Published in Banik Barta, on Monday 24 February 2014.
ইইউতে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেয়েছে পাকিস্তান
নিজস্ব প্রতিবেদক
গত বছরের ডিসেম্বরে জিএসপি প্লাস স্কিমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্য সুবিধা পেয়েছে পাকিস্তান। সুবিধার আওতায় ইইউতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে পাকিস্তানের বস্ত্র ও পোশাকসহ একাধিক পণ্য। এ সুবিধার সদ্ব্যবহার করতে দেশটিতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা। তাদের আগ্রহের কেন্দ্রে আছে বস্ত্র ও পোশাক।
সম্প্রতি রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়ন ও অবকাঠামো পরিবর্তনবিষয়ক এক উপস্থাপনায় এ তথ্যগুলো তুলে ধরেন পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব আজম মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, বস্ত্র ও পোশাক খাতের রূপান্তরে পাকিস্তানের সক্ষমতা রয়েছে। এরই মধ্যে টেক্সটাইল খাতে চীনের উচ্চমূল্য সংযোজন হওয়ার মতো বিনিয়োগও এসেছে। আরো অনেক বিনিয়োগের প্রত্যাশাও রয়েছে।
সক্ষমতা আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ ও আঞ্চলিক সহযোগিতাও অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া আমদানি-রফতানিসংশ্লিষ্ট ব্যাংক স্থাপনসহ রফতানির বিপরীতে দক্ষ জনবল ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ তহবিলও রয়েছে।
পাকিস্তানের করাচিতে এরই মধ্যে স্থাপন হয়েছে টেক্সটাইল সিটি। করাচিসহ গার্মেন্ট সিটি রয়েছে লাহোরে। এছাড়া রয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। বস্ত্র ও পোশাক খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে রয়েছে টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, তিনটি ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট, ১২টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও পরীক্ষাগার।
জানা গেছে, জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তিকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানে ২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে চীন। এর মধ্যে অনেক বিনিয়োগ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। আগামী দিনগুলোয় আরো অনেক বিনিয়োগ আশা করছে পাকিস্তান।
এদিকে পাকিস্তানের বস্ত্র ও পোশাক খাতে চীন বিনিয়োগ করেছে, এমন তথ্যে হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, শ্রম মজুরি বৃদ্ধির ফলেই চীনের এ বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ বাংলাদেশে হবে, এমন প্রত্যাশা ছিল। আর প্রাথমিক বস্ত্র খাতেই (পিটিএস) এ বিনিয়োগ নিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা আলোচনাও করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগগুলো বাংলাদেশে আসেনি। এখন অনুধাবন করা যাচ্ছে, প্রাথমিক বস্ত্র খাতে চীনের বিনিয়োগকারীরা পাকিস্তানকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহসভাপতি আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘জিএসপি প্লাস স্কিম নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ আছে। তবে তা নির্ভর করছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিরতার ওপর। পাকিস্তানে বিদ্যুত্-গ্যাসসহ অবকাঠামো সমস্যা অনেক বেশি। কাজেই রাতারাতি বস্ত্র ও পোশাক খাতে তারা আমাদের শক্ত প্রতিযোগী হয়ে উঠবে, এমনটা ভাবার কারণ নেই।’
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জিএসপি প্লাস সুবিধা ব্যবহার করে পাকিস্তানের প্রাথমিক বস্ত্র খাত শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ আকর্ষণের বিচারে বাংলাদেশের প্রাথমিক বস্ত্র খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি সেখানে কিছুটা পিছিয়ে পড়তে পারে।
পাকিস্তানের বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিবৃতি অনুযায়ী, জিএসপি প্লাস স্কিম ব্যবহার করে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মধ্যে পাকিস্তান রফতানিতে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরিকল্পনা নিয়েছে; বিদ্যমান রফতানি আয়ের সঙ্গে যা আরো ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার যোগ করবে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, পোশাকের সুতা ও কাপড়ের চাহিদা মেটাতে অনেকটাই আমদানিনির্ভর বাংলাদেশ; যদিও এ খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ছে। চীনা বিনিয়োগকারীদের পাকিস্তানে বিনিয়োগের তথ্যে বস্ত্র ও পোশাক দুই খাতেই উদ্বেগের কারণ রয়েছে।