Published in Banik Barta on Saturday, 29 March 2014.
অর্থবছরের ৮ মাস
এশিয়ার ১২ গন্তব্যে রফতানি আয় কমেছে ২৬%
বদরুল আলম
চলতি বছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এশিয়ার এক ডজন বাজার থেকে রফতানি আয় কমেছে ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে ভারত থেকে আয় কমেছে ৩৬ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে দেশগুলোর মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও টাকা শক্তিশালী হওয়া আয় কমার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আঞ্চলিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়ার মোট ৩০টি গন্তব্যে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ভারতসহ রফতানি কমে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ বাজারের মধ্যে রয়েছে হংকং, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তান। চলতি অর্থবছরের আট মাসে এ বাজারগুলোয় রফতানি কমেছে যথাক্রমে ২ দশমিক ২৮, ৬ দশমিক ৯ ও ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ।
রফতানি কমে যাওয়া এশিয়ার অন্য বাজারগুলো হলো— আজারবাইজান, ভুটান, কিরগিস্তান, লাওস পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক, মিয়ানমার, মঙ্গোলিয়া, নেপাল ও তাজিকিস্তান। ২০১২-১৩ অর্থবছরের আট মাসে ১২টি দেশে মোট রফতানির পরিমাণ ছিল ৭২ কোটি ১২ লাখ ৯২ হাজার ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ৫৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫৩ হাজার ডলার। এ হিসাবে ১২টি দেশে রফতানি আয় কমেছে ২৬ শতাংশ।
রফতানি খাতের উদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকদের মতে, গত বছরের শেষ প্রান্তিকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রচলিত পণ্যগুলোর রফতানিতে খুব একটা প্রভাব না পড়লেও অপ্রচলিত, বিশেষ করে পচনশীল পণ্য রফতানি ব্যাহত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ থেকে এ দেশগুলোর আমদানি খরচ বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে রফতানি আয়ে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভারতসহ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সব বাজারের মুদ্রা গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে অবমূল্যায়ন হয়েছে। আবার টাকাও শক্তিশালী হয়েছে ডলারের বিপরীতে। এটাই বাজারগুলোর রফতানি আয় কমে যাওয়ার মূল কারণ। সেই সঙ্গে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় অপ্রচলিত, বিশেষ করে পচনশীল পণ্যগুলোর রফতানি বেশি ব্যাহত হয়েছে।
জানা গেছে, গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে এশিয়ার বাজারগুলোয় বিভিন্ন খাতের রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে— তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক, কৃষিপণ্য, ফল, রাবার, কেমিক্যাল, কাঁচা চামড়া, মাছ, হোমটেক্সটাইল। ভারতে তৈরি পোশাকের রফতানি না কমলেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
এশিয়ার উল্লেখযোগ্য ১০টি বাজারের মধ্যে শীর্ষ রফতানি গন্তব্য জাপান। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে ভারত। এশিয়ায় মোট রফতানির ২০ শতাংশই হয় ভারতে। শীর্ষ দশের অন্য দেশগুলো হলো— চীন, হংকং, রিপাবলিক অব কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া। এ বাজারগুলোর চারটিতেই রফতানি কমেছে।
রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ভারত থেকে রফতানি আয় কমে যাওয়ার মূল কারণ ডলারের বিপরীতে রুপির অবমূল্যায়ন। তবে ভারতে তৈরি পোশাকের চাহিদা অনেক বেশি। তাই পণ্যটি রফতানিতে রুপির অবমূল্যায়নের প্রভাব পড়ার কথা নয়। গত বছরের শেষ দিকে রাজনৈতিক সহিংসতায় ভারতে তৈরি পোশাক রফতানি ব্যাহত না হলেও অপ্রচলিত পণ্যের রফতানি ব্যাহত হয়েছে।
ইপিবির আঞ্চলিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আট মাসে ভারতে রফতানি হয়েছে ৩৮ কোটি ৩৬ লাখ ১৭ হাজার ৯৫২ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে দেশটিতে রফতানি হয়েছে ২৪ কোটি ৫১ লাখ ৭৬ হাজার ৮৬৯ ডলার। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে দেশটি থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয় কমেছে ৩৬ শতাংশ।
২০১৩-১৪ অর্থবছরের আট মাসে এশিয়া অঞ্চলের ৩০টি দেশে মোট রফতানি হয়েছে ২১৫ কোটি ২৩ লাখ ৫১ হাজার ২৫২ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ দেশগুলোয় রফতানি হয়েছিল ১৯৩ কোটি ৩৫ লাখ ৯১ হাজার ২১৩ ডলার। দেখা যাচ্ছে, আট মাসে ৩০টি দেশে রফতানি বাড়লেও প্রবৃদ্ধির হার খুব বেশি নয়। গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোয় রফতানি কমে যাওয়াই এর কারণ।
এশিয়া অঞ্চলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট রফতানির পরিমাণ ছিল ৩০২ কোটি ৭৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩৯ ডলার। এর আগের অর্থবছরে রফতানি ছিল ২৫৭ কোটি ৯৬ লাখ ২৩ হাজার ৯৬৮ ডলার।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু বলেন, ‘রফতানি পণ্যের সব গন্তব্যই আমাদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে টেকসই বহুমুখী বাজার তৈরিতে এশিয়াসহ সব অপ্রচলিত বাজারে রফতানি বৃদ্ধিতে উদ্যোক্তাদের আরো মনোযোগী হতে হবে। সরকারও সে অনুযায়ী প্রচারণা ও প্রসারের কাজ অব্যাহত রাখবে।’