Published in প্রথম আলো on Monday, 4 April 2016
৮৩ পোশাক কারখানা ২১৮ ব্র্যান্ডের কাজ করতে পারবে না
শুভংকর কর্মকার
সংস্কারকাজের সন্তোষজনক অগ্রগতি না থাকায় দেশের ৮৩ তৈরি পোশাক কারখানার ওপর খড়্গ নেমে এসেছে। ব্যর্থ এসব কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বিদেশি ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। এ কারণেই দুই জোটের চুক্তিবদ্ধ ২১৮টি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের হয়ে আর পোশাক তৈরি করতে পারবে না কারখানাগুলো।
সংস্কারকাজে সন্তোষজনক অগ্রগতি না থাকায় সর্বশেষ গত ১৭ মার্চ ১০ তৈরি পোশাক কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ। এর আগে জোটটি ১৩ কারখানার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। অন্যদিকে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি সংস্কারকাজে অগ্রগতি না থাকায় ৬০ কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
গত বৃহস্পতিবার অ্যাকর্ড ১০ কারখানার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। কারখানাগুলো হচ্ছে গাজীপুরের সাং কেয়াং সোয়েটার, আশুলিয়ার সিলভার স্টাইল অ্যান্ড ডিজাইন,
গাজীপুরের মার্ক মোড লিমিটেড, আশুলিয়ার গ্রিন লাইফ নিটেক্স, নায়ারণগঞ্জের ফোপটেক্স লিমিটেড, আশুলিয়ার দিনিয়ার ফ্যাশন, ঢাকার কেমলেট ফ্যাশনস, টঙ্গীর বনডেড ফ্যাশন, গাজীপুরের অ্যাসারশন ডিজাইন ও আশুলিয়ার গ্লোরি ফ্যাশন।
অ্যাকর্ডের দাবি, সাং কেয়াং সোয়েটার বেশ কয়েকবার নির্দেশ দেওয়ার পরও কারখানা ভবনের ত্রুটি সংশোধনের কর্মপরিকল্পনা (ক্যাপ) ও ভবনের বিস্তারিত প্রকৌশল মূল্যায়ন (ডিইএ) জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া কেমলেট ফ্যাশনস ও অ্যাসারশন ডিজাইন কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও ক্যাপ দেয়নি। এমনকি অ্যাকর্ডের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা করার অভিযোগও কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে আছে। বাকি সাত কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তারা এখন পর্যন্ত সংস্কারকাজে সংশোধন পরিকল্পনায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশে পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তখন কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। জোট দুটি ২০১৮ সাল পর্যন্ত কাজ করবে। অ্যাকর্ডের সঙ্গে এখন পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের সংখ্যা ১৯০টি। আর অ্যালায়েন্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছে উত্তর আমেরিকা ও কানাডার ২৮টি ব্র্যান্ড।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলব, কেন তাঁদের সংস্কারকাজের অগ্রগতি কম। তবে যতটুকু জানি, এসব কারখানা শেয়ারড বিল্ডিংয়ে (একই ভবন কারখানা পাশাপাশি অন্য কাজে ব্যবহৃত হয়) আছে। কারখানার মালিকেরা অন্যত্র কারখানা সরিয়ে নিতে চান। তবে জোটগুলো যে সময় দিচ্ছে, তাতে তাঁদের হচ্ছে না।’
বিজিএমইএর এই সহসভাপতি বলেন, ‘অনেক কারখানাই আবার অ্যাকর্ড বা অ্যালায়েন্সের চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাজ করে না। তাই তারা দুই জোটের পরিদর্শন কার্যক্রম থেকে বেরুতে চায়। সে জন্য অগ্রগতি কম।’ তিনি বলেন, ‘কারখানাগুলো যদি আবার সংস্কারকাজ সম্পন্ন করে দুই জোটের ক্রেতা ও ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি করতে চায় তবে আমরা সহযোগিতা করব।’
এদিকে অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ রবিন প্রথম আলোকে বলেন, শেয়ারড ভবনে থাকা অনেক পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষই বলছে তারা অন্যত্র চলে যাবে। তবে সে জন্য কোনো কাজই তারা শুরু করছে না। তিনি বলেন, অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে তাতে ৮৬ কারখানার সঙ্গে একই কাতারে আরও অনেক কারখানা যুক্ত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) জানায়, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স ২ হাজার ২৪৬ কারখানার পরিদর্শন শেষ করেছে। জোট দুটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরি করে এসব কারখানা। এ ছাড়া জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিএপি) অধীনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহায়তায় ডিআইএফই ১ হাজার ৫৪৯ পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শন হওয়া কারখানার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ৩৯টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে দেশে নন-কমপ্লায়েন্স বা উন্নত কর্মপরিবেশ ছাড়া কারখানা পরিচালনা করার কোনো সুযোগ নেই। কারখানাগুলোর সংস্কারকাজ না করা ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়াটা দুশ্চিন্তার। ভবিষ্যতে এটি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। ঠিক কী কারণে তারা পারছে না, সেসব খতিয়ে দেখা দরকার। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি পর্যালোচনা কমিটি করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।