Published in বণিক বার্তা on Monday, 04 January 2016
উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলতে পারে
– ড. রওনক জাহান
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো। যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল ও প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র রিসার্চ স্কলার ও অ্যাডজাংক্ট প্রফেসর অব ইন্টার ন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে— পাকিস্তান ফেইলর ইন ন্যাশনাল ইন্টেগ্রেশন, পলিটিক্যাল পার্টিজ ইন বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ অব ডেমোক্রেটাইজেশন, বাংলাদেশ পলিটিকস: প্রবলেমস অ্যান্ড ইস্যুজ প্রভৃতি
প্রশ্ন: উন্নয়ন অথবা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে রাজনীতির একটি বড় ভূমিকা থাকে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সবসময়ই থাকে। তার পরও জিডিপির অগ্রগতি ইতিবাচক। আর্থসামাজিক দিক দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। কোনো ভিন্নতার কারণেই কি এমনটা হচ্ছে নাকি অন্য কোনো ফরমেশন এর কারণ?
রওনক জাহান: ও রকম ভিন্নতা কিছু নেই। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন তো এক-দুই বছরের ব্যবধানে হঠাত্ করে হয় না। আমাদের দেশে অর্থনৈতিক বা সামাজিক উন্নয়ন যে হারে হচ্ছে, এর ভিত্তি অনেক আগ থেকেই হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা আমরা কয়েক বছর ধরে বেশি দেখছি। সামাজিক উন্নতির কথাই ধরি। সেটার ভিত্তি প্রায় সত্তর-আশির দশকে তৈরি। নব্বইয়ের দশক থেকে তা ক্রমাগত উন্নতির দিকেই যাচ্ছে। তখন থেকেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও বাড়ছে ধীরে ধীরে। আর সামাজিক উন্নয়নও ঘটছে। দুই বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতা হঠাত্ এ ধারা পাল্টে দেবে, বিষয়টি তা না। কিন্তু এ নিয়ে দুই ধরনের কথা মানুষ ভাবতে পারে। একটি হচ্ছে, রাজনৈতিক সহিংসতা না হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার আরো বাড়তে পারত। দ্বিতীয়টি হলো, প্রবৃদ্ধির হার হয়তো বাড়ছে; কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, বিশেষ করে বিদেশী বিনিয়োগ। দেশী বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে পিছিয়ে যাচ্ছেন। দু-তিন বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নতুন কোনো বিনিয়োগকারী এগিয়ে আসছেন না। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতার একটা স্বল্পমেয়াদি প্রভাব দেখছি। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতা বছরের পর বছর চলতে থাকলে এবং এর কোনো নিষ্পত্তি না হলে, তখন তা জিডিপির হারের ওপর অবশ্যই প্রভাব ফেলবে।
প্রশ্ন: এখনকার পরিস্থিতি কি উন্নয়ন-সহায়ক?
রওনক জাহান: কয়েক বছর আগেও অবরোধের কারণে মানুষ ঘর থেকে বেরোতে পারেনি। মফস্বল থেকে পণ্য আনা বা রফতানি কার্যক্রমে যে ঝুঁকি ছিল, আপাতত তা নেই। কিন্তু ব্যাংকসহ অন্য জায়গায় প্রশ্ন করলে জানা যাচ্ছে, ব্যবসায়ীদের মনে যে ধরনের আস্থার প্রয়োজন হয়, তা ফিরে পাননি। যেসব বিষয় নিয়ে বিরোধ যেমন— নির্বাচন বা শান্তিপূর্ণভাবে পালাবদল আসতে পারে, আবার সহিংসতার পথে যাবে না; এগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছে না কেউ। তাই বিনিয়োগেও তারা আস্থা পাচ্ছেন না। তাদের অনেকেই বিনিয়োগ করছেন না আবার কেউ কেউ টাকা বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন দেশে গত দুই বছরের মতো সহিংসতা না থাকলেও ভবিষ্যত্ রাজনীতি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা কাটেনি। সবার মনেই এটা একটি চিন্তার বিষয়। আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হতে যাচ্ছে? আমরা কি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক বিরোধ মীমাংসার পথে যাচ্ছি নাকি ক্রমে সহিংসতার দিকে যাচ্ছি? আমার মনে হয় এ নিয়ে সংশয় রয়েছে সবার মনে।
প্রশ্ন: নির্বাচনের মাধ্যমে সবকিছুর পরিবর্তন আসবে— নব্বই-পরবর্তী সময়ে এমন একটি সমঝোতা ছিল। কিন্তু এখন আমরা আবার আগের ধারায় ফিরে যাচ্ছি। এটা কি কোনো রাজনৈতিক সমস্যা?
রওনক জাহান: নির্বাচনের মারফত ক্ষমতার বদল হয়েছিল। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় এটা নিরপেক্ষ হয়। প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতা হারাতে হয়েছে। কিন্তু যে জিনিসটার কোনো পরিবর্তন হয়নি সেটা হচ্ছে, রাজনীতির প্রধান যে দুই প্রতিপক্ষ দল, তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল করবে, তেমন কোনো সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না। যখনই যারা ক্ষমতায় এসেছে, নিজেদের স্বার্থে তারা রাষ্ট্রকে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। নির্বাচনকে তারা নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করেছে। সামরিক শাসনে যেমন নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে, সেটা না করলেও তারা নিজেদের লোক বসানোর চেষ্টা করেছে। পরে ক্ষমতায় গিয়ে ঢালাওভাবে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে হয়তো মামলা দেয়া হয়েছে। কিংবা ২০০১ সালের পর থেকে আমরা যেমন দেখেছি— বিরোধী দলের সংসদ সদস্য কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের খুন করা হচ্ছে। এ ধরনের মনোভাব আমাদের দেশের দুটো প্রধান দলের মধ্যে রয়েছে। আমাদের নির্বাচনগুলো ভারতের মতো নয়। সেখানে ক্ষমতাসীন দলই কেয়ারটেকার মোডে গিয়ে নির্বাচন করে। কিন্তু তারা ইলেকশন মেশিনটাকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে সরকারের যন্ত্র দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে না। যে দল হেরে যায়, তারা ফলাফলও মেনে নেয়। কিন্তু আমাদের এখানে নির্বাচন তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে হলেও যারা হেরেছে, তারা ফলাফল প্রথমে মেনে নেয়নি; তারপর সংসদে গেলেও তারা সংসদ বর্জন করেছে। সুতরাং এখন আমাদের এখানে ক্ষমতার পালাবদল কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে হলেও দুটো প্রধান দলের কেউই তা চায়নি মনে মনে। যত দিন না আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনী ফল মেনে না নেয়, তত দিন পরিস্থিতির পরিবর্তন আসবে না। ফল মেনে জয়ী দল ক্ষমতাবলে পরবর্তী ইলেকশন নিজেদের মতো সাজানোর চেষ্টা করবে না। আর যারা হেরে গেল, তাদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা, জেল-জুলুম চলবে না। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলো এভাবে চলেনি। নির্বাচন আমরা করেছি। তবে গণতান্ত্রিক মনোভাব দলগুলোর মধ্যে নেই।
প্রশ্ন: ভবিষ্যত্ কেমন দেখছেন?
রওনক জাহান: ভবিষ্যত্টা মোটেই ভালো দেখছি না আমি। জনসাধারণের ভয়টা হচ্ছে, দুই দলের অসহিষ্ণুতা। ক্ষমতাসীন দল যারা ক্ষমতায় থাকে, তাদের মধ্যের উপদলীয় কোন্দলে অনেক লোক মারা যাচ্ছে। একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস আছে, যার মাধ্যমে ক্ষমতার হস্তান্তর বা সব কার্যক্রম সংঘটিত হয়; এখন এমন কোনো প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না আমাদের দেশে। কোন প্রক্রিয়া মারফত ক্ষমতা বদল হবে, তার কোনো নিয়ম-কানুন নেই। সংঘাত বেড়ে যাচ্ছে। যদি দেশে সংঘাত ও জটিলতা বাড়তে থাকে, তখন দৈনন্দিন জীবনই মানুষ যাপন করতে পারে না। এ তো হচ্ছে জনসাধারণের অবস্থা। আর যারা সরাসরি দল করে, তাদের বিপদ বাড়ছে। যারাই ক্ষমতায় থাকছে, তারা বিরোধীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে। এতে ক্ষমতা হারানোর ভয় তো হবেই। কারণ ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতা হারানোর পর কতটা নিপীড়নের শিকার হবে, তা ভেবেই এ ভয়। যত দিন না প্রতিদ্বন্দ্বীরা নিজেদের ভালোর জন্য সমঝোতায় না আসে, তত দিন এ ভয় থেকেই যাবে। তাদের ঠিক করতে হবে, ভবিষ্যতে কীভাবে তারা একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই মিলে পালাবদলের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারে বা ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে পারবে। আমাদের পাশের দেশ ভারতের মতো শ্রীলংকায়ও একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আছে। সেখানে রাজাপাকসে এবার নির্বাচনে হেরে গেলেন। তিনি ফলাফল মেনে নিয়ে আরেকটি দিনের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু আমাদের এখানে এমনটা নেই।
প্রশ্ন: কীভাবে পরিবর্তন আসবে? রাজনৈতিক দল থেকে উদ্যোগ না এলে পরিবর্তন টেকসইও তো হবে না।
রওনক জাহান: যারা রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন, তাদের নিজেদেরই বিষয়টি বুঝতে হবে যে, তারা এভাবে বেশি দিন চলতে পারবে না। আফ্রিকায়ও এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়েই চলেছে। সহিংসতা জন্ম দেয় আরো সহিংসতা এটা এমন নয় যে, সহিংসতার মাধ্যমেই সহিংসতা থামানো যাবে। একদল সহিংসতা করলে অন্য দলও প্রতিহিংসা নিতে চায়। অতএব সহিংসতা দিয়ে কোনো সমাধান হবে না। সহিংসতার পথ গণতন্ত্রের পথ নয়।
প্রশ্ন: গণতন্ত্র আগে নাকি উন্নয়ন— এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। একদল বলছে উন্নয়নই আগে হবে, পরে গণতন্ত্রচর্চা। আপনি কী মনে করেন?
রওনক জাহান: এমন ধারণার সঙ্গে আমি একমত নই। পঞ্চাশের দশকে যখন সামরিক শাসক আইয়ুবরা এসেছিল, দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক শাসকরা তখন বলেছিলেন, উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র একটি বাধা। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন করতে চাইলে সেটার জন্য একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জরুরি। এ প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন নিরবচ্ছিন্ন হয়। অবশ্যই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বেশ কঠিন। সবাই এতে অংশ নিতে চায়। এক্ষেত্রে সবকিছুই যে ন্যায়সম্মত হবে তা-ও না। গণতন্ত্র ব্যবস্থাপনাও বেশ মুশকিল। একনায়কতন্ত্র হলে একজনের কথায় হয়তো সব চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ ধরনের জিনিস বেশি দিন রাখা যায় না। একজন ভালো নেতার শাসনে দেশ চলল বটে। কিন্তু পরবর্তী জন যে ভালো শাসক হবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্য শেষ পর্যন্ত একটি সিস্টেম করলে সবার মধ্যে একটা নিশ্চয়তা আসে। যে সিস্টেম থাকলে আইন থাকে, সবাই জানে এভাবেই সব চলবে। কিন্তু কোনো সিস্টেম, আইন না থাকলে শুধু একজনের ওপর নির্ভরশীল থাকলে, সেখানে স্থায়ী কিছু সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: আমাদের ত্রুটিটা কোথায়?
রওনক জাহান: গণতন্ত্র ও উন্নয়ন নিয়ে অমর্ত্য সেনের খুব ভালো লেখা আছে। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন মোটেই বিপরীতধর্মী নয়, বরং একে অন্যের পরিপূরক। আমরা অনেকেই ভাবব, উন্নয়ন বলতে আসলে কী বোঝা যাচ্ছে? উন্নয়ন তো কেবল রাস্তাঘাট উন্নয়নের মতো বিষয় নয়। ব্যক্তিস্বাধীনতাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি উন্নয়নের একটি অংশ। উন্নয়নের তুলনা করতে গিয়ে অমর্ত্য সেন চীন ও ভারতের মধ্যে তুলনা টানলেন। চীনে যখন গণতন্ত্র ছিল না, তখন সরকার বড় দুর্ভিক্ষের খবরও চেপে যেতে পেরেছিল। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশের সরকার স্বাধীন গণমাধ্যমের কারণে কোনো বড় খবর চেপে যেতে পারে না। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র দুটোই একসঙ্গে চলতে পারে, তা পঞ্চাশের দশকেই প্রমাণ হয়ে গেছে। এখন এ নিয়ে বিতর্ক কেন উঠেছে, সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।
প্রশ্ন: একেক দেশের গণতন্ত্রের প্র্যাকটিস একেক রকম। আমাদের দেশে কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
রওনক জাহান: সরকার গঠন বিভিন্নভাবে হতে পারে। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া একই রকম। গণতন্ত্রের কয়েকটি মৌলিক ভিত্তি আছে। তা সবখানেই একই রকম। এক. সেখানে সামরিক শাসন নেই। জনপ্রতিনিধিরাই দেশ শাসন করছেন। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মারফতে এসব জনপ্রতিনিধি বাছাই করা হয়। সেটা ওয়েস্ট মিনস্টারই হোক আর আমেরিকাই হোক; স্বাধীন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে হবে। সবখানেই চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের একটা ব্যাপার আছে। যেমন প্রশাসন ও সংসদের মধ্যে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্স থাকতে হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন হতে হবে। গণতন্ত্রের তৃতীয় মৌলিক ভিত হচ্ছে ব্যক্তিস্বাধীনতা। আইনের শাসন গণতন্ত্রের আরেকটি ভিত। গণতন্ত্র একেক দেশে একেক রকম বিষয়টি ঠিক সে রকম নয়। গণতন্ত্রের কিছু নীতি আছে। সব গণতান্ত্রিক দেশেই তা মেনে চলা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এর কোনো নিয়মই মেনে চলা হচ্ছে না।
প্রশ্ন: আমাদের দেশের রাজনীতিতে কি ত্রুটি রয়েছে?
রওনক জাহান: রাজনীতি তো এখন আর আদর্শের জন্য নেই। এটিই একটি প্রধান ত্রুটি। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে বলা হতো, আমরা বাঙালিদের স্বাধিকার আনার জন্য রাজনীতি করছি। সবসময়ই অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিবর্তনের জন্যই রাজনীতি করে মানুষ। রাজনৈতিক দল থাকে। তাদের কিছু আদর্শ ও নীতি থাকে। কিন্তু এখন আমাদের দলগুলো আসলে কী আদর্শের জন্য রাজনীতি করছে, তা আমার কাছে প্রতীয়মান নয়। আর তারা আদর্শের কথা বলে থাকলেও কী কর্মসূচির মারফত তা বাস্তবায়ন করবে, সে ধরনের কোনো বিতর্কও নেই। এখন সবাই রাজনীতি করছে ভোট নিয়ে নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ক্ষমতাটাই এখন মুখ্য। আদর্শ নিয়ে আলোচনা এখন বিশেষ দেখছি না।
প্রশ্ন: আপনি বলেছেন গণতন্ত্রের কিছু নিয়মনীতি থাকে। এর জন্য কিছু প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করে তুলতে হয়। আমাদের এখানে এ প্রতিষ্ঠানগুলো কেন শক্তিশালী করা হয়নি। যেমন— নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ দুর্বল থেকে গেছে কেন?
রওনক জাহান: কারণ যারাই ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের কেউই এগুলো শক্তিশালী করার চেষ্টা করেননি।
প্রশ্ন: এর ফলাফল কী হতে পারে?
রওনক জাহান: ফলাফল ভালো নয়। এর জন্যই কোনো ব্যবস্থা নেই, কোনো নিয়ম নেই। তুমি যদি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান না কর, আইন মেনে না চল, তাহলে তো অরাজকতার সৃষ্টি হয়। এতে কোনো ব্যবস্থা সৃষ্টি হয় না।
প্রশ্ন: এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে। এ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
রওনক জাহান: আমাদের দেশে জনসাধারণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। নির্বাচন করার জন্যও বহু লোক অনেক পয়সা খরচ করছে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশগুলোয় বিশেষ করে ভালো গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে এত আগ্রহ আমি দেখি না। আর এ রকম প্রার্থীও আমি দেখছি না। এ নির্বাচনটা হয়তো দুটো কারণে পর্যবেক্ষকরা আগ্রহ নিয়ে দেখছেন। একটি হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন কতটা নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে, তা নিয়ে একটি প্রশ্ন আছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাটা নিয়ে সবাই বেশ কৌতূহলী। দ্বিতীয়ত. বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এ নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ কতটা থাকবে তা দেখার বিষয়। কিন্তু শেষ কথা স্থানীয় সরকারের হাতে বিশেষ কোনো ক্ষমতাই নেই।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
এম এম মুসা