Published in Prothom Alo on Wednesday, 24 September 2014.
ডিজেল, কেরোসিন ও গ্যাসের দাম বাড়ছে
অরুণ কর্মকার
সরকার গ্যাস, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়াতে যাচ্ছে। শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস ছাড়া সব ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে। ডিজেল ও কেরোসিনের ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে লিটারপ্রতি দাম বাড়তে পারে পাঁচ টাকার মতো।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, দাম বাড়ানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এ সপ্তাহেই এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) পাঠানো হবে। সেখানে শুনানির মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হতে পারে জানুয়ারিতে।
তবে পেট্রল ও অকটেনে দীর্ঘদিন ধরে সরকার যথেষ্ট মুনাফা করলেও সেগুলোর দাম কমানোর কোনো চিন্তা করা হচ্ছে না বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি এবং ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল। গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছিল ২০০৯ সালের ১ আগস্ট। তবে এরপর সিএনজির দাম বাড়ানো হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জ্বালানির দাম বাড়ানোর ফলে সব ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনাও সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। কিন্তু দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, সরকার এটা করছে মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানার প্রয়োজনে। তা ছাড়া এই মুহূর্তে সরকারের আয় কম। তাই ব্যয় সামঞ্জস্য করার জন্য সরকারের এটা করা দরকার হয়ে পড়েছে। সে জন্যই বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় ভর্তুকির প্রয়োজন কমে আসা সত্ত্বেও সরকার জ্বালানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেবপ্রিয় বলেন, তবে দরকার যা-ই হোক, দাম বাড়ানোর ফলে উৎপাদন ব্যয় ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বাড়বে। ফলে স্থিতিশীলতা চাপের মধ্যে পড়বে। বর্তমানে বিনিয়োগে যে মন্দাবস্থা ও কর্মসংস্থানে ভাটা চলছে, সেখানেও সমস্যা বাড়বে। ব্যক্তিপর্যায়ে সঞ্চয়ের ওপর চাপ পড়বে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জ্বালানির দাম বাড়ানো ছাড়াও এবারই প্রথম গ্যাস উত্তোলন কোম্পানিগুলোর ওপর তাদের উত্তোলিত গ্যাসের দাম আরোপ করা হচ্ছে। যেমন, তিতাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস তুলে সরবরাহ করে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)। ওই গ্যাসের জন্য সরকারকে তাঁদের কোনো দাম দিতে হয় না। এখন তা দিতে হবে। এ জন্য একটি দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ থেকে পাওয়া অর্থ নতুন গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন ও উত্তোলন বাড়ানোর কাজে ব্যয় করা হবে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকেবলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি এর ব্যবহারেও অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হবে। সে ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হবে শিল্পকে। তবে এখানে সেখানে ছড়ানো-ছিটানো, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা শিল্প এর আওতায় পড়বে না। এ ছাড়া, আবাসিকে নতুন বিতরণ লাইন করে আর কোনো নতুন সংযোগ দেওয়া হবে না। তবে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য এলপি গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়া ও সহজলভ্য করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ানোর বিরূপ প্রভাব যাতে কৃষকের ওপর না পড়ে, সে জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ডিজেল ব্যবহারকারী কৃষকদের সরাসরি ভর্তুকি দেওয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে। সরকার হিসাব করে দেখেছে, দেশে এখন এলপি গ্যাসের বার্ষিক চাহিদা প্রায় চার লাখ টন। আগামী তিন বছরের মধ্যে এই পরিমাণ এলপি গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। জ্বালানি তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে এলপি গ্যাস বিতরণের কথা ভাবা হচ্ছে।