Published in The Daily Janakantha on Sunday, 10 May 2015.
দশ বছরে ১৫ লাখ দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির টার্গেট
বাজেটে এ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের চিন্তাভাবনা
এম শাহজাহান
আগামী দশ বছরে ১৫ লাখ দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আসন্ন বাজেটে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। এই পরিকল্পনার আওতায় প্রাথমিকভাবে আটটি অগ্রাধিকার খাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব খাতের রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। খাতগুলো হচ্ছে- পোশাক শিল্প, নির্মাণখাত, তথ্যপ্রযুক্তি, হালকা প্রকৌশল, চামড়া ও পাদুকা শিল্প, জাহাজ নির্মাণ, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং প্লাস্টিক শিল্প। এতে দেশের সম্ভাবনাময় ১০টি শিল্প খাতের উৎপাদন ও রফতানি আয় বাড়বে। পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি রফতানি করে প্রায় ৩ গুণ বেশি রেমিটেন্স আয় করা সম্ভব হবে। এজন্য মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে এবার সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
সূত্র মতে, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে কাজ করছে সরকার। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর ওই সময় সামনে রেখে ইতোমধ্যে ভিশন-২১ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও প্রাক্কলিত রাজস্ব আহরণে জোর দেয়া হয়েছে। আর এসব ক্ষেত্রে সাফল্য আনতে মানবসম্পদ উন্নয়নে সবচেয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্যানুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বিনিয়োগ ও বিনিয়োগের উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দিবে সরকার।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি এক প্রাক বাজেট আলোচনায় বলেন, আমাদের কর্মসংস্থান নীতির মূল লক্ষ্য হলো উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং দেশের অদক্ষ জনগোষ্ঠীকে আধা-দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা। তিনি বলেন, বিনিয়োগ ও জাতীয় আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনে তিনটি অন্তরায়ের মধ্যে একটি হলো দক্ষ জনশক্তির অভাব। এ কারণে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবে। তিনি বলেন, দক্ষতা উন্নয়নে বর্তমান সরকার উন্নয়ন সহযোগী, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা, শিল্প সংগঠন ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয়ে দশ বছর মেয়াদী একটি যুগান্তকারী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
জানা গেছে, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের জন্য আগামী তিন বছরে তিনটি মন্ত্রণালয়ের ৩২টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই ডিপার্টমেন্ট, পিকেএসএফ এবং নয়টি শিল্প সংগঠনের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার জনকে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকরির নিশ্চয়তা দেয়া হবে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ কর্মীকে। যদিও বর্তমান বাজেটে পোশাক শিল্প, নির্মাণ খাত, তথ্যপ্রযুক্তি, হালকা প্রকৌশল, চামড়া ও পাদুকা এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অগ্রাধিকার খাত নির্ধারণ করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে সম্ভাবনাময় খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে আগামী বাজেটে অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দেয়ার তাগিদ দিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। বেসরকারী এই সংস্থার মতে, ২০২১ সালের মধ্যে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বাংলাদেশকে মানবসম্পদের উন্নয়ন ও অর্থনীতির বহুমুখীকরণ করতে হবে। সংস্থাটির সম্মানিত রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান জনকণ্ঠকে বলেন, সম্ভাবনাময় খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানব সম্পদ উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। গত এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর যে অগ্রগতি হয়েছিল তাতে ভাটা পড়েছে। এই দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ২০১৫ পরবর্তী পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিতে হবে। কৃষি খাত থেকে শ্রমিক বের করে শিল্প খাতের দিকে নিয়ে যেতে হবে।
মানব সম্পদ উন্নয়নে বাজেটে কি থাকছে ॥ টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি হলো মানব সম্পদ। এ কারণে মানবসম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ সরকার আর্থ-সামাজিক খাতে শতকরা ২০ ভাগের অধিক হারে অর্থ মানব সম্পদের সঙ্গে সম্পৃক্ত খাতসমূহ যেমনÑ শিক্ষা ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, নারী ও শিশু, সমাজ কল্যাণ, যুব উন্নয়ন ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যয় করছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসব খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ৪১ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত ২০০৪-০৫ অর্থবছরে এসব খাতে মোট বরাদ্দ ছিল মাত্র ১২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। প্রতি বছর বাজেটে সামাজিক খাতে ধারাবাহিকভাবে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে সরকার। এ কারণে আসন্ন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসব খাতে আরও প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে। এই পরিকল্পনা মাথায় রেখেই বাজেট প্রণয়নের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।