পর ঢাকার আশপাশে কৃষিজমি কিংবা কোন জলাশয় থাকবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। রাজধানীর গ্রাম হিসেবে এক সময় পরিচিত ছিল ডেমরা কোনাপাড়া, পাড়াডগর, সারুলিয়া, শনিরআখড়া, মান্ডা, মুগদা, পূর্বরাজারবাগ, মিরপুরসহ কিছু এলাকা। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে এখন এসব এলাকা চেনা দায়। যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে মিল ফ্যাক্টরি।
কেরানীগজ্ঞে এক সময় কৃষিপ্রধান অর্থনীতি থাকলেও এখন পুরো এলাকার অর্থনীতি শিল্পপ্রধান হিসেবে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকায় গেল ২০ বছরে জমির দাম বেড়েছে ৫০ গুণের বেশি। ঢাকার আশপাশের সবগুলো জেলার ভূমির চিত্র ঠিক একই রকমের। যাত্রাবাড়ী-ডেমরা-আশুলিয়াসহ আশাপাশের এলাকায় রয়েছে বিলাল বিশাল জলাশয়সহ কৃষিজমি। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কৃষিজমি বিক্রি হচ্ছে ব্যাপক হারে। দূর দূরান্ত থেকে মাটি দিয়ে নির্বিচারে ভরাট করা হচ্ছে জলাভূমিসহ জমি। দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে জমির চেহারা। অনেক জমি কেনার পর বাউন্ডারি করে রাখা হয়েছে। যেকোন সময় এসব জমি চলে যাবে অন্য খাতে।
অন্যতম উপদ্রব ইটভাঁটি ॥ নগরায়নের কারণে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে ইটেরভাঁটি। রাজধানীর আশপাশে পরিকল্পনাহীনভাবে ইটভাঁটি গড়ে উঠার বিরূপ প্রভাব পড়েছে পরিবেশের ওপর। পরিবেশ অধিদফতরের হিসেবে দেশে ইটখোলা আছে চার হাজার ৫১০। এগুলোয় প্রতিবছর পোড়ানো হয় অন্তত তিন হাজার ২৪০ কোটি ইট। তবে বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হিসেবে দেশে ছোটবড় মিলিয়ে ইটখোলার সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। খোলার প্রতিটিতে তৈরি হয় বছরে ৭৫ লাখ ইট। ইটপ্রতি মাটির পরিমাণ গড়ে তিন কেজি ধরলেও সাড়ে ১৩ কোটি টন মাটি লাগে, যে কারণে বছরে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমি (দুইফুট গভীর পর্যন্ত মাটি কাটা হলেও) ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয়। কৃষিবিদ ও মৃত্তিকা গবেষকরা বলেছেন, ছয় হাজার ইটখোলার দখলে রয়েছে (প্রতিটি গড়ে সোয়া আট একর) প্রায় ৫০ হাজার একর আবাদি জমি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায় জিডিপিতে কৃষির অবদান আস্তে আস্তে কমছে। ১৯৯৬-কে ভিত্তিবছর ধরে ২০১১ অর্থবছরে দেশের মোট কৃষি উৎপাদনের মূল্য হিসাব করা হয়েছে ৭৪২ দশমিক ৮ বিলিয়ন টাকা যা মোট জিডিপির ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ ২০১০ সালে এ পরিমাণ ছিল ৭০৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন টাকা যা ছিল মোট জিডিপির ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। জিডিপিতে কৃষিখাতের এ অবদান গত দুই দশক ধরেই কমছে। ২০১১ অর্থবছরে কৃষি উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ২০১০ অর্থবছরের চেয়ে দশমিক দুই শতাংশ কম হয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক শূন্য শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। যা হয়েছে মূলত ২০১০ সালে কৃষিজমির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ার কারণে। অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান ২০ ভাগ থেকে হ্রাস পেয়ে ১৬ শতাংশে এসে নেমেছে।
সরকারী তথ্য ॥ কৃষিজমির অপব্যবহার রোধে সরকার ‘জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০’ এবং ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০’ প্রণয়নের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে দ্রুত কৃষিজমি হারানোর কারণে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি হুমকির সম্মুখীন। সরকারী তথ্যে দেখা যায়, প্রতিবছর দেশে কৃষিজমি কমছে ৮২ হাজার হেক্টর, যা মোট জমির ১ শতাংশ। কৃষিশুমারি ১৯৮৪ ও ২০০৮-এর মধ্যে তুলনা থেকে দেখা যায়, চাষকৃত এলাকার পরিমাণ কমেছে সাত লাখ ৩৩ হাজার একর, অর্থাৎ ২৪ বছরে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) ‘আরবান লেবার মার্কেটস ২০১০’ শীর্ষক গবেষণায় জানা যায়, ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে ২০০৫-০৬ সালে অকৃষি পেশার সংখ্যা প্রায় আট লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ১২ লাখ হয়েছে। অর্থাৎ বছরে বেড়েছে ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ হারে।
আইনী সুরক্ষার অভাব ॥ সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো কৃষিজমি যে কেউ যেকোন কাজে ব্যবহার করতে পারে। এটা রোধ করার কোন আইনী ব্যবস্থা নেই। এজন্য আইনের বড় পরিবর্তন করে উর্বর ও কৃষি উপযোগী জমি ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করার কথাও বলা হচ্ছে। ‘জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০’ এবং ‘কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০’ অনুসারে কৃষিজমি কৃষি কাজ ব্যতীত অন্যকোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোন কৃষিজমি ভরাট করে বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, ইটভাঁটি বা অন্যকোন অকৃষি স্থাপনা কোনভাবেই নির্মাণ করা যাবে না উল্লেখ থাকলেও প্রতিনিয়তই কৃষিজমি ব্যবহƒত হচ্ছে অকৃষি কাজে। প্রতিদিন দেশে গড়ে ২২০ হেক্টর কৃষিজমি ব্যবহƒত হচ্ছে শিল্পকারখানা স্থাপন, নগরায়ণ, বসতবাড়ি তৈরি ও রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজে। এর ফলে সামগ্রিক পরিবেশের ওপর যেমন হুমকি সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি দ্রুত সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে দেশের কৃষিখাত। ২১টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় ল্যান্ড জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪০টি জেলায় আগামী দুই বছরের মধ্যেই এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রস্তাবিত কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে কৃষিজমিতে আবাসন, শিল্পকারখানা, ইটভাঁটি বা অন্য কোন রকম অকৃষি স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। জমি যে ধরনেরই হোক না কেন, তা কৃষিজমি হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। দেশের যেন কোন স্থানের কৃষিজমি এ আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত হবে এবং কোনভাবেই তা ব্যবহারে পরিবর্তন আনা যাবে না। কোন অবস্থাতেই উর্বর জমিতে কোন স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেয়া যাবে না। যেকোন ধরনের জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। আইনে বিচার ও দ- হিসেবে বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘনকারী বা সহায়তাকারীর অনুর্ধ দুই বছর কারাদ- বা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- কিংবা উভয়দ-ে দ-িত হবে। এ আইনের অধীনে অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপোসযোগ্য হবে এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা কিংবা বন ও মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মামলা করতে পারবেন।
বিভিন্ন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে কৃষিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাধীনতার ৪২ বছরেও ভূমির সুষম ব্যবহারে বাস্তবভিত্তিক কঠোর নীতিমালা করা হয়নি। রয়েছে প্রশাসনের উদাসীনতা ও তদারকির অভাব। ফলে মানুষ ইচ্ছামতো ধ্বংস করছে কৃষিজমি। কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, দেশে আবাদি জমি ৮১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর এবং নিট আবাদযোগ্য ৮০ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর (মাথাপিছু প্রায় ১৫ শতাংশ)। জাতিসংঘের তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষের জন্য চাষযোগ্য জমি রয়েছে মাত্র ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর। এর এক-চতুর্থাংশই এখন হুমকির মুখে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এএএম মাহাবুব-উন-নবী জনকণ্ঠ’কে বলেন, আমাদের দেশে ভূমি ব্যবহারের সমন্বিত পরিকল্পনা নেই। তাই রাষ্ট্র জমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছে না, বা ব্যর্থ হচ্ছে। এজন্য দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। একটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাহলো-দিন দিন জমির পরিমাণ কমছে। আমরা চরম সঙ্কটের দিকে এগিয়ে চলেছি। ভবিষ্যতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চ হবে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা। তাই আর বসে থাকার সময় নেই। দেশের সব রকমের জমি ব্যবহারে এখনই সমন্বিত পরিকল্পনা বা নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন রকম স্থাপনা অনেকটা অপরিকল্পিতভাবেই করা হচ্ছে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণ জমি নষ্ট হচ্ছে। গ্রামে জমি রক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে বাড়ি নির্মাণ না করে গ্রামগুলোকে ছোট ছোট শহরে পরিণত করতে হবে। বহুতল ভবনে একাধিক পরিবারের আবাসন ব্যবস্থা করা জরুরী। তাহলে কৃষিজমি অকৃষিখাতে চলে যাওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করেন এ নগর বিশেষজ্ঞ।
নদীর পেটে জমি ॥ বুয়েটের ওয়াটার এ্যান্ড ফ্ল্যাড ম্যানেজমেন্টের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, পলি জমায় নদ-নদীর প্রবাহে সমস্যা হচ্ছে। ফলে প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনে এক হাজার হেক্টর ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ঘরছাড়া হচ্ছে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। এমনটি চলতে থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৫৭৫ বর্গকিলোমিটার ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হবে, যার অর্ধেকেরও বেশি থাকবে কৃষিজমি। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) হিসাব অনুসারে, ২০১০ সালে ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমি ভাঙনের শিকার হয়। ২০০৯ ও ২০০৭ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২ হাজার ১৭৮ ও ২ হাজার ৭৬৬ হেক্টর।
জাতীয় ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও নীতিমালা জরুরী ॥ বিশিষ্ট নগরপরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠ’কে বলেন, বৃহৎ জনবসতির দেশ হিসেবে সবার আগে বাংলাদেশে ভূমি ব্যবহারের জন্য নীতিমালা থাকা উচিত ছিল। হল্যান্ড, তাইওয়ান, ইসরাইল সব পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভূমির ব্যবহার করা হচ্ছে। সেসব দেশে এক ইঞ্জি জমিও পরিকল্পনার বাইরে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। দেশে সাড়ে তিন কোটি একর জমির মধ্যে দুই কোটি একরের কিছু বেশি কৃষিজমি রয়েছে। এসব জমি দ্রুত বিভিন্ন খাতে রূপান্তরিত হচ্ছে। প্রথমত কৃষিজমি হ্রাস বন্ধ করতে হবে পাশাপাশি জমি ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ জরুরী বলেও পরামর্শ দেন তিনি। বিশিষ্ট এ নগরপরিকল্পনাবিদ বলেন, আমাদের দেশে জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা থাকলে আজকে এসব বিষয়ে কথা উঠত না। কৃষিজমি রক্ষা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমি মনেকরি জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সবার আগে জাতীয় ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও নীতিমালা জরুরী। তিনি বলেন, আমাদের দেশে কৃষিজমি অকৃষি খাতে ব্যবহার করা যাবে না এমন আইন রয়েছে। কৃষিজমি অন্যখাতে ব্যবহার করতে হলে সরকারী অনুমোদনের বিষয় আছে। এ ছাড়া জলাধার সুরক্ষা আইন, বনভূমি ও পাহাড় রক্ষায়ও আইন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো কোন আইনের যথাযথ ব্যবহার নেই। কৃষিজমি হরদম অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। মহাসড়কের পাশে থাকা কৃষিজমিতে গড়ে উঠছে হাটবাজারসহ মিল ফ্যাক্টরি। সে সঙ্গে হোটেল, সিএনজি ও পেট্রোলপাম্পও হচ্ছে কৃষিজমিতে। বাড়ছে বাড়ি নির্মাণের ব্যাপকতা। সার্বিক বিবেচনায় জমির সুষ্ঠু ব্যবহার ও কৃষিজমি রক্ষায় এখনই সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।
চলতিবছর চূড়ান্ত হচ্ছে ভূমি ব্যবহার নীতমালা! ॥ ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জনকণ্ঠ’কে জানান, জমির সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারীভাবে একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। নীতিমালাটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই খসরা ঠিক হবে। চলতিবছরে তা চূড়ান্ত করার কথা জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, এ নীতিমালায় কৃষি-অকৃষি-শিল্প-মৎস্য-জলমহাল, উন্নয়নখাতসহ বিভিন্ন খাতের জমি পৃথক পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হবে। কৃষকদের জমি সুরক্ষা করতে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কৃষি জোন ঘোষণা করতে চাই। তাহলে কৃষিজমিতে ভূমিদস্যুদের উপদ্রব কমবে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে যে কেউ ইচ্ছা করলেই জমিকে নিজের মতো করে ব্যবহার করতে পারবেন না। অনুমোদন না নিয়ে জমি নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করলে থাকছে শাস্তির ব্যবস্থাও। তাই একটি কঠোর নীতিমালা করতে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও নেয়া হচ্ছে পরামর্শ। ২০১০ সালে ভূমি সংরক্ষণের জন্য সরকারী নীতিমালা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। সেই সময়ের নীতিমালায় জমি সুরক্ষার জন্য প্রস্তাবগুলোও অনুসরণ করার পরামর্শ দেন তিনি।