Dr Khondaker Golam Moazzem was interviewed on minimum RMG wages, published in Prothom Alo on Saturday, 28 September 2013.
এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার: মজুরি নিয়ে তৈরি পোশাকশিল্পে এক সপ্তাহ ধরে অস্থিরতা চলছে। নিম্নতম মজুরি কত হওয়া উচিত তা নিয়েও চলছে বিতর্ক। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
প্রথম আলো: নিম্নতম মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধিদের আট হাজার ১১৪ টাকা মজুরি দাবির পাল্টা প্রস্তাবে বিজিএমইএ মাত্র ৬০০ টাকা বৃদ্ধির সুপারিশ করে। দুই পক্ষের প্রস্তাবকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ দর-কষাকষির ভিত্তিতে হওয়া উচিত নয়। শ্রমিকের ন্যূনতম জীবনমান নিশ্চিত করবে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নির্ধারণ করা উচিত। এ বছর শ্রমিকপক্ষ প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজস্ব জরিপভিত্তিক তথ্য-উপাত্তকে ভিত্তি করে প্রস্তাব পেশ করেছে। অন্যদিকে মালিকপক্ষের প্রস্তাবনায় বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত নেই। থাকলে ভালো হতো। সমস্যা হলো, মালিক বা শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাবনা
বিশেষ করে মালিকপক্ষের প্রস্তাবনা বিচার-বিশ্লেষণ করার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত জাতীয় পর্যায়ে পাওয়া যায় না।
প্রথম আলো: গত এক বছরে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ১২.৬ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হয়েছে ৮.৬ শতাংশ। প্রচ্ছন্নভাবে শিল্পের সক্ষমতা কমে গেছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: গত এক বছরে পোশাকশিল্পে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কাঁচামাল বিশেষত তুলার মূল্যবৃদ্ধি একটা কারণ হতে পারে। তবে একই সময়ে ব্যাংকঋণের সুদের হার এবং মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ার ফলে রপ্তানি মূল্য কিছুটা কমে গেলেও আমদানীকৃত কাঁচামালে কিছুটা সাশ্রয় হতে পারে। তবে একই সময়ে ভারতীয় রুপির অবমূল্যায়ন নতুন উদ্রেক তৈরি করতে পারে। সবকিছু বিচার করলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সক্ষমতার জায়গাগুলোতে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি বলেই মনে হয়।
সিপিডি পরিচালিত এক জরিপে অংশগ্রহণকারী পোশাকমালিকদের তথ্যমতে, ২০১২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে মূল্যস্ফীতিজনিত উচ্চ ব্যয় বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেছেন এমন উদ্যোক্তার সংখ্যা ৬৩ থেকে কমে ৯ শতাংশ হয়েছে। একইভাবে সুদের হার বৃদ্ধিজনিত উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে এমন উদ্যোক্তার সংখ্যা ৯১ থেকে কমে ৭৩ শতাংশ হয়েছে। আবার এই সময়ে শ্রমিক নিয়োগে তেমন পরিবর্তন আসেনি। অর্থাৎ শিল্পের সক্ষমতায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেই মনে হয়। অন্যদিকে বিগত তিন বছরে পোশাক খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, পোশাকবহির্ভূত প্রবৃদ্ধি অন্যান্য খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে একইভাবে ওঠানামা করছে।
প্রথম আলো: বিজিএমইএ বলেছে, পোশাকশিল্পের ৭০ শতাংশ কারখানাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। তাই ২০ শতাংশ বা ৬০০ টাকার বেশি মজুরি বৃদ্ধি হলে এসব কারখানা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: বিজিএমইএর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বর্তমান এবং সাবেক নেতারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁদের প্রাথমিক প্রস্তাব থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এবং প্রাথমিক প্রস্তাবকে আলোচনার সূত্রপাত হিসেবে মন্তব্য করেছেন। সেটি মূল্যায়নে নিলে তাঁদের আগের প্রস্তাবনার পক্ষের যুক্তিগুলো দুর্বল হয়ে যায়। অন্যভাবে বললে, এ খাতের সব কারখানার সক্ষমতা আরও বেশি রয়েছে বলে অনুমান করা যায়। সমস্যা হলো, সক্ষমতা বিচার করার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। আশা করব, মজুরি বোর্ড কারখানা পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্যের মাধ্যমে সক্ষমতা বিশ্লেষণ করে দেখবে।
প্রথম আলো: যৌক্তিক পর্যায়ে মজুরি নির্ধারণের জন্য কী কী বিষয় বিবেচনায় নেওয়া উচিত?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: বাংলাদেশ শ্রম আইনে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের বিচার্য বিষয়গুলো বলা রয়েছে। যেমন: শ্রমিকের জীবনব্যয়, জীবনমান, মূল্যস্ফীতি, কারখানার উৎপাদনশীলতা, পণ্য মূল্য, পণ্য উৎপাদন ব্যয়, অন্যান্য খাতের সঙ্গে তুলনামূলক অবস্থা ইত্যাদি। কতিপয় বিষয় ছাড়া এসব বিষয়ের জাতীয় পর্যায়ের তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে। মজুরি বোর্ড উভয় পক্ষের প্রস্তাবনা থেকে এসব বিষয়ের কিছু তথ্য-উপাত্ত জানতে পারছে। আবার মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন থেকে কিছুটা ধারণা পাবে অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে। তবে গার্মেন্টস খাতের শ্রমিক পর্যায়ে জীবনমান, জীবনযাত্রার ব্যয় ইত্যাদি তথ্য জাতীয় পর্যায়ের তথ্য-উপাত্ত থেকে ভিন্নতর। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেই মজুরি বোর্ডকে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে পেতে হবে।
প্রথম আলো: মজুরি বোর্ডের সদস্যরা মজুরি নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। এর প্রয়োজন আছে, নাকি শুধুই কালক্ষেপণ?
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম: যতটুকু জানা যায়, মজুরি বোর্ডের সদস্যরা তিনটি দেশ থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া ভ্রমণ করবেন ন্যূনতম মজুরি সম্পর্কে এসব দেশের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে। এসব ভ্রমণের যৌক্তিকতা থাকলেও আশু মজুরি কাঠামো ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে তা যেন সময়ক্ষেপণ না হয়। আর বিদেশে যাওয়ার আগেই যদি বোর্ডের সদস্যরা মালিকপক্ষের পুনর্বিবেচিত প্রস্তাব নিয়ে বসতেন, তাহলে ভালো হতো।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: শুভংকর কর্মকার]