Published in Prothom Alo on Saturday, 5 July 2014.
এমডিজি (২০১৫) পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে শিশুদের অবস্থান
৮ জুন ২০১৪, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘এমডিজি (২০১৫) পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে শিশুদের অবস্থান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।
আব্দুল কাইয়ুম: বাংলাদেশসহ বিশ্বের জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ শিশু। তাদের চাহিদার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। আজকের আলোচনার বিষয় ‘এমডিজি (২০১৫) পরবর্তী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে শিশুদের অবস্থান’। এমডিজির ২০১৫-পরবর্তী ১২টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আলাদাভাবে শিশুকেন্দ্রিক কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই।
শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কেবল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দিয়ে শিশুর সামগ্রিক সুরক্ষা সম্ভব নয়। শিশুদের জন্য এমডিজিতে বিশেষ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে, যাতে আজকের ও আগামী দিনের শিশুরা পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। এখন আলোচনার সূচনা করবেন মতিউর রহমান।
মতিউর রহমান: খবরের কাগজে সাধারণত রাজনীতি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। রাজনীতির বাইরে দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আমরা কাজ করি। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী, শিশু, পরিবেশ—এসব বিষয় আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। আপনারা হয়তো লক্ষ করেছেন, গত বছর থেকে নারী ও শিশুদের নিয়ে প্রতি মাসে দুটি বিশেষ পাতা বের করছি। ওয়ার্ল্ড ভিশনের সঙ্গে গরিব শিশুদের বিষয়ে কাজ করছি। ভবিষ্যতেও আমাদের সাধ্যমতো এ ক্ষেত্রে কাজ করে যাব। তবে শিশুদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ অনেক সূচকে এগিয়ে আছে। এমডিজির কিছু লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যে অর্জন করেছে। বিভিন্ন অগ্রগতি নিয়ে বিশ্ব আমাদের প্রশংসা করছে। বিশেষ করে শিক্ষায় অনন্য সাফল্য অর্জন করেছি। আমরা সর্বত্র দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার কথা বলে থাকি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ড. অমর্ত্য সেনের উদাহরণ দিই। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে ভারত থেকেও এগিয়ে আছে।’ আজকের আলোচনা মূলত শিশুবিষয়ক। ২০১৫-পরবর্তী এমডিজিতে ১২টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আমরা চাই, শিশুর জন্য যেন আলাদাভাবে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী এখানে আছেন। তিনি এমডিজির বিষয়টি দেখবেন। আমরা আশা করব, এমডিজির আগামী লক্ষ্যমাত্রায় শিশুদের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। প্রতিদিন ৫০ লাখ মানুষ প্রথম আলো পড়ে। সপ্তাহে এক দিন ৯৬ লাখ পাঠক প্রথম আলো পড়ে। প্রথম আলো অনলাইন থেকে ২০৩টি দেশের প্রবাসী বাঙালি প্রথম আলো পড়ে। বিদেশে যারা আছে, বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের মধ্যে আরও বেশি ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। আজকের আলোচনায় যে বিষয়গুলো আসবে, তা দেশে এবং প্রবাসে বাঙালি পাঠকদের মধ্যে পৌঁছে যাবে। নিশ্চয়ই শিশুদের প্রতি মানুষের সচেতনতা আরও বাড়বে।
সাবিরা নুপুর: ২০০০ সালে আটটি মিলেনিয়াম লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ১২টি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ২০১৫-পরবর্তী মিলেনিয়াম লক্ষ্যমাত্রায়। অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভালো অবস্থানে আছে। বিশেষ করে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে আমাদের দেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি উদাহরণ তৈরি করতে পেরেছে। বিশ্বনেতারা এসব বিষয়ে আমাদের প্রশংসা করেন। আমরা জানি, ২০০০ সলে সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়ন হয়েছিল এলিট সম্প্রদায়ের তৈরি এবং শিশু সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রা ছিল না। যারফলে গত দশকে শিশুদের প্রতি সহিংসতা বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বে কী হয়েছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করব। এ সময়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে এসব বিষয় নিয়ে সবার সঙ্গে পরামর্শ হয়েছে। এ পরামর্শে শিশুরা যুক্ত ছিল। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, সেভ দ্য চিলড্রেন ও আমরা শিশুদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছি এবং ২০১৫-পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রায় শিশুদের জন্য যেন নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা থাকে, সে জন্য কাজ করছি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের পরামর্শ সভায় ছিল। সুশাসন, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি, খাদ্যনিরাপত্তাসহ ১২টি ইস্যু নিয়ে আমার কাজ করেছি। সারা বিশ্ব থেকে ২৭ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। জাতিসংঘের মহাসচিবকে নিয়ে তাদের দায়িত্ব ছিল ২০১৫-পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা। ২৭ জনের এই প্যানেল ১২টি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে।
কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি, এখানে শিশুদের জন্য বিশেষ কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই। প্রতিটি দেশের সরকার তার দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করবে। বাংলাদেশে আমরা অনেক সংগঠন শিশুদের নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশ সরকার যেন শিশুদের জন্য লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি তুলে ধরে। ৭০টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে একটি ওপেন ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হয়েছে। তারা ভোট দেবে যে এ লক্ষ্যমাত্রাগুলো তাদের জন্য প্রয়োজন কি না। বাংলাদেশও এখানে ভোটার। বাংলাদেশ তার দেশীয় প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ২০১৫ পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৬৮তম সভায় উপস্থাপন করা হবে।
গত এমডিজিতে শিশু সুরক্ষার বিষয়টি না থাকার জন্য শিশু পাচার, শিশুশ্রম, যুদ্ধে ও গৃহে শিশুদের ব্যবহার, শারীরিক, মানসিক, নির্যাতন ও যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন নির্যাতনমূলক আচরণের শিকার হচ্ছে। ২০১৫-পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রায় শিশুদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বিষয়টি যদি অন্তর্ভুক্ত না থাকে, তাহলে কেবল বাংলাদেশের শিশুরাই নয়, বিশ্বের সব শিশু পিছিয়ে থাকবে এবং শিশুদের প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাবে। তাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শিশুদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে। এই লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি নেতারা, নাগরিক সমাজ, করপোরেট ও ব্যবসায়ী নেতারা—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
শাহীন আনাম: শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। আমরা তাদের এখান থেকে বের করে আনতে চাই। আমাদের ১৬টি সহযোগী সংগঠন রয়েছে। এ সংগঠনগুলোর তিন বছরের একটি লক্ষ্যমাত্রা আছে। এ সময়ে ৪০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বের করে আনতে চাই। প্রতিবছর খবরের কাগজে শিশুদের বিষয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক ঘটনা বের হয়। এটা নিয়ে আমরা একটি প্রকাশনা করি। এমডিজি লক্ষ্যমাত্রায় মানবাধিকার বিষয়টি বাদ পড়েছিল। এটা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এখন প্রতিটি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে মানবাধিকার বিষয়টি এসেছে। চার লাখ পথশিশু আছে ঢাকা শহরে, আমরা তাদের জন্য কী করছি?
শিশুরা ভীষণভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়। এসব আমাদের কষ্ট দেয়। আমরা খুব বেশি কিছু করতে পারছি না। ১৪ বছরের নিচে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বন্ধ করার জন্য সরকার আইন করেছে। ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা করেছে। গৃহের কাজ করতে গিয়ে শিশুরা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারা যাচ্ছে। তার পরও ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে এটি নেই। চরম নির্যাতন ও মৃত্যু না হলে এরা সংবাদে আসে না। এদের যদি ন্যূনতম সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে বাংলাদেশসহ বিশ্ব পিছিয়ে পড়বে। আমরা বলতে চাই, শিশু সুরক্ষা ও শিশুর উন্নয়ন নিয়ে একটি লক্ষ্যমাত্রা এমডিজিতে থাকতে হবে। এর অধীনে বাল্যবিবাহ কমানো, শিশুদের যৌন হয়রানি বন্ধসহ কিছু লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে। বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের সব কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছে। তাই আমরা আশা করব, সেপ্টেম্বর ২০১৫-পরবর্তী যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে, সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শিশু সুরক্ষা ও উন্নয়নের বিষয়টি যেন অন্তর্ভুক্ত হয়।
তৌফিকুল ইসলাম খান: সিপিডি ২০১৫-পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বের ৪৮টি সংগঠন দক্ষিণে অবস্থান করে। সিপিডি এদের পরিচালনা করছে। এখন লক্ষ্যমাত্রা ১২টি থেকে বেড়ে ১৭টি হয়েছে। ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই ওপেন ওয়ার্কিং গ্রুপের আলোচনা চলছে। আমরা নিয়মিত এসবের খবর রাখছি। এটা ঠিক যে সরাসরি শিশুদের জন্য কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে শিশুদের বিষয় আছে। ৫ নম্বর লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ নির্মূল করার কথা বলা হয়েছে। ১৬ নম্বর লক্ষ্যমাত্রায় শান্তি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের কথা বলা হয়েছে। এখানে ২০৩০ সালের মধ্যে শিশু নির্যাতন কমানোর কথা আছে। ৮ নম্বর লক্ষ্যমাত্রায় প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের কথা বলা আছে। এখানে ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূলের বিষয়টি এসেছে। ১০ নম্বর লক্ষ্যমাত্রায় ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়েছে। এখানে ক্ষমতায়ন ও আর্থসামাজিক অবস্থায় শিশুর অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এভাবে শিশুদের বিষয়টি এসেছে। শিশুদের সুরক্ষায় অর্থের চেয়ে বেশি প্রয়োজন সদিচ্ছা, ঠিকমতো আইনের প্রয়োগ ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি দারিদ্র্য নেই, কিন্তু শিশুরা খর্বাকৃতির হচ্ছে এবং নারী নির্যাতন হচ্ছে। এসব হচ্ছে সচেতনতার অভাবে। সব ক্ষেত্রে যে অর্থের প্রয়োজন তা কিন্তু নয়। মানসিকতার পরিবর্তন, আইনের প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয় ঠিক করতে পারলেই কিছু অগ্রগতি হবে। বাংলাদেশ ২০১৫-পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে একটা নেতৃত্বমূলক দায়িত্বে আছে। তারা যেন শেষ পর্যন্ত শিশুদের নিয়ে একটি পূণাঙ্গ লক্ষ্যমাত্রা অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়।
সম্পা ইসলাম: আমাদের দেশের শিশুরা এখনো জানে না এমডিজি কী। আমি একটি শিশু ফোরামের সঙ্গে থাকার জন্য কিছুটা জানতে পেরেছি। আজকের আলোচনায় অনেকে বলেছেন, শিক্ষা ও শিশুমৃত্যুতে বাংলাদেশ সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু দেশে এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে এখনো শিশুরা শিক্ষা পাচ্ছে না এবং বিভিন্ন অসুখে শিশুদের মৃত্যু হচ্ছে। আমাদের দেশে অনেক শিশু আছে, যাদের রাতে থাকার জায়গা নেই। এরা বিভিন্ন স্টেশনসহ যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে থাকে। তাদের কোনো পড়ালেখা নেই, ঠিকমতো খাওয়া নেই। এরা খুবই অসহায় জীবন যাপন করে। মাননীয় মন্ত্রীকে অনুরোধ করব, তিনি যেন শিশুদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। এমডিজির লক্ষ্যমাত্রায় আমাদের জন্য পৃথকভাবে বিশেষ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে আমরা লেখাপড়া শিখে সামাজিক উন্নয়নে অংশ নিতে পারি।
স্টিফেন কে. হালদার: ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে শিশুদের নিয়ে কাজ করি। আমাদের সরাসরি কর্মসূচিতে এক লাখ ৮৫ হাজার শিশু আছে। প্রায় এক মিলিয়ন শিশু আমাদের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এদের খুব কাছ থেকে দেখি। তাদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করে নিই। আমরা এসব সন্তানের মায়েদের জিজ্ঞেস করেছি, আপনার স্বপ্ন কী? শতভাগ মা বলেছেন, তাঁরা তাঁদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যত্ চান। আমরাও বলি, শিশুরা জাতির ভবিষ্যত্।এ ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যে শিশু এখন অপুষ্টিতে ভুগছে, দুই বছর তার অপেক্ষার সময় নেই। এখনই তার পুষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য আজকের শিশুদের সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে হবে। শিশুরা আমাদের সম্পদ। এদের ঠিকমতো বেড়ে ওঠার সুযোগ না দিলে এরা একসময় জাতির দায় হবে। বিশ্বে শতকরা ২৬ ভাগ মানুষের বয়স ১৫ বছরের নিচে। বাংলাদেশে ৪৫ শতাংশ শিশু। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য আমরা ভালো কিছু করব না, তা তো হয় না। শিশুর স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। সে লক্ষ্যে কাজ করছি। প্রতিটি দোকান, ওয়ার্কশপ, বাসায়—এমন অনেক ক্ষেত্রে শিশু কাজ করছে। তার কাজের পরিবেশও অত্যন্ত অমানবিক। এসব দেখে কি আমরা চুপ করে থাকব? দেশের ৪৫ শতাংশ মানুষের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে কোনো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। আমাদের কি কোনো দায়বদ্ধতা নেই? আমরা সরকারকে অনুরোধ করব, এমডিজিতে শিশুদের জন্য যেন জোরালো ভূমিকা রাখে, যাতে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা শিশুদের জন্য ঠিক হয়।
শাবনাজ জেহরীন: শিশুর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টি নিয়ে আমরা কাজ করি। এসব ক্ষেত্রে শিশুর উন্নয়নও হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটা টেকসই হবে কি না। এসব ক্ষেত্রে সরকারকে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে কাজ করতে হবে। দেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ শিশু। তাই শিশুদের কী কী প্রয়োজন, সেগুলো জেনে তাদের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে। শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে পারলে শিশুর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সমস্যা কমে যাবে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়টির ওপর জোর দিতে হবে।
সবাইকে বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম বন্ধের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। সরকার ও এনজিও শিশুদের জন্য কাজ করছে। কিন্তু এ কাজের মধ্যে একটা সমন্বয় না থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। শিশু পাচারের ক্ষেত্রে সমন্বয় ছিল বলে পাচার দিন দিন কমে এসেছে। ২০১৩ সালের শিশু আইনটিতে শিশু সুরক্ষার সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে। এ আইনের মাধ্যমে শিশুর সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সমাজকল্যাণ ও জুডিশিয়ারি—এই তিনটি সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তাহলে শিশুদের অধিকার রক্ষায় আমরা অনেক এগোতে পারব। এখানে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। বিভিন্ন সংস্থা শিশু ও নারীদের জন্য কাজ করার কথা বলে সরকারের কাছ থেকে প্রকল্প পাস করিয়ে নেয়। কিন্তু তারা কতটুকু কাজ করছে, সরকার সেটা তদন্ত করে দেখে না। গত ১৫ বছরে শিশুদের জন্য কত মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে তার হিসাব নেই। বিনিয়োগের তুলনায় কতুটুকু ফল পেয়েছি, তার কোনো মূল্যায়ন কখনো হয়নি। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে আগামী দিনে শিশুদের জন্য কাজ করতে হবে।
নিযাম শাহীন: আমরা শিশুরা অনেক সমস্যার মধ্যে বেড়ে উঠছি। প্রতিনিয়ত অফিস-আদালত, কলকারখানা, দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে আমাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। এসব বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিচার পাই না। এ ছাড়া আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়ে আরও নজর দিতে হবে। আমরা যদি দেশের ভবিষ্যত্ হই, তাহলে এ ভবিষ্যেক সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। ২০১৫ সালে এমডিজির একটি মেয়াদ শেষ হবে।
এখানে আমাদের জন্য কোনো লক্ষ্যমাত্রা ছিল না। ২০১৫-পরবর্তী এমডিজিতেও কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই। সরকারকে অনুরোধ করব